Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিয়ন্ত্রণহীন ধানের বাজার

সুযোগ নিচ্ছে মুনাফালোভীরা গড়ে তোলা যায়নি বাজার ব্যবস্থাপনা

মিজানুর রহমান তোতা : | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। নতুন ধান বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। তারা উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না। বড় কৃষকরা গড়ে কিছুটা লাভবান হলেও স্বল্প ও মাঝারি কৃষকরা উৎপাদন খরচও ঘরে আনতে পারছেন না। যশোরের শার্শা উপজেলার শালকোনা গ্রামের কৃষক সাহেব আলী বললেন, ধানের বাজারে এখনই দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ কয়েকদিনের মধ্যেই ধান বেচাকেনা পুরাদমে শুরু হবে। কৃষকদের কষ্টার্জিত ধান নিয়ে বরাবরের মতোই ফড়িয়া, পাইকার, মজুদদার ও মধ্যস্বত্বভোগীরা পেট মোটা করছে। বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় ধান উঠা মৌসুমে কৃষক পান না ধানের উপযুক্ত মূল্য। অথচ চালের মূল্য চড়া।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, ধানের বাজারে তদারকি না থাকায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। এতে কৃষকরা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। মাঠে নেমে কৃষকদের প্রকৃত চিত্র কী, তারা কী ধানের বাম্পার ফলনে খুশি? উপযুক্ত মূল্য কী পাচ্ছেন? হাট-বাজারেরই বা কী অবস্থা?-এসব তদারকির অভাবেই কর্মবীর কৃষকরা মার খাচ্ছেন।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং এন্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, প্রধান ফসল ধান উৎপাদনে আমাদের কৃষক অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে। যথেষ্ট পরিশ্রমী কৃষকরা ধানের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় দিনে দিনে পিছিয়ে যাচ্ছেন আর্থিকভাবে হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত। সে জন্য সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। কৃষকরা ধানের মূল্য পাচ্ছেন কী পাচ্ছেন না তা তদারকি করা হয় না। এটি আসলে দরকার। কৃষক যখন মাঠ থেকে ধান কাটে তখনই তাদের উপযুক্ত মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা দরকার। তা না হলে অব্যাহতভাবে মার খেলে চাষাবাদের গতি বৃদ্ধি পাবে না। ধান উৎপাদনে আমাদের সারপ্লাস। এটি বিরাট অর্জন। এটিকে ধরে রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

কয়েকজন ধান ব্যবসায়ী জানালেন, কৃষকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে সুদখোর, দাদন ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা সাধারণত ধান উঠা মৌসুমে সাধারণ কৃষকদের ফাঁদে ফেলে নানা অজুহাতে কম দামে ধান কিনে ঠকানোর ফন্দি আঁটে। বাজার তদারকি থাকলে সেই সুযোগ পেত না মুনাফালোভীরা। ধানের বাজারে এখন একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ মুনাফালোভীদের। মাঠে ধান কর্তন পরিদর্শনকালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক চন্ডিদাস কুন্ডু দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সারাদেশেই প্রায় ২০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। উৎপাদন হয়েছে হেক্টর প্রতি হাইব্রিড জাতে ৩ দশমিক ৮১ ও উফসীজাতে ২ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টন চাল। কৃষকদের কথা, ধানের দাম ক্রমেই কমছে। ধানের ফলন তো ভালো হয়েছে কিন্তু দাম নেই। এক বিঘা জমিতে স্বর্ণাধান হচ্ছে গড়ে ১৮মণ। বাজারে ধানের দাম ৬শ’ টাকা মণ। সেই হিসাবে ১ হাজার ৮শ’ টাকা হবে। জমি প্রস্তুত, রোপন, সার, পরিচর্যা, কাটা, মাড়াই ও বাজারে তোলা সব মিলিয়ে বিঘা প্রতি ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ হয়। তাতে খুব একটা লাভ হবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে এবার রোপা আমন ধান আবাদ হয় ৫৩ লাখ ৬০হাজার ২১০ হেক্টরে। চাল উৎপাদনের টার্গেট করা হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন।সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কৃষি স্প্রসারণ অধিদপ্তর শুধুমাত্র উৎপাদন দেখে। মার্কেটিং দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। মার্কেটিং বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, বাজার তদারকির দায়িত্ব আছে ঠিকই। লোকবলের অভাবে গ্রামের হাট-বাজার পর্যায়ে তদারকি করা কঠিন। কৃষি বিশেষজ্ঞ, কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকের বক্তব্য শুধু ধান নয়, কৃষি পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায়নি। যার কারণে কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে, বাজারে ধানের মূল্য কম অথচ নবান্নে চালের মূল্য কমছে না। এর কারণ কি, গলদ কোথায়, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কোন বিভাগই। জানা গেছে, এক মণ ধানে গড়ে ২৭ কেজি চাল উৎপাদন হয়। যার মূল্য মোটা প্রসেসিং চাল ৩২টাকা কেজি হিসাবে প্রতিমণের মূল্য মোট ১ হাজার ২শ’ ৮০ টাকা। গড়ে ৬শ’ টাকা প্রতি মণ ধান ক্রয় করে পাইকারী ব্যবসায়ী, আড়তদার, মিলাররা যে টাকা লাভ করছে তা একজন কৃষক প্রতি মণে তা লাভ করতে পারে না। বরং হিসাবানুযায়ী লোকসান গুণতে হচ্ছে। মাঠ থেকে বাজারে উঠার পর ধান মিলারদের কাছে গেলেই প্রথমেই বড় ধরণের মুনাফা কষে নেওয়া হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধানের বাজার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ