Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

দেশের উপকূলভাগের ৭১০ কিলোমিটার এলাকার দেড় কোটি মানুষের কাছে আজ বিভীষিকার ‘ভয়াল ১২ নভেম্বর’। ১৯৭০-এর এ রাতে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত নিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে এসে হ্যারিকনরূপী ঘূর্ণিঝড় বৃহত্তর বরিশাল, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপক‚লের ১০ জেলার ওপর দিয়ে আড়াইশ’ কিলোমিটার বেগে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাস নিয়ে আছড়ে পড়েছিল। ইতিহাসের বিভীষিকাময় সে রাতে ঘূর্ণিঝড় হ্যারিকেন-এর তান্ডবে উপক‚লের পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের জীবন প্রদীপ নিভে যায়। নিখোঁজের সংখ্যাও ছিল আরো প্রায় আড়াই লাখ। যাদের বেশীরভাগেরই পরবর্তীতে আর খোঁজ মেলেনি। হ্যারিকেনের তান্ডবে অন্তত লক্ষাধিক মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সে ভয়াল রাতে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে সারাবিশ্বে স্মরণকালে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের প্রানহানী ঘটে ’৭০-এর ১২ নভেম্বর রাতের ঘূর্ণিঝড় হেরিকেনের তান্ডবে। ১২ নভেম্বরের সে ভয়াল রাতে উপক‚লভাগে সম্পদের হানি ঘটে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকার। গোটা দক্ষিণ জনপদে প্রধান খাদ্য ফসল-আমন’এর কোনো অস্তিত্ব ছিলনা। পাকা ধানে মই দিয়ে গেছে হ্যারিকনরূপি ঘূর্ণিঝড়।
সে রাতের বিভিষিকা এখনো দক্ষিনের জনপদের মানুষকে তাড়া করে। ভয়াল সে রাতে প্রকৃতির সাথে লড়াই করে যারা প্রাণে বেঁচেছিলেন, তাদেরও প্রায় সকলকেই নিকটজন হারানোর ব্যথা নিয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে।
প্রকৃতির তান্ডব এদেশের উপক‚লবাসীকে বার বারই বিপন্ন করে দিয়েছে।
’৭০-এর ১২ নভেম্বর রাতে উপকূলভাগের প্রায় ৫ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিলেও তৎকালীন সরকার দুই লাখ মানুষের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছিল।
সে রাতে উপক‚লে এমন কোন পরিবার ছিল না যাদের কেউ না কেউ নিকটজনকে হারায়নি। সে স্মৃতিকে স্মরন করে আজ ভোলা সহ উপক‚লের বিভিন্ন এলাকায় নানা কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে। স্বজনহারা অনেক পরিবারই মৃতদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলেরও আয়োজন করছেন।
’৭০-এর সে বিভিষিকাময় হেরিকেনের তান্ডব সে রাতে গোটা উপক‚লের শত শত মাইল জুড়ে শুধু বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ী, গাছপালা আর লাশের মিছিল সহ ধংসস্তুপের চিহ্ন রেখে গেছে। সকলেই দিনের পর দিন ছিল অনাহারে। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পৌঁছতে লেগে গেছে ৭ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত। হেরিকেন-এর তান্ডব থেকে বেঁচে থাকা মানুষের দুরবস্থা সর্বকালের ভয়াবহ পর্যায়ে পৌছলেও তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান পক্ষকাল পরে ঘূর্নি উপদ্রুত এলাকা আকাশ থেকে পর্যবেক্ষণ করেন। প্রায় একমাস পরে পাক সেনাবাহিনী ত্রান তৎপড়তায় অংশ নিলেও ততদিনে ঘূর্ণি উপদ্রুত এলাকার বেঁচে থাকা বেশীরভাগ মানুষই অনাহার ও অর্ধাহারে নতুন করে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিল।
তারপরেও ভয়াল ঐ রুদ্ররোষ থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো প্রকৃতির সাথে লড়াই করেই টিকে আছে আজো দেশের উপক‚লীয় জনপদে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিপদ সংকেত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ