Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আড়াইহাজারে চার খুনের ক্লু অন্ধকারে

ডিবি পরিচয়ে ধরে নিয়ে গেলেও ঘাতকরা অধরা

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ভোররাতে স্থানীয় লোকজন গুলির আওয়াজ পেলেও চার ব্যক্তিকে মাথার পেছনে শর্টগান ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যার দীর্ঘ ১৪ দিনেও ক্লু খুঁজে পাচ্ছেন না তদন্তে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা। খুনীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেয়ে নিহতদের কার বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা রয়েছে তা নিয়েই বেশি ব্যস্ত পুলিশ। গত ২১ অক্টোবর রোববার ভোরে আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখী এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশ থেকে চারজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে এক রাউন্ড গুলিভর্তি দুটি পিস্তল ও একটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। নিহত চারজনকে ডিবি পরিচয়ে ধরে নিয়ে গেলেও খুনীরা এখনও অধরা।
ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আরএমও মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছিলেন, চারজনেরই মৃত্যু হয়েছে মাথার পেছনে শর্টগানের গুলিতে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলাও দায়ের করেছে। চার খুনের ঘটনার পর ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের একজন অতিরিক্ত ডিআইজিকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত এ কমিটিও নিশ্চিত হতে পারেনি কারা, কেন ও কিভাবে ওই চার জনকে নির্মমভাবে শর্টগান দিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে গেছে।
অথচ নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, হত্যাকান্ডের ২দিন আগে গত ১৯ অক্টোবর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে নিহত মাইক্রোবাস চালক লুৎফর রহমান মোল্লা, বাস চালক ফারুক হোসেন, বেকারি শ্রমিক জহিরুল ইসলাম ও সবুজ সরদারকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে লাশ শনাক্ত করেন স্বজনেরা। নিহত চারজনের মধ্যে ঢাকার লুৎফর ছাড়া বাকি তিনজনেরই বাড়ি পাবনা সদরের আতাইকুলা থানার ধর্মগ্রাম মধ্যপাড়ায়।
উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল এলাকার একটি ব্রিজের নিচ থেকে তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরা হলেন নূর হোসেন বাবু (২৯), তার ভায়রা শিমুল আজাদ (২৬) ও তাদের বন্ধু সোহাগ ভূঁইয়া (৩৪)। ওই তিন জন হত্যাকান্ডে জড়িতরা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। তাদেরকে কারা কি কারনে হত্যা করেছে তাও জানা যায়নি। পুলিশি তদন্তে তিন যুবক হত্যা মামলাও ক্লু লেস।
নারায়নগঞ্জ পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কারা ও কি কারনে ওই চারজনকে হত্যা করেছে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্ত করাসহ সার্বিক বিষয় তদন্ত করতে এরই মধ্যে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। নিহতদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে তাদের স্থানীয় ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নিহত ফারুক হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার বলেন, গত ১৯ অক্টোবর শুক্রবার বিকালে তাদের আড়াইহাজারের পুরিন্দা পশ্চিমপাড়ার বাসায় কয়েকজন লোক এসে দরজায় ধাক্কা দেয়। ফারুক দরজা খুলতেই তাকে মারধর শুরু করে তারা। পরে তাকে হাতকড়া পরিয়ে দেয়া হয় এবং বেঁধে ফেলা হয় চোখ।
তিনি আরো বলেন, আমি বাধা দিতে গেলে বলে তারা ডিবির লোক। আমাকেও মারধর করে। বাসায় গ্রাম থেকে আসা আত্মীয়রা ছিল। ওদেরও ধরে নিয়ে যায়।
তাসলিমা বলেন, যারা এসেছিল, তাদের পরনে ছিল গেঞ্জি আর প্যান্ট। সিলভার কালারের একটি মাইক্রোবাসে চারজনকে তুলে নিয়ে যায় তারা। যাওয়ার সময় ফারুকের মোবাইল ফোনও নিয়ে যায়। আমি পরে আড়াইহাজার থানায় ও রূপগঞ্জ থানায় খোঁজ করেছি। অনেককে বলেছি সহযোগিতা করার জন্য। কিন্তু কেউ খোঁজ দিতে পারেনি।
তাসলিমা আক্তার আরো বলেন, ২০ অক্টোবর শনিবার দুপুরে ফারুকের ফোন থেকে যোগাযোগ করে তাকে জানানো হয়, তার স্বামী আছে ভুলতা পুলিশ ফাঁড়িতে। খবর পেয়ে তিনি ফাঁড়িতে যোগাযোগ করেন। জানতে পারেন, ফারুকের পাশাপাশি নিহত বাকি তিনজনকেও সেখানেই রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে প্রথমে বাধা দেয়। পরে অনেক অনুনয় করে দেখা করার সুযোগ পাই। ওখানে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়। আমি খাবার নিয়ে গেছিলাম, মেঝেতে বসে সেই খাবার খায়। যারা আমার স্বামীরে মারল, চারজন মানুষরে মারল, আমি তাদের শাস্তি চাই। আমি বিচার চাই।
পাঁচরুখী এলাকার বাসিন্দা হামিদুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ২১ অক্টোবর রোববার ভোরে আড়াইহাজারের পাঁচরুখী গ্রামে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যে জায়গায় ফারুক, সবুজ, জহিরুল ও লুৎফরের লাশ পাওয়া যায়, সেখান থেকে ফারুকের বাড়ির দূরত্ব দুই কিলোমিটারের মত। স্থানীয় বাসিন্দারা ভোর রাতে গুলির শব্দ পাওয়ার পর সকালে লাশ দেখে পুলিশে খবর দেন। তিনি বলেন, পুলিশের বাইরে অন্য কোন সংস্থা তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আড়াইহাজার থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করছি। গতকাল পর্যন্ত ওই ৪ জনকে কারা এবং কেন গুলি করে হত্যা করেছে এ ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। হত্যাকান্ডের পর এভাবে কেন লাশগুলো ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে তাও তদন্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দায়ের করেছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিহত চার জন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে এরই মধ্যে তাদের স্থায়ী ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। নিহতদের ব্যক্তিগত তথ্য জানা থাকলে হত্যাকান্ডের মোটিভ সম্পর্কে জানা সহজ হবে বলে শফিকুল ইসলাম মন্তব্য করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিবি

২০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ