পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কিছু ধারা শুধুমাত্র সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা তৈরী করবেনা। দেশের সকল নাগরিকদের জন্যই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ ক্রেডিট নিবে আবার ডিজিটালকে চেপে ধরবে এটা হতে পারে না। সরকার চাইলে এই অধিবেশনেই ডিজিটাল আইন সংশোধন করতে পারে। তারা আরো বলেন, কোন সংস্থাকে যদি অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয় এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়না তখন সেটি অবশ্যই কালো আইন। আইনটি নিয়ে কম বেশি সকল মহলই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এমনটি অভিমত দিয়েছেন দেশের সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজ্ঞরা।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে মুক্ত গণমাধ্যম: প্রেক্ষিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) এই বৈঠকের আয়োজন করে। এতে অংশ নেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক পরিষদের সদস্য দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের হিউম্যান রাইটস এন্ড লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান বাদল প্রমুখ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান।
ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, সকলেই যদি মনে করি আইনটি সবার স্বার্থে এবং জনগণের স্বার্থে হয়নি, তবে আইনটি অবশ্যই সংশোধন করা যাবে। আইনটি কোন বাইবেল নয় যে সংশোধন বা বাতিল করা যাবেনা। প্রধানমন্ত্রী যদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন তবে অবশ্যই বাস্তাবায়ন করবেন। আমি মনে করি ডিজিটাল বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও এ আইন করছে সরকার।
জয়নুল আবেদীন, সম্প্রতি ডিজিটাল সিকিউরিট আইন পাশ করা হয়েছে। আমরা দেখেছি কোন আইন করার আগে কোন সুপারিশ থাকে। অথচ এই আইন করার আগে কোন আইন কমিশনের কোন সুপারিশ ছিলো কিনা তা কিন্তু আমাদের জানা নেই। বিশেষ ক্ষমতা আইনের থেকেই এটি ভয়ানক আইন। তাই শুধু সাংবাদিক নয় এই আইনের প্রয়োগের আগেই আমরা সকলেই আইনটি নিয়ে কথা বলি। এই আইনের অবশ্যই সংশোধনী হওয়া দরকার। আওয়ামী লীগ বলছে আগামীতে নির্বাচনের আসলে এই আইনের সংধোধন করা হবে। তাহলে এখন করতে সমস্যা কোথায়। আমি মনে করি শুধু মাত্র বিরোধী জোটকে দমন করার জন্য এই আইন করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজদেরকে রক্ষা করার জন্য এই আইন। এটা দেশের জন্য ক্ষতিকর। কারণ গণমাধ্যম দুর্নীতি নিয়ে এখন অনুসন্ধান রিপোট করতে পারবে না।
শ্যামল দত্ত বলেন, আমাদের সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে সরকারের তৃতীয় একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেখা গেল বৈঠকটি হওয়ার আগেই আইনটি পাস হয়ে গেল। এতে আমাদের উদ্বেগের কারণ রয়ে গেছে। এ আইনে আমরা মাত্র ৯টি ধারার বিষয়ে আপত্তি দিয়েছি। আমরা কিন্তু পুরো আইনকে প্রত্যাখ্যান করিনি। আমরা শুধু বলেছি এই ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এ আইনটি শুধুমাত্র গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য ক্ষতিকারক নয়। এটা আরও ব্যাপক। আমরা সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। আস্থা রেখেই আমরা একটি সমাধানের পৌঁছাতে পারবো। আমরা রাস্তায় প্রতিবাদও করবো, সরকারের সঙ্গে আলোচনাও চালিয়ে যাব। আমরা এ প্রতিবাদে সারাদেশের মানুষকেও সম্পৃক্ত করতে চাই।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এটা কি ডিজিটাল অ্যাক্ট; না ক্ষমতাসীনদের অ্যাক্ট নাকি দুনীর্তিবাজদের রক্ষা করা অ্যাক্ট বুঝে আসে না। এই আইনে স্বাধীন সাংবাদিকতা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, এই আইনের অপরাধের সংজ্ঞায় অস্পষ্টতা আছে, যার ইচ্ছামত ব্যাখা ও অপ্রপ্রয়োগ করা সম্ভব। এই আইনে গুজব, ভাবমূর্তি, মূল্যবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ-শব্দগুলো রাখা হয়েছে। এগুলো নিয়ে সংজ্ঞা আসেনি। এই আইনের দ্বারা কোন সংস্থাকে যদি অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয় এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়না তখন সেটি অবশ্যই কালো আইন। এই আইনের অধীনে পুলিশের ক্ষেত্রে তল্লাশী, জব্দ, গ্রহে প্রবেশ, গ্রেফতার সহ বেশ কিছু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। পুলিশকে অবাধ দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতাও আইনটির বিধানে তুলে ধরা হয়েছে। তাই এ আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব। এটি শুধু আইনজীবী, সাংবাদিকের সমস্যা নয়, এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সকল নাগরিকের দায়িত্ব।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ন্যায় সঙ্গতভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। টানাহেচরা, গালিগালাজ করে আইনটি ব্যবহার হচ্ছে। তাই আনটির ধারাগুলো সংশোধন প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, অতীতে দেখেছি সরকার কোন আইন করার সময় অ্যাটর্নি অফিস এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেন। একই কোন বিষয় সংশোধন করার প্রয়োজন হলে সেটাও দেন। কিন্তু এখন এইসব বিষয় নেই কেন? । তিনি তো কোন দলে অ্যাটর্নি নয়, তিনি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল। কিছু দিন আগে একটি বিষয় নিয়ে নারী সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলেন কিন্তু এই আইন নিয়ে কোন কথা নেই। শাবান মাহমুদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তথ্য, আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে আইনমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছিলেন আমাদের এই উদ্বেগের জায়গাগুলোয় সংশোধনী আনা হবে এবং আইনটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে সংশোধনী হবে কিন্তু সেক্ষেত্রে আইনমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। এই একটি জায়গায় আমাদের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা আরও ঘণিভূত হয়েছে। এই আইনটি পাশ করার মাধ্যমে সরকার নিজেদের স্বৈরাচারী সরকার বলে পরিচয় দেবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের দ্বারা ৫৭ ধারা যে বাতিল হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। ৫৭ ধারাটি থেকে যাচ্ছে। আইনটির ৫(৩) ধারাতে নিরাপত্তার জন্য গঠিতএজেন্সির কার্যক্রম বিধি দ্বারা পরিচালিত হওয়ার করা বলা হয়েছে। এর ফলে সরকার যখন যাকে মনে করবে তাকে ধরতে নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করতে পারবে। ২৮ ধারায় কোন ওয়েবসাইট বা কোন মাধ্যমে কেউ কোন বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে কিছু প্রচার করে ফেললে সেটি এ আইনের মধ্যে যাবে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে। এর ধারার দ্বারা ৫৭ ধারার প্রতিফলন ঘটেছে। এছাড়াও আইনটির ২৩, ২৯ ও ৪৩ ধারা দ্বারা সাধারণ জনগণও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ল’রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি সাঈদ আহমেদ খানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক হাসান জাবেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফোরামের সিনিয়র সদস্যরাও আলোচনা অংশ নেন।।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।