বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সম্প্রতি ভারতের উচ্চ আদালত দু’টি রায়ে সব ধরনের যৌন বিকৃতি ও পরকীয়া বৈধ করে দিয়েছে। পশ্চিমারা বহু বছর ধরে যে অসভ্যতা নির্মাণ করেছিল, একটি ধর্মীয় সংস্কৃতির দেশ হিসাবে ভারত ছিল অনেকটাই তা থেকে দূরে। বিশেষ করে প্রায় ৪০ কোটি মুসলমানও ভারতের অধিবাসী।
হিন্দু সমাজেও ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ও যৌন শৃঙ্খলা স্বীকৃত। কিন্তু পশ্চিমা ধাঁচের বিচারকরা এসব তোয়াক্কা না করে ধর্মহীন নাস্তিক্যবাদের এজেন্টরূপে কাজ করছেন বলে মনে করার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। আমাদের দেশে কৌশলে বাল্যবিবাহ বিরোধী বাড়াবাড়ি রকমের প্রচারণা ও তা রোধে অসম্ভব রকমের তৎপরতা এসব আন্তর্জাতিক নিধর্মীকরণ কাজেরই একটি দিক কি-না তা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। বাংলাদেশের সমাজ গবেষকদের বলব, বিগত ৯০ বছর ধরে এ দেশে বাল্যবিবাহ বিরোধী আইন চালু আছে। এরপরও শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ সামাজিক বাস্তবতায় ব্রিটিশদের তৈরি এ অবাস্তব আইন মানতে পারেনি। শুনেছি, ১৯২৮ সালে বাল্যবিবাহ বিরোধী আইন পাসের আগে আগে এ দেশে হাজার হাজার তরুণ-তরুণীকে অভিভাবকরা বিয়ে দিয়ে ফেলেছিলেন। কেননা, আইন পাস হয়ে গেলে ছেলে ২১ মেয়ে ১৮ বছরের না হলে আর বিয়ে দেয়া যাবে না। এরপর থেকে ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ যে বয়সেই বিয়ে হোক বাধ্য হয়ে কনের বয়স লিখতে হতো ১৮। এরপর বাংলাদেশের যত শিক্ষিত ব্যক্তি, বিচারপতি, সচিব ও মেধাবী পেশাজীবী অতীত হয়ে গেছেন বা বর্তমানে যাদের বয়স ৭০-এর বেশি তাদের প্রত্যেকের বাবা-মায়ের বিয়ে ব্রিটিশ আইন লঙ্ঘন করেই হয়েছে, যাকে নির্জলা বাল্যবিবাহ বলা চলে। এর মধ্যে ব্যতিক্রম নেই তা বলব না, তবে সেসব আঙ্গুলে গোনা যাবে। সরকারদলীয় একদল আলেম প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন তার মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসাকে বিয়ে করেন তখন তার বয়স ১৪। তৎকালীন প্রায় প্রতিটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে তাদের মধ্যে আকর্ষণ সৃষ্টির শুরুতেই দেয়া হতো, যেন তারা প্রকৃতির এ বিধানকে শরিয়ত সম্মতভাবেই পালন করতে পারে। এতে সেসব লোকের প্রশ্নের জবাবও রয়েছে যারা দাবি করে যে, ১৮ ও ২১ বছরের আগে বিয়ে হলে কিংবা ২০-২২ বছরের আগে মা হলে মেয়েদের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়, আর সন্তান দুর্বল ও মেধাহীন হয়। মূলত এসব একান্ত বাজে কথা। নারীদের স্বাস্থ্য বা সন্তানের কল্যাণ এখানে উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য হলো, উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের অবাধ যৌনতায় উৎসাহিত করে বাংলাদেশকেও পশুর রাজ্যে পরিণত করা।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের কোনো বয়স নেই। তবে পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা, সংস্কৃতি, মনোদৈহিক অবস্থা, আর্থসামাজিক আবহ ইত্যাদি বিবেচনায় বিয়ের বয়স অভিভাবকরাই নির্ধারণ করবেন। কোনো কারণবশত সরকার উপদেশ বা পরামর্শ দিতে পারে। যথেষ্ট নমনীয়তা বজায় রেখে বিধি-বিধানও করতে পারে। তবে বিয়ের মতো একটি মৌলিক মানবিক অধিকার রোধে জেল-জরিমানা করতে পারে না। পিতৃহীন, মাতৃহীন, গৃহসম্পদহীন, আশ্রয়হীন, সামাজিক সমস্যায় নিপতিত অথবা সংস্থান ও নিরাপত্তার মুখাপেক্ষী কোনো ছেলে-মেয়েকে তাদের মনোদৈহিক প্রস্তুতি সাপেক্ষে নির্ধারিত বয়সের কিছু আগে বিয়ে দেয়া আর যাই হোক চুরি ডাকাতির মতো অপরাধ হতে পারে না। একটি বিয়ে বাড়িকে তছনছ করা, বরযাত্রীদের তাড়িয়ে দেয়া, খাদ্যসামগ্রী উল্টে ফেলে দেয়া, বর-কনেকে ভয় পাইয়ে দেয়া, বাবা-মা ও কাজী সাহেবকে গ্রেফতার করা, তিন বছর জেল খাটানো আর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা কোনো সভ্য জগতের আইন হতে পারে না। অন্য অনেক জনবিরোধী আইনের সাথে এটিরও পুনর্বিবেচনা করা সব সরকারের দায়িত্ব। দেশের প্রতিটি আইন শতকার ৯২ ভাগ মানুষের ধর্মীয় অধিকারের আলোকে পুনর্বিবেচনা ও প্রয়োজনীয় সংশোধন সময়ের দাবি। আশা করি মুসলমানরা এ দেশে শরিয়তের আলোকে চলার মতো সুযোগ পাবে। রাষ্ট্র ও সরকার পশ্চিমাদের সব কথা অন্ধের মতো অনুসরণ করবে না। পশ্চিমাদের এজেন্টদের কথাও না। স্বাধীন দেশে সরকার স্বাধীনভাবেই সিদ্ধান্ত নেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।