Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর হায়াত-৩

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

এ কথা সত্য যে দূর-দূরান্ত হতে সালাম ও দরূদ পাঠকারীদের সালাম ফিরিস্তাদের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা). এর খেদমতে পৌঁছে দেয়া হয়। এতদসংক্রান্ত বেশ কিছু হাদীস পাওয়া যায়। যেমন : (ক) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পৃথিবীতে পরিভ্রমণকারী আল্লাহপাকের ফিরিস্তামন্ডলী আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌঁছে দেয়। (সুনানু নাসাঈ : খন্ড ১, পৃ. ১৮৯)। (খ) হযরত আওস বিন আওস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হলো জুমআর দিন। এই দিনেই হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনেই তার ওফাত হয়েছে। এই দিনেই শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। সুতরাং তোমরা ওইদিনে বেশি করে আমার ওপর সালাত ও সালাম পাঠ কর। তোমাদের সালাম আমার নিকট উপস্থাপিত হয়।
সাহাবীগন নিবেদন করলেন, আপনার খেদমতে আমাদের সালাম কিরূপে উপস্থাপিত হবে? এমতাবস্থায় যে আপনি মাটিতে মিশে যাবেন? রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, আল্লাহতায়ালা মাটির ওপর নবীদের দেহ ভক্ষণ হারাম রেখেছেন। (সুনানু নাসাঈ : খন্ড ১, পৃ. ২০৪)। (গ) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কবরের পার্শ্বে সালাম সালাত পাঠ করে আমি তা শুনতে পাই। আর যে দূর হতে সালাম জানায়, আমার নিকট তাও পৌঁছে দেয়া হয়। (কানজুল উম্মাল : খন্ড ১, পৃ. ৪৯২)। ইবনু আবি শায়বাহ ও দুরুকুতনীর বর্ণনায় তাই বর্ণিত হয়েছে। সে সনদে কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও উক্ত বিষয়ে একাধিক সনদ বর্ণিত হাদীস শাহেদ হিসেবে পাওয়া যায়। (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াহ : খন্ড ২৭, পৃ. ১১৬)।
রাসূলুল্লাহ (সা.)সহ সকল নবী ও রাসূল ওফাতের পর কবরের জগতেও সে রূপ নবী, যে রূপ পৃথিবীর জগতে নবী ছিলেন। কেননা, নবীর ওফাতের দ্বারা তার নবুওয়াত ও রিসালাত শেষ হয়ে যায় না। এ প্রসঙ্গে (ক) আল মিলাল ওয়ান নিহাল : ২য় খন্ড, ৮৮ পৃ., তাবাকাতুশ শাফিয়িয়্যাহ : ২৬-২৮০ পৃ., এবং রাদ্দুল মুহতার : খন্ড ৩, ৩৩৬ পৃ. বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। (খ) ইমাম আবু হানিফা (রহ.) স্পষ্টতই বলেছেন, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এখনো হাকিকি নবী। (মাসালেকুল উলামা : পৃ. ১০)। (গ) রাসূলুল্লাহ (সা.) ওফাতের পর প্রকৃত অর্থেই স্বীয় নবুওয়াত ও রিসালাতের ওপর স্থিতিশীল আছেন। যেমন মুমিন ব্যক্তি মরণের পরও ঈমানের গুণে গুণান্বিত থাকেন। অর্থাৎ মরণের পরও তাকে মুমিন বলা হয়। নবীর জন্য দেহ ও আত্মার সমষ্টির ওপরই নবুওয়াতের গুণ বাকি থাকে। কেননা, নবীর দেহ ভক্ষণ করতে পারে না। (আর রওযাতুল বাইয়্যাহ : পৃ. ১৫)।
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তারপর আর কোনো নবী ও রাসূলের আগমন ঘটবে না। তার রিসালাত চির ভাস্বর, চির অম্লান। যদিও নবীদের মধ্যে পারস্পরিক মান ও স্তরের ব্যবধান আছে। এক নবী অন্য নবীর ওপর অধিকতর মর্যাদার অধিকারী। সকলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন হযরত মোহাম্মদ (সা.)। তিনি সকল নবী ও রাসূলের শিরোমনি। আল কোরআনে এ বিষয়ে একাধিক ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে : (ক) তারা হলেন রাসূল সম্প্রদায়, তাদের কাউকে আমি কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছি। তাদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন। আর কাউকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ২৫৩)। (খ) সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হলেন হযরত মোহাম্মদ (সা.) যা আল্লাহপাকের নিম্নের বাণী হতে প্রমাণিত হয়।
ইরশাদ হয়েছে : তোরমাই হলে শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানব সম্প্রদায়ের জন্য, তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দিবে এবং অসৎ কাজে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১১০)। (গ) নির্ভরযোগ্য আকিদা হলো, সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন আল্লাহপাকের প্রিয় হাবিব, আমাদের সম্মানিত নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)। কেউ তো এ ব্যাপারে উম্মাতের ঐক্যমত বলে উল্লেখ করেছেন। (নিবরাস : পৃ. ২৮৬)।



 

Show all comments
  • নাবিলা ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:০৫ এএম says : 1
    লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো
    Total Reply(0) Reply
  • নিঝুম ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:০৫ এএম says : 1
    হুজুরকে লেখাটির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • মো: নজরুল ইসলাম ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:১৯ এএম says : 1
    লেখাটি পড়ে ভালকিছু জানতে পারলাম,হুজুরকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফ ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:৫৮ এএম says : 1
    আল্লাহ মাওলানা সাহেবকে ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট এবং এর উত্তম প্রতিধান প্রধান করুন সকলকে অনেক ধন্যবাদ। লেখার শেষ অংশের যে লাইনটা লিখেছেন, "কেউ তো এ ব্যাপারে উম্মাতের ঐক্যমত বলে উল্লেখ করেছেন" কথাটা আসলেই ঠিক, প্রিয় হাবীব (সাঃ) এর উম্মতের ঐক্যমত অবশ্যই আছে। এতে যদি মতঐক্য না থকে সেতো উম্মতের খাতায়ই থাকবেনা, তাদের পরিছয় তো হবে তখন খাওয়ারেজ, মুনাফেক, মুলহেদিন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে তাজেদারে কায়েনাত (সাঃ) এর গোলামি করার এবং তাঁর উম্মত হিসেবে দুনিয়াতে বেছেথাকার ও কবর বাসি হওয়ার তৌফিক প্রধান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazir Ahmed ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৭ পিএম says : 0
    বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তারপর আর কোনো নবী ও রাসূলের আগমন ঘটবে না। তার রিসালাত চির ভাস্বর, চির অম্লান।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আব্দুল কাদির ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ৩:৩২ পিএম says : 0
    মহান আল্লাহতায়ালা যেন লেখকদের কলমে বরকত দান করেন। আরও বেশি করে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মান মর্যাদা লেখার তৌফিক দেন। এবং আমাদেরকে তার আমল করার তৌফিক দেন এবং দয়াল নবীজির উপর বেশি বেশি করে দুরুদ শরীফ পাঠ করার তৌফিক দেন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন
    Total Reply(0) Reply
  • XT PLANTER ৬ নভেম্বর, ২০১৮, ৬:২৭ পিএম says : 0
    3:78 وَإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًا يَلْوُونَ أَلْسِنَتَهُم بِالْكِتَابِ لِتَحْسَبُوهُ مِنَ الْكِتَابِ وَمَا هُوَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ وَيَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ 3:79 مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤْتِيَهُ اللَّهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا عِبَادًا لِّي مِن دُونِ اللَّهِ وَلَٰكِن كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنتُمْ تَدْرُسُونَ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন