বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাটে, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটাই তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তা আস্বাদন করো।’ (আয়াত : ৩৪-৩৫)
আয়াতের শানে নুজুল সম্পর্কে অভিমত হচ্ছে, এটি জাকাতে বাধা প্রদানকারীদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে, যখন আল্লাহ তায়ালা পাদ্রি ও সংসারবিরাগীদের অর্থলিপ্সার কথা উল্লেখ করেন, তখন মুসলমানদেরকে সম্পদ সঞ্চয় করা ও সেটার প্রাপ্য আদায় না করার ক্ষেত্রে সতর্ক করে দিয়েছেন।
লোভ-লালসা একটি মারাত্মক নৈতিক রোগ তথা পাপ। ওরা টাকা-পয়সা বা অর্থের লোভে শরিয়ত এবং আহাকামে এলাহি পর্যন্ত পরিবর্তন করতে দ্বিধাবোধ করত না। কোরআনে বর্ণিত ওই সব ধর্মবিদ, যাদের বলা হতো, সে যুগের মাশায়েখ উলামা, তারা ছিলেন খ্রিষ্ঠান-ইহুদি। সাধারণ লোকদের মধ্যে তারা নিজেদের নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব এবং প্রভুত্ব কায়েম রাখার জন্য ওদেরকে ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে বিপথগামী করত। মুসলমানদেরকে তাদের এ প্রতারণার কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
অর্থলোভী এসব ধর্মগুরু তাদের ধর্মকে কলঙ্কিত করেছে, কিন্তু তাদের অনুসারী লোভীচক্র যুগে যুগে ছিল, এখনো বিশ্বময় ছড়িয়ে রয়েছে। লোভ-লালসা মানুষের সহজাত ও স্বভাবগত দোষ। হুজ্জাতুল ইসলাম হজরত ইমাম গাজ্জালি (রহ.) এ বিষয়ের ওপর কোরআন ও হাদিসের আলোকে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। লোভ-লালসা কিভাবে নিবারণ করা যায় তাও বর্ণনা করেছেন।
লোভ-লালসা সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে :
রাসূলল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি ইবনে আদমের নিকট মাল দ্বারা পরিপূর্ণ দুইটি ময়দান থাকে, তাহলে সে তৃতীয়টি লাভের জন্য লালায়িত হবে এবং ইবনে আদমের পেট মাটিই (কবর) ভর্তি করতে পারে। আর যে তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন।’ (বোখারী ও মুসলিম)। ‘মানুষ বৃদ্ধ হয়ে যায় এবং তার দুইটি খায়েশ (ইচ্ছা) তরুণ থাকে- ধন-দৌলতের প্রাচুর্যের লোভ এবং দীর্ঘায়ুর বাসনা।’ (বোখারী ও মুসলিম)। ‘নিজেকে লোভ-লালসা হতে রক্ষা করো, কেননা এ লোভ-লালসা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ধ্বংস করেছে। তারা পরস্পর খুনাখুনি করে এবং লোভের বশবর্তী হয়ে আত্মীয় সম্পর্কের কথাও চিন্তা করেনি এবং জুলুম কেয়ামত দিবসে অন্ধকারের কারণ হবে।’ (আদাবুল মোফরাদ)
রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, ‘ঈমান এবং লোভ এক অন্তরে জমা হতে পারে না।’ (নাসায়ী)। কেননা কামেল ঈমানের ফল ‘সবর’ (ধৈর্য) ‘তাওয়াক্কুল’ (ভরসা) এবং ‘কানাআত’ (অল্পে তুষ্টি)। পক্ষান্তরে লোভের পরিণতি অস্থিরতা, অধৈর্য এবং কামনা-বাসনা।’ ইমাম গাজ্জালি (রহ.) লোভ-লালসা নিবারণে তিনটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন- ধৈর্য, ইলম এবং আমল। এই বিষয়গুলোর সাথে তিনটি বিষয় যুক্ত হয়ে যায় এবং তা এইভাবে : (১) আমল অর্থাৎ জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা অবলম্বন এবং প্রয়োজনে অধিক খরচ না করা। (২) মানুষের নিকট প্রয়োজন অনুযায়ী সম্বল মজুদ থাকলে ভবিষ্যতের জন্য দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই। (৩) ‘কানাআত’ বা অল্পতুষ্টির উপকারগুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়া। (৪) ইহুদি, নাসারা, নিকৃষ্ট, আহম্মক, অবহেলিত এবং বেদ্বীনদের সুখস্বাচ্ছন্দ্য অবস্থা ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে চিন্তা করা। অতপর আম্বিয়া, আউলিয়া, খোলাফায়ে রাশেদিন এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেইনদের অবস্থা দেখা। (৫) মাল-দৌলত পুঞ্জীভ‚ত করা। বিপদ সম্পর্কে চিন্তা করা। বর্ণিত এ পাঁচটি বিষয়ের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়েছে কোরআন ও হাদিস দ্বারা। হজরত আলী (রা.) তার এক কবিতায় বলেছেন : ‘দুনিয়ার লোভ-লালসা ত্যাগ করো এবং আরাম-আয়াশের প্রতি লালায়ীত হয়ো না। ’শেখ সাদি (রহ.) বলেছেন: ‘লোভীদের ভান্ড পূর্ণ হয় না।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।