বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : ভ‚মিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা কুমিল্লা নগরীর অর্ধশতাধিক ভবনে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হাজারো মানুষের মধ্যে কেউ কর্মব্যস্ত সময় কেউবা পারিবারিক জীবনের মূল্যবান সময় পার করছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ভ‚কম্পনের ঘটনায় দেশ কেঁপে উঠলেও টনক নড়ছে না ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মালিকদের। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ওইসব ভবন ভেঙে ফেলা বা সংস্কার করার বিষয়ে মালিকদের দফায় দফায় নোটিশ দিয়েও কার্যকর সাড়া পাচ্ছেন না। তবে গত চার/পাঁচ বছরে কয়েকটি ভবন ভেঙে ফেলা ও কয়েকটির সংস্কার হয়েছে। আর বাকি অর্ধশতাধিক ভবন এখনো ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে। যা যেকোন সময় ভ‚মিকম্পে বিধ্বস্ত হওয়ায় আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও অত্যধিক ভ‚কম্পের আশংকায় ২০০৯ সালের মার্চে কুমিল্লা শহর এলাকায় যে জরিপ চালানো হয়েছিল তাতে ১১টি ওয়ার্ডের ৬৬ ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকা করা হয়। ২০০৯ সালের ১ জুন তৎকালীন কুমিল্লা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী মো: আরিফ ওই ৬৬ ভবন ভেঙ্গে অপসারণের নির্দেশ দেন। ঝুঁকিপূর্ণ ৬৬ ভবনের সঙ্গে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নতুন তালিকায় নতুন করে যোগ হয় আরও ১০ভবন। গত সাত বছরে ৭৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে মাত্র ১০থেকে ১২টি ভবন ভেঙ্গে ফেলা ও সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে নগরীতে অর্ধশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভ‚মিকম্প হলেই এসব ভবনের লোকজন হুড়িহুড়ি করে রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু ভবন ভাঙ্গা বা সংস্কারের কোন নামগন্ধ নেই। ওইসব ভয়ানক ভবনের আশপাশের সাধারণ বাসিন্দা যারা ঝুঁকির মধ্যে নেই তারাও চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় থাকেন প্রতিনিয়ত। কেননা, ভ‚মিকম্পে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে আশপাশের বাড়িঘর, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেরও ব্যাপক ক্ষতিসহ প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
কুমিল্লা নগরীর অর্ধশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের অধিকাংশই শত বছরের পুরানো। ভবনগুলোর দেয়াল ও ছাদ থেকে আস্তর খসে পড়েছে। কোনটির দেয়াল ও ছাদের অংশে গাছ গাছালি গজিয়েছে। আবাসিক ভবনগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লোকজন বসবাস করছে। আর বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে কাজকর্ম চলছে অনেকটা আতংকের মধ্যে। আবার নতুন করে নির্মিত অনেক ভবনই বিল্ডিংকোড না মেনে করার কারণে ভ‚মিকম্পের ঝুঁকিতে পড়েছে। বর্তমানে ভ‚মিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে এমন ভবনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কান্দিরপাড়-মনোহরপুর এলাকার ১২তলা বিশিষ্ট ময়নামতি গোল্ডেন টাওয়ার। এটি ৯তলার অনুমোদন নিয়ে ১২তলা করেছে। যার ফলে ভবনটি যেকোন সময়ে নিচের দিকে দেবে বা ধসে পড়তে পারে। এছাড়াও কান্দিরপাড় মনোহরপুর সড়কে সুফিয়া ম্যানসন মার্কেট, মনোহরপুরে কৃষি ব্যাংক ভবন, মনোহরপুর-রাজগঞ্জ সড়কে জাতীয় পার্টির অফিসসহ বাটা দোকান ও আফতাব ব্রাদার্স নিয়ে পুরো ভবন, রাণীর দিঘীর পূর্বপাড়ে ফুলার হোস্টেল, কাপড়িয়াপট্রি এলাকায় এস ইসলাম ভবন, চকবাজার কাশারিপট্রি মোড়ে মারুফ রেষ্ট হাউজ, মুন্সেফ বাড়ি এলাকায় অ্যাডভোকেট হাবিব উল্লাহ চৌধুরীর বাসভবন, উজির দিঘীপাড়ে দুদুকের সাবেক কার্যালয় (বর্তমানে এ্যাপোলো নামে একটি স্কুল), বাদুরতলায় তিনতলা বিশিষ্ট চৌধুরী মার্কেট, একই এলাকায় সাবেক সিংহ প্রেস, অশোকতলায় এনএসআই অফিস বিল্ডিং, অশোকতলায় প্রয়াত শিল্পী নাছির উদ্দিনের সরকারী বন্দোবস্তীয় দোতলা ভবন ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, ধর্মপুরে জাতীয় মহিলা সংস্থার কার্যালয়, জেলা সমবায় ইউনিয়ন অফিস, বাগিচাগাঁও এলাকায় আনন্দকানন ভবন, গণপূর্ত বিভাগের কোয়াটার, রামঘাট এলাকায় বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন কার্যালয়, মোগলটুলির তাজমহল বিল্ডিং, ঠাকুরপাড়ার মৃণালিনী দত্ত ছাত্রী নিবাস, ঝাউতলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত রাজলক্ষী ভবন ও কামিনী কুটির, শাসনগাছায় ট্রাষ্ট সুপার মার্কেট, হোটেল আবেদীনসহ আরো কিছু ভবন।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, নগরীতে তালিকাভুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো মানুষের মধ্যে আতংক ছড়াচ্ছে, মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।