বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানুষের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক, জাতীয় এবং রাষ্ট্রীয় প্রভৃতি এমনকি সর্বক্ষেত্রে লোভ-লালসার ছড়াছড়ি এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, এর গতি-প্রকৃতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ কারো নেই। হাজারো কিসিমের অন্যায় ও পাপাচারের উৎস রূপে লোভ-লালসা মানুষকে যে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে, তা বিচার-বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে না।
আরবিতে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে- ‘আল-ইনসানু হারিছুন ফিমা মুনিয়া’, অর্থাৎ নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি মানুষ লালায়িত থাকে। এটি মানুষের একটি মন্দ স্বভাব। সুতরাং এর প্রয়োগ, ব্যবহারও অন্যায়। মন্দ হিসেবে যার পরিচিতি, মানুষের তা অনুসরণ করা অন্যায়। এর মূল উদগাতা হিসেবে যার ভূমিকা সদা সক্রিয়, সে আল্লাহদ্রোহি এবং সমগ্র মানব জাতির শক্র, অভিশপ্ত শয়তান। তার স্বভাব-চরিত্রের অংশ লোভ-লালসা। সুকৌশলে, সুশোভিত এবং অতি সৌন্দর্যমন্ডিত করে মানুষ দ্বারা এ কাজ করাতে তার জুড়ি নেই। মানুষকে নানা লোভ দেখিয়ে অন্যায় পথে পরিচালিত করা, অভাবের ভয় দেখিয়ে গর্হিত কাজে লিপ্ত করা, ধন-দৌলতের প্রতি প্রলুব্ধ করে অন্যায়ভাবে সম্পদের পাহাড় গড়তে উদ্বুদ্ধ করা, মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কলাকৌশল শেখানো, অন্যায়ভাবে পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ, খুন-খারাবি, জোরপূর্বক অন্যের সম্পত্তি দখল, জালিয়াতি, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা ইত্যাদি হেন অপকর্ম নেই যা শয়তানের মস্তিষ্কপ্রসূত নয়। এ সবই লোভ-লালসার অনিবার্য পরিণতি। মানুষ শয়তানের ফাঁদে এমনভাবে পড়ে যায় যে, চিন্তা-ভাবনার শক্তিই সে হারিয়ে ফেলে। ফলে শয়তান-প্ররোচিত লোভ-লালসার শিকার হয়ে কখনো কখনো মহাক্ষতিরও সম্মুখীন হতে হয়। ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু, প্রবাদ সত্যে পরিণত হওয়ার ভুরিভুরি দৃষ্টান্ত রয়েছে। কুখ্যাত ‘কারুনের’ করুণ পরিণতির পেছনে অর্থ-সম্পদ রক্ষার লোভ ছিল প্রধান। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে সে জাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
মানুষের মন্দ স্বভাব চরিত্রগুলোর মধ্যে ‘বুখল’ বা কৃপণতা এবং ‘হাসদ’ বা হিংসা-বিদ্বেষ এবং ‘হিরছ’ (লোভ-লালসা) অন্যতম। হিরছ এ দুটি শব্দের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এগুলো প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র বিষয়, আমাদের আলোচনা এখানে লোভ-লালসা নিয়ে। মানব সমাজে এর ব্যাপক প্রচলন ও ব্যবহার পরিলক্ষিত হলেও এর ধ্বংসাত্মক দিকও বিশেষ গুরুত্ববহ।
সুফিতত্ত¡ অনুযায়ী, মানুষের লোভ-লালসা এবং নফস বা রিপুর আবেদন তাকে গোমরাহ বা বিপদগামী করার জন্য প্রতিদিন ৩৬০ প্রকারের রূপ বদল করে এবং বান্দাকে সঠিক পথ থেকে দূরে সরিয়ে নফসের গোলামিতে লিপ্ত রাখে। বলা হয়েছে, মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত শরিয়ত ও আহকামে এলাহির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এবং সেগুলো মেনে চলবে, নফস তার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। কিন্তু যখন সে লোভ-লালসা, নফসের কামনা-বাসনা এবং আরাম-আয়েশ শুরু করবে এবং সত্যের পথ থেকে দূরে সরে যাবে, তখন তার ওপর শয়তান প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। শয়তানের উৎসাহ-প্রেরণাগুলোকে বলা হয় ‘ওয়াসাভেস’ বা প্ররোচণাসূমহ। রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘জগতে এমন কোনো ব্যক্তি নেই যার ওপর কোনো না কোনো সময় শয়তানের প্রভাব পাওয়া যায়নি এবং তাকে বিপদগামী করেনি। কিন্তু উমর (রা.) ছিলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি শয়তানের ওপর পূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।
সূরা তাওবায় আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘হে মোমেনগণ! পন্ডিত এবং সংসার বিরাগীদের মধ্যে অনেকেই লোকের ধন অন্যায়ভাবে ভোগ করে থাকে এবং লোককে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত করে। আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।