Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মু’জিযার মর্ম কথা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

প্রকৃতপক্ষে আম্বিয়ায়ে কেরামের মু’জিযা হলো সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম, কল্যাণ ও সৌভাগ্যের দিকে আহ্বানকারী। ইহা নবুওতের দাবির সাথে সম্পৃক্ত। যার দ্বারা ওই ব্যক্তির সত্যতা প্রকাশ করা উদ্দেশ্য, যিনি আল্লাহপাকের রাসূল বা নবী হওয়ার দাবি করেন। (কিতাবুত তা’রিফাত লিল জুরজ্বানী : পৃ. ১৭৬)।
মহান রাব্বুল আলামিন জনগণ যেন ভ্রান্তিতে না পড়ে সে লক্ষ্যে কোনো মিথ্যা নবী দাবিদারকে বা ভন্ড নবীকে মু’জিযাহ নেয়ামত দান করেননি এবং এই শ্রেণির লোকদের কোনো ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হতে দেননি। হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. ভন্ড নবীদেরকে সমূলে ধ্বংস করে ছিলেন। ভারতবর্ষে ইংরেজদের লালিত পামর ভন্ড নবীদাবিদার মির্যা কাদিয়ানির কোনো ভবিষ্যদ্বাণীও সত্যে পরিণত হয়নি বরং বাস্তবতা সর্বদাই তার বিপরীত ছিল। মুহাক্কিক ওলামাগণ এ ব্যাপারে একমত যে, মিথ্যা নবুওয়াতের দাবিদার ব্যক্তির হাতে মু’জিযাহ প্রকাশ পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, মু’জিযার উদ্দেশ্য হলো নবুওয়াতের দাবিকে অকাট্যভাবে সত্যায়ন করা। সুতরাং ভন্ড নবীর দ্বারা মু’জিযা প্রকাশ পেলে রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে, সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদীর মধ্যে পার্থক্য বলে কিছুই থাকবে না। (নিবরাস : পৃ. ২৭২-২৭৩)।
প্রকৃতপক্ষে মু’জিযাহ কোনো নবী ও রাসূলের এখতিয়ারে থাকে না। ইহা যখন ইচ্ছা তখনই প্রদর্শন করা সম্ভব নয়। বরং তা সম্পূর্ণই আল্লাহপাকের ইচ্ছাধীন। আল্লাহর যখন ইচ্ছা তিনি তখন তা প্রদর্শন ও নবীর মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন। এতে সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে, মু’জিযা বা অলৌকিক কর্মকান্ড প্রকাশকারী হচ্ছেন আল্লাহতায়ালা। কেননা, সক্ষমতা ও অক্ষমতা সৃষ্টিকারী তিনিই। সুতরাং সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম সংঘটিত কাজকে রূপক অর্থে মু’জিযা বলা হয়। এর হাকিকি বা প্রকৃত অর্থ হলো, এটি আল্লাহর কর্ম, যা নবীর হাতে প্রকাশ করে থাকেন। তবে মু’জিযা কর্মটি বান্দাহর অন্যান্য কর্মের স্রষ্টা হলেন আল্লাহ। আর বান্দাহ হলো কাসিব বা কর্ম-সম্পাদনকারী। পক্ষান্তরে মু’জিযার সৃষ্টি ও সম্পাদন উভয়টিই আল্লাহর। (মাদারিজুন নবুওয়াত : খন্ড ২, পৃ. ১১৬)। কখনো কখনো এমনো দেখা গেছে যে, আল্লাহপাক নবীর দ্বারা হুবহু কাফিরদের দাবি অনুযায়ী মু’জিযাহ প্রদর্শন করেছেন। তবে কাফিরগণ ঝুটধর্মী ও জিদের বশবর্তী হয়ে কোনো মু’জিযাহ দাবি করলে আল্লাহপাক তা পূর্ণ করেননি। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) হে আমার সম্প্রদায়, এটি আল্লাহর উটনি। এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। সুতরাং তোমরা তাকে অবকাশ দাও। (সূরা হুদ : আয়াত ৬৪)। আরো ইরশাদ হয়েছে, তারা (কাফিরগণ) বলে, আমরা তোমাকে কখনো বিশ্বাস করব না। তবে হ্যাঁ, যদি আমাদের জন্য ভ‚মি হতে একটি সুন্দর ঝরনা প্রবাহিত করে দিতে পারো, অথবা তোমার খেজুর ও অঙ্গুরের একটি বাগান থেকে আর তার মধ্য দিয়ে সুদৃশ্য নহরসমূহ প্রবাহিত করে দাও, অথবা তুমি যেমন বলে থাকো তেমনিভাবে যদি আমাদের ওপর আকাশ খন্ড-বিখন্ড করে ফেলে দাও, অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতামন্ডলীকে আমাদের সামনে নিয়ে আসো, অথবা তোমার জন্য সোনার তৈরি একটি গৃহ হোক, (তাহলে তোমার কথায় বিশ্বাস করতে পারি)। অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে, কিন্তু আমরা তোমার আকাশে আরোহণকে আদৌ বিশ্বাস করব না যে পর্যন্ত না আমাদের প্রতি একটি গ্রন্থ অবতীর্ণ করবে, যা আমরা পাঠ করব। তাদের এতসব দাবির উত্তরে সংক্ষেপে বলে দাও, আমার পরওয়ারদিগার পবিত্র, মহান। মূলত: আমি একজন মানুষ রাসূল বৈ কিছুই নই। (সূরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৯০-৯৪)।
নূর নবী হজরত মোহাম্মদ সা. সর্বশেষ নবী। তারপর কিয়ামত পর্যন্ত কোনো নবীর আগমনে ঘটবে না। তবে রাসূলুল্লাহ সা. এর পরে কোনো ভন্ড মিথ্যা নবুওয়াতের দাবিদার ব্যক্তির নিকট যদি কেও মু’জিযাহ দাবি করে, সেও ইসলামের গন্ডি হতে বের হয়ে যাবে। কেন না, এই দাবি খতমে নবুওয়াতের আকিদায় সন্দেহ করার নামান্তর মাত্র। পক্ষান্তরে খতমে নবুওয়াতের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রেখে শুধুমাত্র ভন্ডের ভন্ডামি প্রকাশ করার জন্য মু’জিযাহ দাবি করলে, তা কুফর হবে না। হজরত ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জমানায় এক ব্যক্তি নবী হওয়ার দাবি করে বসেছিল। সে বলল, আমাকে অবকাশ দাও, আমি আমার দাবির সপক্ষে দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করি। ইমাম আবু হানিফা রহ. বললেন, তোমার নিকট কোনো প্রমাণ চাই না। যে তোমার নিকট প্রমাণ দাবি করবে, সে তো কুফুরি করবে। কেননা, নবী করিম সা. বলেছেন, ‘আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না।’



 

Show all comments
  • মানিক ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:৪৪ এএম says : 0
    বিষয়টি দলীল সহকারে উপস্থাপন করার জন্য লেখক ও ইনকিলাবকে ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • সফিক আহমেদ ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:৪৪ এএম says : 0
    ধরাবাহিক এই কলামটি আমাদের ইসলামী জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করছে
    Total Reply(0) Reply
  • নিঝুম ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:৪৫ এএম says : 0
    এরকম লেখা নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন