Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দেনা-পাওনা ও হক

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

মানুষের সঙ্গে যাবতীয় দেনা-পাওনা ও হক পরিশোধ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অতুলনীয় সুন্নতসমূহের অন্যতম একটি সুন্নত। কোনো মুসলমান প্রকৃত ঈমান এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাঁবেদারির দাবি করতে পারে না, যদি সে লেনদেন ও হক আদায়ে স্বচ্ছ না হয়।
মানুষের সারাজীবন জুড়েই ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সমাজ ও সমষ্টিগত লেনদেন বা দেনা-পাওনার সম্পর্ক বিদ্যমান। জীবনযাপন সংসার সমাজে দেনা-পাওনার বাইরে কেউ থাকে না। যদি কেউ ইচ্ছা করে চাকরি, বাণিজ্য বা ধার-দেনার মতো কোনো কাজে নাও জড়ায়, তবুও তার ওপর উত্তরাধিকারসহ নানা রকম অনিবার্য বিষয় এসেই যাই। সে ক্ষেত্রেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই সুন্নতটির অনুসরণ তার ওপর আবশ্যক। দেনা-পাওনা ও হক পরিশোধের গুরুত্ব এবং এ বিষয়ে শরিয়তের কঠোরতা নিম্নোক্ত হাদিস থেকে স্পষ্ট অনুধাবন করা যায়। হজরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন সকল হকদারের হক অবশ্যই আদায় করে দেয়া হবে। এমনকি শিংবিহীন ছাগলের হক শিংওয়ালা ছাগলের কাছ থেকে আদায় করে দেয়া হবে। -সহিহ মুসলিম
এ হাদিস দ্বারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা যায়, দুনিয়াতে মানুষে মানুষে শুধু নয়, কুল মাখলুকাতের মাঝে বিদ্যমান সকল অন্যায় বৈষম্য ও বে-ইনসাফির সমতা বিধান ও সমাধান আখেরাতের আদালতে হবে। কেউ কারো হক নষ্ট করে দুনিয়াতে পার পেয়ে গেলেও আখেরাতে তাকে অবশ্যই পাকড়াও করা হবে এবং সে হক আদায় করা হবে।
হজরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে এসেছে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার কাছে তার ভাইয়ের হক রয়েছে, তা মান-সম্মানের হোক বা অন্য কিছুর হোক, সে যেন আজই ক্ষমা চেয়ে নেয় (বা পরিশোধ করে মিটমাট করে নেয়)। এমন দিন আসার আগেই, যেদিন কোনো অর্থকড়ি থাকবে না। যদি ব্যক্তির কোনো নেক আমল থাকে তা দিয়ে পাওনাদারের ঋণ বা হক শোধ করা হবে। আর যদি কোনো নেক আমল না থাকে তা হলে পাওনাদারের বা হকদারের পাপের বোঝা সমপরিমাণ তার মাথায় দিয়ে দেয়া হবে।’-সহিহ বুখারী
এই হাদিস নির্দেশ করে হক আদায়ের অনিবার্যতার প্রতি। আমরা অনেক সময় মনে করি, দুনিয়াতে ছোটোখাট দেনা-পাওনা আদায় না করলেও বা করতে না পারলেও তেমন কোনো অসুবিধা নেই। পাওনাদার কয়েকদিন তাগাদা করে পরে একসময় নিজেই ভুলে যাবে বা হাল ছেড়ে দেবে। সত্যিই এমনটিই ঘটে থাকে। কিন্তু দুনিয়াতে শক্তি বা সুযোগের অভাবে পাওনা আদায় করে নিতে না পারলেও আখেরাতের আদালতে সে তার পাওনা ঠিকই চাইবে, এমনকি যদি সে দুনিয়াতেই ক্ষমা করে দিয়ে না থাকে তবে আখেরাতে তুচ্ছাতিতুচ্ছ বা সামান্যতম দেনা-পাওনার দাবিও সে ছাড়বে না।
কারণ, সেখানে লেনদেন অর্থ-সম্পদের বিনিময় করার সুযোগ থাকবে না বলে নেক আমল দিয়ে তা পরিশোধ করতে হবে। আর আখেরাতে নেক আমলের চেয়ে প্রয়োজনীয় আর কিছুই হবে না। সুতরাং দুনিয়াতে অর্থ-সম্পদে বা সম্মানের হক ফেরত না পেলেও আখেরাতে হক আত্মসাৎকারীর কাছ থেকে নেক আমল ছিনিয়ে নিয়ে নিজের আমলের পাল্লা ভারী করার সুযোগ কেউ হাতছাড়া করবে না।
হাদিসে এ কথাও বলা হয়েছে, ঋণখেলাপি বা হক নষ্টকারী ব্যক্তির নেক আমল না থাকলে বা ফুরিয়ে গেলেও তার ছাড় নেই; বরং পাওনাদারের পাপের অংশ তাকে চাপিয়ে দেয়া হবে এবং পাওনাদারকে পাপমুক্ত করা হবে। নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক। কত মর্মান্তিক এই হাদিসের ঘোষণা।



 

Show all comments
  • তমা ৫ নভেম্বর, ২০১৮, ৪:২৭ এএম says : 0
    এই লেখাটির জন্য ইনকিলাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • SOLAIMAN SIDDIQUEE ৫ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:২৮ এএম says : 0
    May Allah help us all runing our life as per Allah's order & Hazrat Mohammad(S)'s guidence, In Sa Allah.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন