Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আরশে আজিমের বিশালত্ব

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

আমরা যারা হজরত আদম আ.-এর বংশধর হিসেবে দীর্ঘকাল যাবত পৃথিবীতে বসবাস করে চলেছি এবং পৃথিবীর আলো-বাতাস, ফলমূল অবাধে ব্যবহার করে যাচ্ছি। ইনসান বা মানুষ রূপে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ বলে আখ্যায়িত হয়েছি। নভোমন্ডল ও ভূ মন্ডলকে জয় করার শুভ সংবাদ লাভে ধন্য হয়েছি। উন্নত পৃথিবী গড়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছি।
কখনো কি আমরা ভেবে দেখিছি যে, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আমাদের জন্য এতসব আয়োজন কি জন্য করেছেন? কি কারণে তিনি আমাদের ‘খলিফা’ বলে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন? কি কারণে তিনি স্বীয় অদৃশ্য সেনাবাহিনী ফিরিস্তাকুলকে নীরব ও নিশ্চুপ করে দিয়েছেন; এই বলে যে, ‘নিশ্চয়ই আমি যা জানি তোমরা তা জাননা’।
তবে কি এসব কিছু শুধুমাত্র কথার কথা? এ সবের সারবত্তা বা গূঢ় রহস্য বলতে কি কিছুই নেই? হ্যাঁ, আছে। নিশ্চয়ই আছে। হে দুনিয়া সাজানোর পার্লারের কর্মচারীরা, এই সশাগড়া পৃথিবীর কোনো কিছুই অমূলক নয়, নিরর্থক নয়। এর সব কিছুই কার্য কারণ সম্পর্কের তারে বাঁধা। বিচ্ছিন্নতা ও অসংলগ্নতার ছোঁয়া কোথাও নেই।
বস্তুত: আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত স্বীয় সত্তা ও গুণাবলিসহ এমন একটা সময় ছিল যখন তিনি একাকী ছিলেন। তিনি ব্যতীত আর কিছুই ছিল না। তখন তার মাঝে একটি আকর্ষণ ও প্রেরণার উদয় হলো যে, ‘আমি পরিচিত হবো’। তাই তিনি সৃষ্টিজগত পয়দা করলেন। সৃষ্টি জগতের পয়দায়েশের শুভ সূচনা করলেন সকল সৃষ্টির মূল আধার নূরে মোহাম্মাদী সা.-এর দ্বারা। এ নূর হতেই তিনি সকল সৃষ্টি জগতকে পর্যায়ক্রমে বিন্যাস্ত করলেন। আরশে আজিম হতে এই মর্তলোক পর্যন্ত সৃষ্টি জগতকে যথাযথভাবে অবস্থান ও অবহিতির যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন।
একটি সৃষ্টি হতে অপর একটি সৃষ্টির নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখে এদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পন্ন করার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সাধিত করলেন। একবার জনৈক ইহুদি আলেম রাসূলুল্লাহ সা.-এর দরবারে হাজির হয়ে আরজ করল, হে মুহাম্মদ সা., আমরা তো আমাদের কিতাবসমূহে আল্লাহকে এরূপ পাই যে, তিনি আকাশ মন্ডলকে এক আঙ্গুলে, ভূ মন্ডলগুলোকে এক আঙ্গুলে, বৃক্ষরাজিকে এক আঙ্গুলে, সমুদয় পানিকে এক আঙ্গুলে, ভূ গর্ভস্থিত বস্তুরাজিকে এক আঙ্গুলে তুলে নেবেন।
তারপর তিনি বলবেন : আনাল মালিকু, আমিই রাজাধিরাজ। রাসূলুল্লাহ সা. ইহুদি আলেমের কথা শুনে তার সমর্থনে এমনভাবে হাসলেন যে, তার চোয়ালের দাঁত প্রকাশ পেল। তারপর তিনি আল কোরআনের এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন : ‘ওয়ামা কাদারুল্লাহা হাক্কা কাদরিহি’, অর্থাৎ তারা আল্লাহপাকের মান সম্ভ্রমের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করতে পরেনি। প্রকৃত অবস্থা হলো এই যে, কিয়ামত দিবসে সমগ্র ভূ খন্ড তার হাতের মুঠোয় থাকবে। (সূরা যুমার : আয়াত-৬৭)। সহিহ মুসলিম শরিফের এক বর্ণনায় এসেছে : পাহাড়-পর্বত ও বৃক্ষরাজি তার এক আঙ্গুলে থাকবে, তিনি তা নাড়াচাড়া করতে করতে বলবেন : ‘আনাল মালিকু আনাল্লাহ, আমি রাজাধিরাজ,’ আমিই আল্লাহ।
সহিহ বুখারি শরিফের এক বর্ণনায় এসেছে : আল্লাহপাক আকাশ মন্ডলকে এক আঙ্গুলে, সমুদয় পানি ও ভূ গর্ভস্থিত বস্তুরাজিকে এক আঙ্গুলে এবং অবশিষ্ট সমগ্র সৃষ্টিকে এক আঙ্গুলে ধারণ করবেন। সহিহ মুসলিম শরিফে মারফু সূত্রে হজরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ রাব্বুর ইজ্জত কিয়ামত দিবসে সুবৃহৎ আকাশমন্ডলকে ভাঁজ করে মুড়িয়ে নিজের ডান হাতে ধারণ করে বলবেন, ‘আনাল মালিকু আইনাল জব্বারুনা? আইনাল মুতাকা বিবরুনা?’ অহঙ্কারীরা কোথায়?
তারপর তিনি নিজের বাম হাতে সাত জমিনকে ভাঁজ করে মুড়িয়ে বলবেন, ‘আমিই রাজধিরাজ, অত্যাচীরর দল কোথায়? দাম্ভিক অহঙ্কারির দল কোথায়? আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের কুদরতি কামেলার বিবরণ দিতে গিয়ে হজরত ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, ‘সাত আকাশ ও সাত জমিন আল্লাহপাকের হাতের তালুতে এমনই ক্ষুদ্র যেমন তোমাদের কাহারো হাতে সরিষার দলা।’
এ প্রসঙ্গে ইবনে জারির রহ. বলেন, ইউনুস আমাকে হাদিস শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, ইবনে ওহাব আমাদের খবর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইবনে যায়িদ বলেছেন, আমাকে আমার পিতা হাদিস শুনিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, কুরসির মধ্যে সপ্ততল আকাশ এমনই হবে, যেমন কোনো ঢালের মধ্যে সাতটি দিরহাম ফেলে রাখা হয়। আমার পিতা আরো বলেছেন যে, হজরত আবুযর রা. বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে বলতে শুনিছি যে, আরশের মধ্যে কুরসি এমনিভাবে আছে যেমন কোনো ভূ খন্ডের কোনো এক ময়দানে একটি লোহায় আংটি পড়ে রয়েছে।



 

Show all comments
  • লোকমান শাহীন ৯ নভেম্বর, ২০২২, ৫:২৫ পিএম says : 0
    আরো অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করে
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ২:৩৮ এএম says : 0
    লেখাটির জন্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi anas ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:২৬ এএম says : 0
    ধন্যবাদ, লেখাটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আসলে, আমাদের সকলের উচিত উচিত মহান আল্লাহর অসীম শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে ভালো করে জানা। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • সোহেল ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:৩৪ এএম says : 0
    Almighty Allah, Receive us as your loyal servant. Ameen
    Total Reply(0) Reply
  • Saad ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:৪৩ এএম says : 0
    আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি সবকিছু দেখেন ও শোনেন। তিনিই একমাত্র স্রষ্টা।
    Total Reply(0) Reply
  • শাহ আলম ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:৪৯ এএম says : 1
    হে আল্লাহ, কিয়ামতের সেই কঠিন দিন যেদিন তোমার আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না সেদিন তোমার আরশের নীচে এই ক্ষুদ্র বান্দাকে জায়গা দিয়েন।আমীন
    Total Reply(0) Reply
  • Omar ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ১০:০৭ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ সাত জমিনকে ভাঁজ করে মুড়িয়ে বলবেন, ‘আমিই রাজধিরাজ, অত্যাচীরর দল কোথায়? দাম্ভিক অহঙ্কারির দল কোথায়?... এখানে ক্ষমতাসীনদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • md. rashed islam ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ পিএম says : 0
    Allah is great.
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Sarwar Hossen ৯ মে, ২০২০, ৪:৩১ পিএম says : 0
    আপনারা যদি হাদিসগুলোর রেফারেন্স দিতেন তবে খুব ভালো হতো
    Total Reply(0) Reply
  • মো.কাজল হোসেন মোল্লা ১৬ মে, ২০২০, ২:৪৩ পিএম says : 0
    আলহামদুলিললাহ (সুমমাআলহামদুলিললা )
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন