Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অলআউট বাংলাদেশ, অভিষেকে ফিফটির আক্ষেপ আরিফুলের

সর্বশেষ ৭ টেস্টে মাত্র একবার প্রথম ইনিংসে দেড়শ পেরিয়েছিল বাংলাদেশ

ইমরান মাহমুদ, সিলেট থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:৪২ পিএম | আপডেট : ৫:১২ পিএম, ৪ নভেম্বর, ২০১৮

অনেকটা অনুমিতই ছিল, শুধু দেখার ছিল সিনিয়রদের বিদায়ে জিম্বাবুয়েকে কতদূর টেনে নিয়ে যান টেল এন্ডাররা। তবে তাদের সোজা হয়ে দাঁড়াতেই দেননি তাইজুল ইসলাম। তার ঘূর্ণির যাদুতে প্রথম দিনের ২৩৬ রানের সঙ্গে আর মাত্র ৪৬ রান যোগ করেই শেষ সফরকারীরা। প্রথম ইনিংসে অলআউট হবার আগে মাসাকাদজার দল তুলতে পেরেছে ২৮২ রান। জিম্বাবুয়েকে গুড়িয়ে দিতে ১০৮ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট নেয়া এই বাঁ-হাতি স্পিনার হাত ঘুরিয়েছেনও সবচেয়ে বেশি, ৩৯.৩ ওভার।

জবাবে শুরু থেকেই বিপর্যয়ে বাংলাদেশ শিবিরও। ৫১ ওভার খেলতেই শেষে হয় বাংলাদেশের ইনিংস। অভিষিক্ত আরিফুল হক অপরাজিত আছেন ৪১ রানে। তাকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে আসা লোকাল বয় আবু জায়েদ রাহি রানের খাতা খেলার আগেই ফেরেন রান আউটের শিকার হয়ে। তার আউটে অভিষেকে ফিফটি করা হলো না আরিফুলের, একপাশ আগলে খেলা ৯৬ বলের ইনিংসটি তিনটি চারে মোড়ানো। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশও থামে ১৪৩ রানে। সর্বশেষ ৭ টেস্টে মাত্র একবার প্রথম ইনিংসে দেড়শ পেরিয়েছিল বাংলাদেশ। লজ্জার সেই রেকর্ড বজায় থাকলো সিলেটের অভিষেক টেস্টেও।

প্রথম ইনিংসের সঙ্গে আর মাত্র এক রান যোগ করতেই শেষ হয় দিনের খেলা। প্রথম ইনিংসে শেষ ওভারে পর পর দুই উইকেট নেয়া তাইজুলের হ্যাটট্রিক সম্ভাবনা থাকলেও সেটি হতে দেননি অভিজ্ঞ হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। এদিন ২ ওভার শেষে খেলা জিম্বাবুয়ের ঝুলিতে ১৪০ রানের লিড, হাতে ১০ উইকেট। এক রান নিয়ে আজ তৃতীয় দিনে ব্যাট করতে নামবেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক, রানের খাতাই খেলা হয়নি সঙ্গী থাকা চাতারর।

মূলত তেন্ডাই চাতারার গতির কাছেই পরাস্ত হয় বাংলাদেশ। এই মিডিয়াম পেসার একাই নেন তিন উইকেট, সিকান্দার রাজও নিয়েছেন ৩ উইকেট। দুটি শিকার কাইল জারভিসের, বাকিটি সিন উইলিয়ামসের। লাঞ্চ থেকে ফিরেই একে একে ফিরে যান লিটন দাস (৯), ইমরুল কায়েস (৫), নাজমুল হোসেন শান্ত (৫) এবং অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (০)।মুশফিক-মুমিনুলে এই বিপর্যয় মেরামতের একটা চেষ্টা করেছিলেন তবে অনেকদিন পর টেস্ট খেলতে নামা মুমিনুলের (১১) বিদায়ে সেটি আরো বাড়ে। সেই শঙ্কট আরো চরমে পৌঁছে মুশফিকের বিদায়ে। ৫টি চারে ৩১ রান করা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে চাকাভার ক্যাচে পরিণত করেন জারভিস।

অভিজ্ঞদের আসা যাওয়ার এই মিছিলের স্রোতে কিছুটা বাধ দেয়ার চেষ্টায় থাকা মিরাজকে নিজের বলেই তালুবন্দী করেন সিন উইলিয়ামস। তার ৩৩ বলে ২১ রানের ইনিংসটি ৩টি চারে সাজানো। একটু পরেই জোড়া আঘাত হানেন সিকান্দার। তাইজুল (৮) ও অপুকে (৪) এই স্পিনার ফেরান ১২ রানের ব্যবধানে।

এই দুঃসময়ে একটি সুসংবাদে স্বতি পেতে পারে বাংলাদেশ, ফলোঅন এড়িয়েছে স্বাগতিকরা। তবে প্রথম ইনিংসে ১৩৯ রানের লিড নিয়েছে জিম্বাবুয়ে।

আগের দিন বাংলাদেশের অষ্টম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু করে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ঐতিহাসিক এই টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার সিরিজের প্রথম টেস্টটি অজ্ঞাত কারণে সাড়ে ৯টার পরিবর্তে আধ ঘন্টা পিছিয়ে শুরু হয় সকাল ১০ টায়।

দেনা পাওনার হিসেব মিটিয়ে বলতে গেলে লড়াইটা হয়েছে সমানে সমানে। প্রথম দিন জিম্বাবুয়ের ৫ উইকেট ফেলতে পেরেছিলো বাংলাদেশ। মাসাকাদজার দলও ইঙ্গিত দিয়েছিলো বড় সংগ্রহের। ৯১ ওভার শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ছিল ২৩৬। তবে সেটিকে খুব একটা আশাজাগানিয়া সংগ্রহে নিয়ে যেতে পারেন নি পিটার মুর, রেগিস চাকাভারা।

মাটি কামড়ানো ২৭৩ মিনিট লড়াই করেও মুর অপরাজিত ছিলেন ৬৩ রানে। কোন ছক্কার পথে না হাঁটা তার ১৯২ বলের ইনিংসটি ৬টি চারে সাজানো। আর আগের দিনের অপরাজিত আরেক ব্যাটসম্যান চাকাভাকে ২৮ রানে ফিরিয়ে শুরু তাইজুলের দ্বিতীয় দিন। 

এরপর একে একে তার শিকারে পরিণত হয়েছেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা (৪), কাইল জারভিস (৪) ও তেন্ডাই চাতারা (২)। অভিষেকেই দুই উইকেট তুলে নিয়েছেন আরকে স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু। একটি করে শিকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও লোকাল বয় আবু জায়েদ রাহির।

ঐতিহাসিক এই টেস্টের প্রথম উইকেটটি নিয়েছেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। জিম্বাবুয়ের দলীয় ৩৫ রানে ব্রায়ান চারিকে (১৩) সরাসরি বোল্ড করেন এই ঘূর্ণির জাদুকর। প্রথম পানি পান থেকে ফিরেই দ্বিতীয় আঘাতটিও হানেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার। এবার তার শিকার ব্রান্ডন টেলর (৬)। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার এই টপ অর্ডার ফেরেন শর্ট লেগে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়ে।

অনেকটা নীচু হয়ে আসা বলটি ঠিকমত তালুতে পুড়তে পেরেছিলেন কি না সেটি জানতে অবশ্য টিভি আম্পায়ারের সহায়তা নিতে হয়েছে দুই ফিল্ড আম্পায়ার কেটলবরো এবং রড টাকারের। তবে শেষ হাসি উঠেছে বাংলাদেশ ফিল্ডারদের মুখেই।

টানা দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা রক্ষণাত্নক খেলতে শুরু করে জিম্বাবুয়ে। মাঝ বিরতি পর্যন্ত আর কোন অঘটন ছাড়াই পার করে সফরকারীরা। তবে লাঞ্চ থেকে ফিরেই জিম্বাবুয়ের শিবিরে আঘাত হানেন ‘লোকাল বয়’ আবু জায়েদ রাহি। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে এলবির ফাঁদে ফেলেন এই পেসার।

তার আগে ৩৭ টেস্টে নিজের ৮ম ফিফটি তুলে নিয়েছেন অভিজ্ঞ এই ওপেনার। ১০৫ বলে তার ৫২ রানের ইনিংসটি ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় মোড়ানো।

এই আনন্দের ঢেউ থামতে না থামতেই বিষাক্ত ছোবলে সফরকারীদের বিপদের ভরসা সিকান্দার রাজাকে ফেরান নাজমুল ইসলাম অপু। তার ঘূর্ণিপাক বুঝতে না পেরে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন বাংলাদেশের গলার কাঁটায় পরিণত হওয়া এই মিডল অর্ডার। তার আগে খেলে যান ১৯ রানের এক ইনিংস।

অনেক ক্ষণ এক পাশ আগলে রাখা বিপদজনক হয়ে ওঠা সিন উইলিয়ামসকে ফেরান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে অধিনায়কের বলের চাইতে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে এই শিকারের হকদার অবশ্যই মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে দারুণ দক্ষতায় তালুবন্দী করেছেন ক্যাচটি। তবে তার ৮৮ রানের ঝলমলে এক ইনিংসে এরই মধ্যে প্রথম ইনিংসে লড়াইয়ের পুঁজি গড়ে নেয় সফরকারীরা। সেঞ্চুরি থেকে ১২ রান আগে ফেরার সময় ১৭৩ বলের ইনিংসটির পাশে জ্বলজ্বলে ৯টি চারের মার।

শনিবার সকালে অভিজাত ক্রিকেটের ঐতিহ্য মেনে ইংল্যান্ডের লর্ডস এবং ভারতের ইডেনের পর সিলেটেও বসানো হয়েছে ‘দ্য ফাইভ মিনিট বেল’। ম্যাচ শুরুর ৫ মিনিট আগে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম অধিনায়ক আকরাম খানের হাত দিয়ে এই বেল বাজিয়ে যাত্রা শুরু হয় সিলেট ভেন্যুর। সঙ্গী হিসেবে ছিলেন ঐ টেস্ট দলের গর্বিত সদস্য পেসার হাসিবুল হোসেন শান্ত। তার অাগে বিশেষ মুদ্রা নিক্ষেপে হয় টেস্টের টস।

ঐতিহাসিক এই টেস্ট দিয়ে সিলেটের সঙ্গে অভিষেক হয়েছে বাংলাদেশের দু’জনের। স্পিন অলরাউন্ডার নামজুল ইসলাম অপুর সঙ্গে প্রথমবারের মত টেস্ট ক্যাপ মাথায় উঠেছে পেস অলরাউন্ডার আরিফুল হকের।

তিন স্পিনার ও এক পেসার নিয়ে খেলতে নেমেছে মাহমুদউল্লার দল। এই টেস্ট দিয়েই প্রায় ৯ মাস পর সাদা পোষাকের ক্রিকেটে ফিরেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। গত বছরের ২০ জানুয়ারি মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান তার একমাত্র টেস্টটি খেলেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে।

বাংলাদেশ একাদশ : লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), আরিফুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম অপু ও আবু জায়েদ রাহি।

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়া জিম্বাবুয়ে দল জয়ের ধারা ফিরতে জিম্বাবুয়ে দলেও হয়েছে দু’জনের অভিষেক। প্রথমবারের মত দলটির হয়ে টেস্ট ক্যাপ মাথায় উঠেছে ডান হাতি স্পিন অলরাউন্ডার ব্রেন্ডন মাভুতা এবং অধিনায়কের আরেক ভাই ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। এই নিয়ে দলটির হয়ে দেশেকে এই পরিবার থেকে নেতৃত্ব দিলেন তিনজন। অপরজন পেসার সিঙ্গি মাসাকাদজা।

জিম্বাবুয়ে একাদশ : হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (অধিনায়ক), ব্রায়ান চারি, ক্রেইগ অরভিন, ব্রেন্ডন টেলর, সিন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজা, পিটার মুর, রেগিস চাকাভা, ব্রেন্ডন মাভুতা, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, কাইল জারভিস ও তেন্ডাই চাতারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ