পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শত রকমের বাধা-বিপত্তির পাহাড় ঠেলে অবশেষে চট্টগ্রামবাসী বাঁধভাঙা জোয়ারে গর্জে উঠলো। চারিদেকে মানুষ আর মানুষ। মীরসরাই থেকে আসা ৮৪ বছরের বৃদ্ধ মোঃ নাজিম উদ্দিন, চকরিয়ার দিনমজুর ছালেহ আহমদ, হাটহাজারীর প্রতিবন্ধী মহিলা নূর বেগম, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জাফরসহ সকল শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন। সকল সড়ক রাস্তাঘাট যেন নদী হয়েই মিশে গেল বঙ্গোপসাগর মোহনায়।
আর সেই মোহনার নাম বন্দরনগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কাজীর দেউড়ী নূর আহম্মদ সড়কের নাসিমন ভবন চত্বর। বাংলাদেশে আগামীতে অবাধ, সুষ্ঠু, দল-নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের শপথে বলীয়ান শীর্ষ জাতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমর্থন জানিয়ে স্লোগানে স্লোগানে তারা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো গর্জে উঠেছেন। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!
গতকাল (শনিবার) জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভামুখী জন স্রোতের ঢেউ দুপুরের আগেই একের পর এক আসতে থাকে। খন্ড খন্ড মিছিলের ঢেউ এবং মিছিল ছাড়াও সভামুখী লোকজনকে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পথে পথে আটকে দেয় নগরী, শহরতলী ও জেলার অন্তত ৫০টি স্থানে। আবার জনসভাস্থলের ফুটপাত ও সড়কের এক পাশে জমায়েত আটকে দিয়ে ‘কৌশল’ করেই আরেক পাশে যানবাহন চলাচল করার ব্যবস্থা নেয়। ওপাশে কোনো মানুষকে দাঁড়াতে পর্যন্ত দেয়া হয়নি। হ্যান্ড মাইকে পুলিশের ঘন ঘন ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল যাতে সড়ক ও ফুটপাতে কেউ না দাঁড়ায়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট লালদীঘি ময়দানে জনসভার অনুমতি চেয়েও পাননি। শুক্রবার শেষ মুহূর্তে অনুমতি মিলে নাসিমন ভবন চত্বরের সড়কে। তাও আবার অর্ধেকটায়। সেখানে প্রায় ৫/৬ ঘণ্টা তীব্র ভিড়ের মধ্যে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে দাঁড়িয়েই থাকতে হয় জনতাকে। তাছাড়া জনসভায় অল্প সংখ্যকই মাইক লাগানোর অনুমতি দেয়া হয়। সেই সঙ্গে ২৫টি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। জাতীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের নগরীর তারকা হোটেল-ক্লাবের বুকিং বাতিল করা হয়। তারা উঠেন সাধারণ মানের হোটেলে কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িঘরে। গত সপ্তাহখানেক ধরে চট্টগ্রামে তল্লাশি, ধর-পাকড়, হয়রানি বৃদ্ধি করা হয়। একটি চাপা ভীতিকর অবস্থা তৈরি করা হয়। গতকাল দিনভর নগরীতে শুধু সভাস্থলের আশপাশ ঘেঁষে পুলিশের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। চট্টগ্রামে ঐক্যফ্রন্টের জনসভাকে কেন্দ্র করে পুরো বিষয়গুলোতে পুলিশের আগাগোড়া নজিরবিহীন ন্যাক্কারজনক ভূমিকায় ঐক্যফ্রন্ট নেতা-কর্মী, সমর্থকরাই শুধু নন; সমালোচনা করছেন সচেতন চাটগাঁবাসী। অথচ শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশেই সম্পন্ন হলো চট্টগ্রামের এই জনসভা।
তবে বাধা-প্রতিবন্ধকতা, উসকানি সত্তে¡ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রান্ত হতে দুপুরেই খন্ড খন্ড মিছিল আসতে থাকে জনসভাস্থলের দিকে। মিছিলকারীদের হাতে ছিল ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন। মুখে ছিল বিভিন্ন স্লোগান অধিকাংশ ব্যানার-পোস্টারে দেখা গেছে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং অনেক নেতার মুক্তির দাবি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তৃণমূল কর্মীদের মাঝে পরিলক্ষিত হয় প্রতিবাদী জাগরণ। স্লোগানে উচ্চকিত হয়েই উঠে আসে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবির আওয়াজ।
নাসিমন ভবন সংলগ্ন নূর আহম্মদ সড়ক দুপুরে কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায়। এরপর থেকে কাজীর দেউড়ী মোড়, ভিআইপি টাওয়ার, আলমাস মোড় অতিক্রম করে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ-ওয়াসা মোড়, আরেকদিকে নেভাল এভেনিউ, লাভ লেইন-জুবিলি রোড-এনায়েত বাজার-তিনপুল মোড় পর্যন্ত পরিণত হয় জনসমুদ্রে। জনসভামুখী অনেক মানুষকে আশপাশের রাস্তাঘাট অলিগলির দিকে তাড়িয়ে দেয় পুলিশ। তা তত্তে¡ও নগরীর এই কেন্দ্রস্থলের বাড়িঘর বিশেষ করে উঁচু ভবন, মার্কেটগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ জনসভার জন স্রোতের দৃশ্য অবলোকন এবং শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য শুনতে দেখা গেছে। অনেককে দেখা যায় স্মার্টফোনে লাইভ জনসভা দূরে অবস্থানরত কৌতূহলী মানুষজনকে দেখাতে। সবকিছু মিলে লাখো জনতা শামিল হন চট্টগ্রামের এ জনসভার সঙ্গে।
জনসভার প্রধান অতিথি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতমম শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, প্রধান বক্তা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পঙ্গু বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, মীর্জা আব্বাস, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য সভাস্থলের জনতা গভীর মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেন। মুহুর্মুহু করতালি আর স্লোগানে জনসভাস্থল হয় প্রকম্পিত।
কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে শত শত বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম ও রাজনীতিতে চট্টগ্রামবাসীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তারা দেশের জনগণের ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় চট্টগ্রাম থেকে তীব্র থেকে তীব্রতর আন্দোলনের প্রত্যয় ঘোষণা করেন।
নাসিমন ভবন চত্বরে সুপরিসর ফুটপাত জুড়ে ঐক্যফ্রন্টের জনসভার মঞ্চটি তৈরি করা হয় ২৫ ফুট বাই ২০ ফুট সাইজের। উচ্চতা ৬ ফুট, নিচের ঢালুর দিকে ৮ ফুট। তবে চট্টগ্রামের নেতারা জানান, ৪০ ফুট বাই ২২ ফুট সাইজে মঞ্চ করতে গেলে পুলিশ মূল সড়কের দিকে তা বাড়ানো যাবে না এই অজুহাতে বাধা দেয়। ফলে সীমিত করা হয় মঞ্চের সাইজ। বিএনপি চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, গতরাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘরে পুলিশি তল্লাশির মাধ্যমে ভয়-আতঙ্ক তৈরি, গায়েবী মামলা, ধর-পাকড় ও নানা হয়রানি সত্তে¡ও জনসভায় লাখো জনতার ঢল নেমেছে।
গতকাল সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছার পর ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতৃবৃন্দ হযরত শাহ আমানতের (রহঃ) মাজার জিয়ারত করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।