Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শোকরানা মাহফিলের মোড়কে শাপলার হত্যাকান্ড অস্বীকার বিবৃতিতে বাবুনগরী

| প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:৪৭ এএম

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তরের স্বীকৃতি দিয়ে আইন পাস করাকে উপলক্ষ করে শোকরানা মাহফিলের মোড়কে ৫ মে শাপলা চত্বরের হত্যাকান্ড অস্বীকারের আয়োজন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।

আল্লাম বাবুনগরী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ বোর্ড আল হাইয়াতুল উলইয়ার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘শোকরানা মাহফিল’ -এ প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন ‘২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে কেউ নিহত হয়নি’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, হেফাজতের পক্ষ থেকে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে জানতে পেরেছি সোহরাওয়ার্দীতে অনুষ্ঠিত শোকরিয়া মাহফিলে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জয়নাল আবেদীন ‘শাপলা চত্বরে কেউ নিহত হয়নি, এটা মিথ্যা প্রচারণা’ এমন বক্তব্য নির্জলা মিথ্যাচার, নির্লজ্জতা ও সীমাহীন ঔদ্ধত্বপূর্ণ। বাবুনগরী বলেন, ‘শাপলা চত্বরে কেউ নিহত হয়নি’ মর্মে তার দেয়া বক্তব্যে বাংলাদেশের আলেম সমাজ ও তাওহীদি জনতা চরমভাবে ক্ষুব্ধ, ব্যথিত ও মর্মাহত। দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব মিডিয়ার বদৌলতে ২০১৩ সালের ৫ মে সন্ধ্যায় ও রাতে সরকারের প্রশাসন কর্তৃক শাপলা চত্বরে মহান আল্লাহ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের শাস্তির দাবিতে অবস্থানরত শান্তিপ্রিয় আলেম সমাজ ও তাওহীদি জনতার ওপর নির্মম ও নিষ্ঠুর হামলা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে। যাতে অনেক মুসলমান শাহাদাতবরণ করেন এবং হাজার হাজার নবীপ্রেমিক জনতা আহত হন, পঙ্গুত্ববরণ করেন বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।
বিবৃতিতে হেফাজত মহাসচিব বলেন, আমি স্বয়ং সেই রাতে ব্যাপক নিগ্রহের শিকার হই এবং পরের দিন সকালে আমিসহ অনেকেই গ্রেফতার হই। পরবর্তীতে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হন আরও অনেক আলেম, মাদ্রাসাছাত্র ও সাধারণ মানুষ। ওইদিন শাপলা চত্বরে অবস্থানরত লাখ লাখ তাওহীদি জনতা, দেশি-বিদেশি মিডিয়াকর্মী ও ঢাকাবাসী এ হামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
শুধু তাই নয়, সন্ধ্যার আগ থেকেই সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উগ্রসদস্যদের বর্বরোচিত আক্রমণে অবরোধকারী তাওহীদি জনতার গুলিবিদ্ধ লাশ নানাদিক থেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে আসতে থাকে। যার ভিডিও ফুটেজ প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে রয়েছে। প্রায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এ খবর খোলামেলা প্রকাশিত হয় বলে বিবৃতিতে দাবি করেন বাবুনগরী।
তিনি বলেন, মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে সে ঘটনাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা নিঃসন্দেহে চরম অমানবিক, মজলুম নবীপ্রেমিক জনতার সঙ্গে উপহাস আর শহীদদের প্রতি অবজ্ঞার শামিল।
বিবৃতিতে হেফাজত মহাসচিব বলেন, হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে যেখানে নিঃশ্বর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল, সেখানে সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখে এমন বক্তব্য নিঃসন্দেহে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা ও দম্ভোক্তির শামিল। তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দীতে উপস্থিত লাখ লাখ ইলমে নববীর ধারক-বাহক, দেওবন্দিয়ত ও হক্কানিয়তের নিশানবরদার উলামায়ে কেরাম, বুজুর্গানে দীন ও দ্বীনের রাহবররা এত বড় ডাহা মিথ্যা বক্তব্য কী করে সহ্য করলেন- তা ভেবে পাচ্ছি না। এত বড় মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করতে দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে কারো অন্তরে ঈমানি তরঙ্গ ফুঁসে উঠল না, এটাই তাজ্জবের বিষয়। তাহলে এটা কি কওমি সনদের স্বীকৃতির বিনিময়ে শোকরানা সভার মোড়কে শাপলার হত্যাকান্ড অস্বীকারের আয়োজন?
আল্লামা বাবুনগরী বলেন, সবার মনে রাখা প্রয়োজন- ৫ মে শাপলার শহীদানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে আমরা কেউ আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই পাব না। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বিভক্ত নারায়ণগঞ্জ হেফাজত
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, : প্রধানমন্ত্রীর শোকরানা মাহফিল নিয়ে বিভক্ত হয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জ হেফাজতে ইসলাম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই মাহফিলে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিলেও নারায়ণগঞ্জ হেফাজতের একটি অংশ সদলবলে অংশ নিয়েছে সেখানে।
জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক আব্দুুল কাদিরের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ হেফাজতের একটি বিশাল অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাহফিলে যোগ দিলেও অসুস্থতার কারণে যাননি জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল আউয়াল। আর হেফাজতের রক্তের সাথে বেঈমানী করা যাবে না উল্লেখ করে অংশ নেননি নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান।
সময়ের পালা বদলে কওমী শিক্ষার মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে হেফাজতের সাথে সরকারের সম্পর্ক ক্রমেই শীতল হতে থাকে। এক পর্যায়ে হেফাজতে ইসলাম সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা প্রদানের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিলের আয়োজন করে। আর এ নিয়ে কেন্দ্রীয় হেফাজতের নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতে ইসলাম থেকে পদত্যাগ করেন।
রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত শোকরানা মাহফিলে অংশ নেবে না বলে গণমাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ হেফাজতের নেতারা। কিন্তু গণমাধ্যমে দেয়া সে ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে পারেননি তারা। নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ও সহ-সভাপতি বশিরউল্লাহ’র নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ হেফাজতের একটি বড় অংশ যোগ দিয়েছে ঢাকার মাহফিলে।
অন্যদিকে মহানগর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বিরত থেকেছেন এ মাহফিলে যোগ দেওয়া থেকে। ফলে নারায়ণগঞ্জ হেফাজত কার্যত দ্বিখন্ডিত হয়ে গেল ঢাকার এই আয়োজনকে ঘিরে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, জেলা হেফাজতের সভাপতি মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেব অসুস্থ, তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। আর আমি হেফাজতের রক্তের সাথে বেঈমানি করতে পারবো না, তাই যাইনি।



 

Show all comments
  • ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ২:১৫ এএম says : 2
    Valo kaj holao apnader ..........
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুজ্জামান ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:০৬ এএম says : 1
    তিনি ঠিক কথা বলেছেন
    Total Reply(0) Reply
  • আব্দুল আজিজ ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:২৭ এএম says : 0
    kico bolar nai
    Total Reply(0) Reply
  • Sajid ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১০:১০ এএম says : 0
    বাবুনগরী হুজুর সত‍্য বলেছেন। দুনিয়ার মোহে পড়ে বাতিলের সঙ্গে যারা আপোস করেনি এদেশের তৌহিদী জনতা তাদের আজীবন শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার আহমেদ ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:৪৭ পিএম says : 0
    মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে সে ঘটনাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা নিঃসন্দেহে চরম অমানবিক, মজলুম নবীপ্রেমিক জনতার সঙ্গে উপহাস আর শহীদদের প্রতি অবজ্ঞার শামিল।
    Total Reply(0) Reply
  • তারেক মাহমুদ ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:৪৮ পিএম says : 0
    কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তরের স্বীকৃতি দিয়ে আইন পাস করাকে উপলক্ষ করে শোকরানা মাহফিলের মোড়কে ৫ মে শাপলা চত্বরের হত্যাকান্ড অস্বীকারের আয়োজন করা হয়েছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ