পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে নিঃশর্ত সংলাপে বসতে সম্মত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানান। এরপর রাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি টেলিফোন করেছেন। রাত ৮টার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে তিনি ফোন করেন। এ বিষয়ে মোস্তফা মহসিন মন্টু ইনকিলাবকে বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফোনে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের কতজনের প্রতিনিধি দল অংশ নেবে তিনি জানতে চেয়েছেন। আমি ১৫/২০ জনের প্রতিনিধি দলের কথা বলেছি। সংলাপ কবে কখন হবে তা কি জানিয়েছেন? এর উত্তরে মন্টু বলেন, আমরা মঙ্গলবার প্রতিনিধি দলের তালিকা পাঠাবো এবং বুধবার গণভবনে সংলাপ হতে পারে।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি আপনাদের ও পুরো জাতিকে সারপ্রাইজ দেবো। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিক্রমে একটি সুখবর জানাবো। এ খবরে রাজনীতির মাঠে শান্তির বাতাস বইবে বলে মনে করি। আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে জানিয়ে দিতে চাই আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে সংলাপে বসবে। আর এই সংলাপে আমাদের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় সংলাপের দিন, সময় ও স্থান পরে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন একটি চিঠি দিয়েছেন। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী ও সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেন। অনির্ধারিত এ বৈঠকে আলোচনা শেষে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসবে আওয়ামী লীগ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা কারও চাপের মুখে নতি স্বীকার করিনি। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা কাউকে সংলাপে ডাকিনি। ঐক্যফ্রন্ট নেতারা সংলাপ করতে চান। সংলাপের দরজা সবার জন্য খোলা। আমরা ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে সম্মত। কারণ শেখ হাসিনার দরজা কারও জন্য বন্ধ থাকে না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার দাবিগুলো মানা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়, আলোচনা যখন হবে, আলোচনার রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করুন।
সংলাপের বসার সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল মতিঝিলে টয়োটা বিল্ডিংয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের চেম্বারে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকের মাঝখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ একথা জানান। তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে সংলাপে বসার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংলাপের জন্য আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আনুষ্ঠানিকভাবে যখন আমাদেরকে জানানো হবে কোথায়, কোন সময়ে কোন তারিখে এই আলোচনা হবে। আমরা সেটা জানলে তার সমর্থনে অবশ্যই সাড়া দেবো।
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ইনকিলাবকে বলেন, প্রধনমন্ত্রী সংলাপে বসার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে আমরা স্বাগত জানাই। এর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে সমঝোতার পথ প্রশস্ত হবে।
সংলাপে বসার এ সিদ্ধান্তকে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন, রাজনীতিতে যে কোন সমস্যা বা সঙ্কট আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই হলো গণতান্ত্রিক রীতি। বর্তমানে দেশের যে রাজনৈতিক সঙ্কট তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা আগামী রাজনীতির জন্য অবশ্যই ইতিবাচক।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংলাপে বসার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে স্বাগত জানাই। গণতন্ত্র সংলাপ ছাড়া চলতে পারে না। গণতন্ত্র থাকতে হলে এবং রাখতে হলে সংলাপের কোন বিকল্প নেই। যারা বলেন, কোন সংলাপ হবে না, কোন সংলাপ নয় এটা গণতন্ত্রের ভাষা নয়। এটা রাজতন্ত্রের ভাষা। রাজার শাসন থাকলে কোন সংলাপ চলে না। আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কোন রাজনৈতিক সঙ্কট একমাত্র সংলাপের মাধ্যমেই সুন্দর সমাধান সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংলাপে বসার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা খুবই ইতিবাচক। সংলাপের ফলাফল কী হবে তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে সংলাপ সফল হবে এমনটা প্রত্যাশা করি। এই সংলাপের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে এটাই সবার প্রত্যাশা।
সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এ বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপে বসার যে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন তাকে সাধুবাদ জানাই। এ সিদ্ধান্ত রাজনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আগামী দিনের রাজনীতিতে একটি সুন্দর পরিবর্তন আসবে বলে মনে করি।
উল্লেখ্য, গত রোববার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে অর্থবহ সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেন ড. কামাল হোসেন। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে ড. কামাল হোসেন উল্লেখ করেন, যে সকল মহান আদর্শ ও মূল্যবোধ আমাদের জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে উজ্জীবিত ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছিল তার অন্যতম হচ্ছে ‘গণতন্ত্র’। গণতন্ত্রের প্রথম শর্তই হচ্ছে আবধ, সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের পক্ষে জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে এবং জনগণকে শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন ও শাসনকার্য পরিচালনা করবে এটাই আমাদের সাংবিধানিক অঙ্গিকার।
ইতিবাচক রাজনীতি একটা জাতিকে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করে জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকারসমূহ আদায়ের মূল শক্তিতে পরিণত করে তা বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন। নেতিবাচক রুগ্ন রাজনীতি কীভাবে আমাদের জাতিকে বিভক্ত ও মহা সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে তাও আমাদের অজানা নয়। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটানো আজ আমাদের জাতীয় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। একটি শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সকলের অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আওয়ামী লীগের সাথে একটি অর্থবহ সংলাপের তাগিদ অনুভব করছে এবং সে লক্ষ্যে আপনার কার্যকর উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।