পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে গণজোয়ারে ভেসে যাবে সরকার’ এমন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। দাবী আদায়ে ইস্পাত কঠিন ঐক্যের ইংগিত দিয়ে তারা বলেছেন, ভোটের অধিকার আদায়ের জন্যই ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এই সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে স্বাধীনতা বিরোধী কাজ করছে। আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, ভোটের অধিকার কোনোটিতেই সরকারের ভ্রুক্ষেপ নেই। দেশ আজ গভীর সংকটে। পাতানো নির্বাচনের পায়তারা চলছে। ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামলে গণজোয়ারে ভেসে যাবে এই সরকার। নির্বাচন কমিশনকে বলছি ‘পাপেট’ না হয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দিন। এমন ফাঁদ পেতেছেন যেন ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন করতে না পারে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাতানো নির্বাচনে সব ফাঁদ ছিন্নভিন্ন করে ফেলবো। একতরফা নির্বাচন কোনোভাবে হতে দেবো না। রাজশাহী মাদরাসা মাঠে গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত এক বিশাল জনসমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। পথে পথে বাঁধা পেরিয়ে নেতারা ঢাকা থেকে রাজশাহীর পূর্বঘোষিত এই সমাবেশে হাজির হন।
সমাবেশের প্রধান অতিথি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি। তবে তিনি সমাবেশে উপস্থিতি জনতার উদ্দেশ্যে মোবাইলে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। নির্বাচন কমিশনের ‘তড়িঘড়ি’ তফসিল ঘোষণার নিন্দা জানিয়ে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ইসি তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করেছে। এটা জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা। তড়িঘড়ি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং স্বাধীনতা বিরোধী কাজ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। তিনি আরো বলেন, আমরা সরকারের সাথে আলোচনায় গিয়েছিলাম। গণভবনে সংলাপে বলেছিলাম অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান করুণ। দেশের ১৬ কোটি মানুষের কথা ভাবুন। নির্বাচন যেন গ্রহণযোগ্য হয় সে পদক্ষেপ নিন। জনগণ ভোটের অধিকার ফিরে চায়। কিন্তু আমাদের কথাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ১৬ কোটি মানুষকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। জনমত উপেক্ষা করে তফসিল ঘোষণা সংবিধান পরিপন্থী কাজ হয়েছে।
‘কারাগারে বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে হত্যা করার চেষ্টা হচ্ছে’ অভিযোগ তুলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অসুস্থ খালেদা জিয়াকে জবরদস্তি করে হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। এটা অমানবিক। তিনি বলেন, নির্বাচনের সমান মাঠ তৈরি না হওয়ায় ঘোষিত তফসিল গ্রহনযোগ্য নয়। আমাদের কথা খুব পরিস্কার নির্বাচনের ‘সমান মাঠ’ তৈরি করতে হবে, সকল দলকে সমান অধিকার দিতে হবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাকে নির্বাচনের মাঠে কাজ করতে দিতে হবে। অন্যথায় কোনো নির্বাচন তফসিল গ্রহনযোগ্য হবে না।
প্রধানবক্তা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের সংকট আজ আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গণতন্ত্র, দেশের সার্বভৌমত্ব থাকবে কিনা সেটাই আজ মৌলিক প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে। ঐক্যবোধ্য আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদেও দাবি আদায় করতে হবে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে গণতন্ত্র অসম্পূর্ণ। কেননা বেগম খালেদা জিয়া আর গণতন্ত্র এ দুটি এখন পরিপূরক। বেগম জিয়া এখন মাদার অব ডেমোক্রেসী, গণতন্ত্রের প্রতীক। তাই গণতন্ত্রের মাকে বন্দি রেখে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এ সরকার গণতন্ত্রেও প্রতীককে একটি অন্ধকার পরিত্যাক্ত কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। তাকে বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে হত্যা করা হচ্ছে। পরিত্যাক্ত ভবনের একটি দশ ফুট বাই বিশ ফুট ঘরের মধ্যে তার প্রহসনের বিচার করা হচ্ছে। জনগন এই অন্যায় জুলুম আর মেনে নেবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই দেশে গনতন্ত্র পূনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।
বিএনপি মহাসচিব উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। শত বাধা উপেক্ষা করে আপনারা গণতন্ত্রের জন্য বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য এখানে উপস্থিত হয়েছেন। দেশ এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। আজ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন গনতন্ত্র থাকবে কিনা, দেশ সামনের দিকে যাবে কিনা, ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে কিনা। মুক্তি যুদ্ধের চেতনা থাকবে কিনা। সর্বোপরি দেশের স্বাধীনাতা, সাবভৌমত্ব থাকবে কিনা। তিনি বলেন, গত রোড মার্চে এই রাজশাহীতে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখানে উপস্থিত ছিলেন। আজ তিনি নেই। কারণ তাকে কারাগারে আটকে রেখেছে এই স্বৈরাচারী সরকার। ডাক্তার বলেছে, তিনি এখনো সুস্থ নন। কিন্তু তাকে জোর করে তারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি ছুটে গিয়েছিলাম তার কাছে। তিনি খুবই অসুস্থ। তিনি কথা বলতে পারছেন না। তাকে দেখে কান্না থামিয়ে রাখা কষ্ট হয়েছে আমার। চোখের সামনে এভাবে নির্যাতন মেনে নেয়া যায়না। তাকে তিলে তিলে মেরে ফেলা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা গণতন্ত্র আর ভোটাধিকারের আন্দোলন করেছিলাম। এবারও তাকে মুক্ত করে আমরা দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো। দেশের মানুষ মুক্তি চায়। তারা এ জন্য অপেক্ষা করছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বলেন, কারাগারে যাওয়ার আগে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন আমরা শান্তি চাই। সবাইকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবেন। তার কথায় আমরা লড়াই করছি। আমরা সংলাপেও গিয়েছি। সংলাপে বলেছি সংসদ ভেঙ্গে দিেেত হবে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার দিতে হবে। কিন্তু তারা সেটি মানছে না। আপনারা এতো নির্যাতন সহ্য করছেন একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেখার জন্য, শান্তির জন্য। এই সরকার শান্তি চায়না, গণতন্ত্র চায় না সেটি প্রমাণ হয়ে গেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমানসহ হাজারর হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। একজন নেতাকর্মীও নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই। এই রজাশাহীর অনেক নেতাকর্মী কারাগারে। আমরা বেগম জিয়াসহ সবার মুক্তি চাই। কথা পরিষ্কার, নির্বাচনের সমান মাঠ তৈরী করতে হবে। সবার সমান সুযোগ দিতে হবে। বেগম জিয়াকে মুক্তি দিেেত হবে। অন্যথায় নির্বাচন ফলপ্রসু হবে না। এমন নির্বাচন দেশের জনগণ মেনে নিবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই রাজশাহী আন্দোলনের ময়দান। এখান থেকেই সংগ্রাম হয়েছে। আবার শপথ নিতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে গনতন্ত্র উদ্ধার করেতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই এই সরকারের পতন ঘটিয়ে আমাদের দাবি আদায় করতে হবে।
জেএসডির সভাপতির আ স ম আবদুর রব বলেন, এখন সারা দেশে একটাই শ্লোগান। সেটি হচ্ছে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। এই বলে তিনি খালেদা জিয়ারর মুক্তির দাবিতে শ্লোগান ধরেন। আমরা দেশকে বাঁচাতে সংলাপে গিয়েছিলাম। কিন্তু দাবি মানা হয়নি। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। তার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন। আমাদেরকে উস্কে দিবেন না। গত কয়েকদিন ধরে বিরোধী নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। অথচ সরকার প্রধান বলেছিলেন, কাউকে হয়রানি বা গ্রেফতার করা হবেনা। জনসভায় বাধা দেয়া হবে না। অথচ আজকের এই জনসভায় আসার সময় নেতাকর্মীদের পথে পথে বাধা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সংসদ ভেঙ্গে দেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকার গঠন করুন। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী করুন। তা না হলে দেশে কোনো নির্বাচন হবেনা। তিনি বলেন, যখন এই আওয়ামী লীগ তত্ত¡াবধায়ক সরকােেরর জন্য আন্দোলন করেছিল তখন কি সেটি সংবিধানে ছিল। তফসিল কাদের জন্য? আমাদের দাবি মানতে হবে। মরতে হলে মরবো তবু আন্দোলন করে দাবি আদায় করবো। জনগণ আমাদের পক্ষে, আল্লাহ আমাদের পক্ষে। জয় আমাদের হবেই। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, দেখে যান। মাদরাসা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ। এবার লড়াই হবে। লড়াই লড়াই লড়াই চাই, এই লড়াইয়ে জিততে হবে। জনগণের জয় হবেই। তফসিল পেছাতে হবে। আমি কাউেেক ভয় পাইনা। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি, এই লড়াইয়ে আমাদের জয় হবেই। জনগণ জেগে উঠেছে। এদের কেউই ঠেকিয়ে রাখতে পারবেনা। এই আন্দোলনকে ঘরে ঘরে পেীছে দিতে হবে। শুধু রাজশাহীতে শ্লোগান দিলে হবেনা। সারা দেশে এই স্লোগান ছড়িয়ে দিতে হবে। দাবি যদি না মানেন, তফসিল যদি না পেছান, নির্বাচন যদি না পেছান তাহলে লড়াই হবে। এ লড়াইয়ে আমরাই জিতবো ইনশাআল্লাহ।
এলডিপির সভাপতি ড. কর্ণেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য সৈরাচারের বিরুদ্ধে আপষহীন আন্দোলন করেছেন। সংসদীয় গণতন্ত্র তিনি এদেশে প্রবর্তন করেছেন। তার স্বামী শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছেন। এখন দেশে গণতন্ত্র নেই। জনগণের ভোটাধীকার নেই। জনগণের মৌলিক অধিকার নেই। দেশে চলছে লুটপাঠ তন্ত্র। ব্যাংকে টাকা নেই, ব্যবসা নেই বাণিজ্য নেই, মানুষের মনে কোন শান্তি নেই। এ অবস্থায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। তরুণ বয়সে আমি যুদ্ধে গিয়েছিলাম। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আজ সেই তরুণদের বলতে চাই, তোমাদেরকে এখন দাযিত্ব নিতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা রাজপথে লড়াই করেতে হবে। আমরা নির্বাচনে যাবো কি না সেটি এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটি হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এ সময় তিনি তরুণ সমাজকে হাত তুলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার বিষয়ে অঙ্গিকার নেন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেন, আমি বিএনপির সভায় আসিনি। ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে এসেছি। যদি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চান তাহলে আপনাদের ঐক্য আরো অটুট রাখতে হবে। এখানে উপন্থিত ৯০ শতাংশ বিএনপি সমর্থক। ২০১৫ সালে বেগম জিয়া লাগাতার হরতাল অবরোধ দিয়েছিলেন। আমি অনুরোধ করেছিলাম সেটি প্রত্যাহার করে নিতে। শেখ হাসিনাকেও বলেছিলাম আলোচনায় বসতে। কিন্তু তিনিও তখন আলোচনায় বসতে রাজি হননি।তবে এখন তিনি বসেছেন। তিনি যেদিন আলোচনায় বসেছেন সেদিনই আপনাদের বিজয় হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আপনারা যদি বিজয় ধরে রাখতে চান, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে না দেখতে চান তাহলে লড়তে হবে। রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। খালেদা জিয়া আজ গণতন্ত্রের প্রতীক। বাংলাদেশের রাজনীতি বলেতে এখন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশেকে যেমন বন্দি করে রাখা যায় না তেমনি খালেদা জিয়াকেও বন্দি রাখা যাবে না। তাকে বন্দি রাখা আর সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দেশের নির্বাচন মানেই ধানের শীষ। তাই আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বঙ্গবীর বলেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের গাড়িতে প্রথম পতাকা দেয়নি। এই আওয়ামী লীগই সবার আগে পতাকা দিয়েছে। সরিয়া বাড়ির নুরুল মাওলানাকে আওয়ামী লীগেই পতাকা দিয়েছে। এরপর রংপুরের আশিকুর রহমান এবং চাঁদপুরের মহিউদ্দিন খান আলমগীরসহ কয়েক জনের গাড়ীতে তারা পতাকা তুলে দিয়েছে। সংলাপে শেখ হাসিনা বলেছিল, সমাবেশে বাধা দিবো না। কিন্তু আমার গাড়িটাই পুলিশ ৫ বার ঘুরিয়ে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে রাজনীতিতে এসেছি। এখনো বঙ্গবন্ধু বুকে লালন করে রাজনীতি করবো। তবে যারা বঙ্গবন্ধু এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে দ্ব›দ্ব সৃষ্টি করে নিজেদের আখের গোচাচ্ছে আমি সেটা পছন্দ করিনা। আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে বঙ্গবন্ধু এবং জিয়াউর রহমানের দ্ব›দ্ব দূর করবো ইনশাইল্লাহ।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, এই জনসভায় যতজন মহিলা উপস্থিত হয়েছেন আমার দলে যদি অর্ধেকও থাকতো তাহলে শেখ হাসিনাকে তিন দিনের মধ্যেই পদত্যাগে বাধ্য করতাম। আজকে পুলিশ বাহিনীর প্রতি বলবো তাদের বেতন বৃদ্ধির জন্য আমি কয়েকবার সুপারিশ করেছি। আমাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই তাদের বেতন বৃদ্ধি হয়েছে। তাই তাদের বলবো সরকারের কথা যেমন শুনেন তেমনি আমার কথাও শুনতে হবে। আমি আপনাদের বলছি আপনারা যারা এই সরকারের সময় ঘুষ দিয়ে চাকিরী নিয়েছেন তাদের ঘুষের টাকা আমরা ফেরত দিবো। আমি জানি এই আওয়ামীলীগ সরকারের সময় পুলিশে যতজন চাকরী নিয়েছেন তারা প্রত্যেকে গড়ে দশ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। সে টাকা আপনাদের ফেরত দেয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেছিল জনসভায় বাধা দেয়া হবেনা। অথচ আমরা কি দেখছি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী আমাদের জনসভা করতে দিচ্ছে না সেখানে তার অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কিভাবে সম্ভব? খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই সরকারের আক্রোশের মূল কারণ হচ্ছে তিনি ক্ষমতাসীনদের অবৈধ ক্ষমতা, দুর্নীতি দু:শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। এই সরকার অন্যায়ভাবে বেগম জিয়াকে কারাগারে আটক রেখেছে। আমরা বলতে চাই্, বেগম জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবেনা। প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। আপনারা সরকারের অন্যায় নির্দেশ মানবেন না। যদি মানেন তাহলে জনহণ আপনাদের ক্ষমা করবে না।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, এই গণজোয়ার প্রমাণ করে জনগণ আর এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আমরা চেয়েছে আইনের শাসনের সংকট, ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, সবার সমান সুযোগ, ভোট দেযার অধিকার, এব দাবি আমরা চেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপে আমরা এগুলোই তুলে ধরেছি। তারা আমাদের দাবি মেনে নেয়নি। তারা সংলাপকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সংসদ ভেঙ্গে দিেেত হবে। প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাদ করে নিরেেপ্কষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এগুলো শুধু কথাতেই হবেনা। আন্দোলন করেই আদায় করা হবে। তিনি বলেন, এই সরকার যতদিন থাকবে ততদিন এই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভােেব কাজ করতে পারবেনা।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশ আজ গভীর সংকটে। সিইসি একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। সিইসি বলছে তার কথা মতোই নির্বাচন হবে। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। কিন্তু দেশে যে পরিবেশ তৈরী হয়েছে সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাত দফা দাবি দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কোনো দাবিই মেনে নেননি। ইসিকে বলেছি তফসিল এখন দিবেন না। তিনিও কথা শোনেন নি। তাহলে এখন কি করবো। এটি সারা দেশের মানুষের প্রশ্ন। আমাদের সভায় যাতে মানুষ আসতে না পারে সেজন্য যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি আমার গাড়ি পর্যন্ত পুলিশ আটকে দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার মনে করেছে আমাদের বাধা দিয়ে একতরফা নির্বাচন করে পার পেয়ে যাবেন। আমি বলি এটি সহজ নয়। এত বাধা উপেক্ষা করে লাখো মানুষ হাজির হয়েছে। বাধা দিয়ে আটকে রাখা যায়নি, যাবে না। আমরা যদি সারদেশ থেকে জনণকে ঢাকায় আসতে বলি তখন সরকার কি করবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। আমরা বলেছি একদেশে একসাথে দুইটা সংসদ থাকতে পারেনা। দুইজন প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারেনা। কথা পরিস্কার। শেখ হাসিনাকে সরতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে চান। অথচ বিএনপি চেয়াররপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি খুবই অসুস্থ। তার চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছেনা। কোর্টের আদেশে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। আবার সব নিয়ম কানুন উপেক্ষা করে তাকে কারাগােের পাঠানো হয়েছে। এক শীত শেষ নয়। বেগম জিয়া যদি জেলে এক শীত কাটান তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে দশ শীত কাটাতে হবে। জুলুম নির্যাতন বন্ধ করেন। তফসিল পিছিয়ে দিন। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশের হুদাদের জ্বালায় থাকতে পারছিনা। এদের শিক্ষা দিতে হবে। সিইসির সমালোচনা করে তিনি বলেন, সিইসি সরকারের নির্দেশে তফসিল ঘোষণা করেছে। তার টার্গেট হচ্ছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথার দুই পয়সারও দাম নেই। এই প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করা যাবেনা।
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চেীধুরী বলেন, এই সরকােেরর শক্তি হচ্ছে পুলিশ ও দুর্নীতির টাকা, গ্রেফতার, মিথ্যা ও গায়েবী মামলা। এরা জনগণকে ভয় পায়। তাই যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু তাররপরও জন স্রোত ঠেকানো যাযনি। দেশের সবমানুষকে এরা গ্রেফতার করতে পারবেনা। এই ভয়ে তাদের পায়ের নীচের মাটি সরে গেছে। এরা ভয়ে অস্থির। এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। এই সরকার পালাবার পথ খুজছে। ক্ষমতায় গেলে কি করবে তার ব্যাখ্যা করে তিনি বলেনম ঐক্যফ্রন্ট সরাকর গঠন করলে দেশেরসকল অনাচার দূর হবে। সবাই যারযার ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রের মালিক জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই ড.কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে। এই আন্দোলনে অবশ্যই বিএনপি জয়ী হবে।
বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের পরিচালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন জেএসডির আবদুল মালেক রতন, এম এ গোফরান, গণফোরামের এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক আহমেদ, রফিকুল ইসলাম পথিক, নাগরিক ঐক্যের এসএম আকরাম, শহীদুল্লাহ কায়সার, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতিক বক্তব্য রাখেন। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, ব্যারিস্টার আমীনুল হক, আমানউল্লাহ আমান, অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, কামরুল মুনির, আবদুস সালাম, হারুনুর রশীদ, নাদিম মোস্তফা, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র কেন্দ্রীয় নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাবেক এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া। ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জমিয়তের উলামায়ের ইসলামের মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, বিকল্পধারার একাংশের শাহ আহমেদ বাদল বক্তব্য দেন।
জনসভায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সিনিয়র মন্ত্রী মশিয়ুর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ (পিপিবি) আহবায়ক রিটা রহমানকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। গতকাল তার দল ২০ দল যোগ দেয়। জনসভায় বিএনপির হেলালুজ্জামান লালু, আবদুল লতিফ খান, আবদুল মান্নান তালুকদার, সিরাজুল হক, মাহমুদা হাবিবা আবদুল মমিন তালুকদার খোকন, আকবর আলী, সেলিম রেজা হাবিব, নজরুল ইসলাম আজাদ, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, হাসান জাফির তুহিন, ভিপি সাইফুল ইসলাম, প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জনসভা উপলক্ষে মাদরাসা মাঠের চারপাশে ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।