পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সর্বস্তরের জনতার জাগরণের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো চট্টগ্রামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা। শনিবার বন্দরনগরীর প্রাণকেন্দ্র কাজীর দেউড়ী নূর আহম্মদ সড়ক নাসিমন ভবন চত্বর থেকে এ জনসভার আওয়াজ এবং রেশ এখন বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল (রোববার) এখানে সেখানে নানা শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষের মুখে আলাপে-আড্ডায় ঘুরেফিরে উঠে আসে এতো শত বাধা-বিপত্তির মুখে কীভাবে পঙ্গপালের মতো জনতার ঢল নেমেছিল! গণতন্ত্রকামী, রাজনীতি, ভোটাধিকার, মৌলিক মানবাধিকার নিয়ে সচেতন চাটগাঁবাসী বিশাল এ জনসভা থেকে স্পষ্টভাষায় যে বার্তাটি দিয়েছে তা হলো- “আমার ভোট আমি দেবো, নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে দেবো, যাকে খুশী তাকে দেবো, ভোটটি দিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরবো”।
মগ-ফিরিঙ্গি দস্যু, ব্রিটিশ বেনিয়াসহ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করতে স্বাধিকারের আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার চট্টগ্রাম। ১৯৪৮ থেকে ’৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে যুগে যুগে আন্দোলন সংগ্রাম রাজনীতিতে চট্টগ্রামেই ছিল সম্মুখপানে এবং অগ্রণী ভূমিকায়। এই প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামকে বলা হয় ‘বীর চট্টলা’, ‘বীর প্রসবিনী চট্টলা’, ‘চাটগাঁর মাটি দুর্জয় ঘাঁটি’। আর এরজন্যই সমগ্র চট্টগ্রামের জনগণ তুলনামূলক বেশীই রাজনীতি সচেতন।
সেই সঙ্গে বহুকাল যাবত চট্টগ্রামের একটি প্রবাদতূল্য বাক্য ব্যাপকভাবে প্রচলিত রয়েছে ‘চাটগাঁইয়া পোয়া মেডিত পইল্লে লোয়া’ (অর্থাৎ ‘চট্টগ্রামের সন্তানরা মাটিতে ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথেই লোহায় পরিণত হয়’)। গত শনিবার নাসিমন ভবন চত্বরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক সেই পুরনো প্রবাদের কথাটাই চট্টগ্রামসহ দেশবাসীকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিন বার উচ্চারণ করেন, ‘চাটগাঁইয়া পোয়া মেডিত পইল্লে লোয়া!’ তখন জনসভাস্থল তুমুল করতালিতে মুখরিত হয়। তিনিও চট্টগ্রামেরই আরেক কৃতী সন্তান। নাসিমন ভবনের জনসভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ একে একে বক্তব্য রেখে গেছেন। চট্টগ্রামবামী তাদের দৃঢ় অবিচল অঙ্গীকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করতে দেখা গেছে। গতকাল চট্টগ্রামের পাড়া-মহল্লায়, অফিস পাড়ায়, ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্রে সর্বত্রই এ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলেছে। সবার কথা-বার্তায় মোদ্দা কথাটা হলো আগামীতে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত হওয়া জরুরি। অন্যথায় আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত অন্ধকারের দিকেই ধাবিত হতে থাকবে। আর সুষ্ঠু ও ‘খাঁটি’ নির্বাচন সম্ভব একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সেই সাথে নির্বাচন কমিশনকেও (ইসি) ঢেলে সাজাতে হবে। এরজন্য একটি সমঝোতা ও সংলাপের পরিবেশ অবিলম্বে তৈরি হওয়া দরকার। নিছক একগুঁয়েমির বশে নির্বাচনের পরিবেশকে নস্যাৎ করা কারো কাম্য হতে পারে না।
শনিবার চট্টগ্রামে জনসভার প্রধান অতিথি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, প্রধান বক্তা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পঙ্গু বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্য়বাক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ কেন্দ্রীয় শীর্ষ এবং চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য এখন চট্টগ্রামের সবখানে ছড়িয়ে গেছে। জনসভায় নিজেদের মধ্যে ঐক্য জোরদারের তাগিদ দিতে গিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলে গেছেন, ঐক্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা এবং মিথ্যাচার করা হচ্ছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমাদের দলগত কিংবা মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে। তবে মূল লক্ষ্যে আমরা সবাই এক। তা হলো দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। যেটি সকলেরই কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
নাসিমন ভবন চত্বরে জনসভার গণজোয়ার থেকে এখন দ্বিগুণ উৎসাহ-উদ্দীপনা পেয়েছেন বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডিসহ ২০ দলীয় জোট এবং তাদের সমর্থকারী বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। এরফলে নতুন এই জাতীয় ঐক্যজোট ঢাকার বাইরে সিলেটের পর চট্টগ্রামের জনসভা সম্পন্ন করার মধ্যদিয়ে কর্মী-সমর্থকরা হয়ে উঠেছেন দারুন উজ্জবিত। মনোবল হয়ে উঠেছে দৃঢ়। খুঁজে পেয়েছে আন্দোলন আর নির্বাচনমুখী রাজনীতির দিক-নির্দেশনা। এসব বিষয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বক্তব্য থেকেই পরিস্ফুট হয়ে উঠছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।