Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ডিজিটাল নম্বর প্লেটেও দুর্ভোগে কুমিল্লার গাড়ির মালিকরা

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১:০২ এএম

সড়ক ও মহাসড়কে কুমিল্লায় চলাচলরত প্রায় ৪০ হাজার গাড়ির মালিক ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগালেও সুফল পাচ্ছেনা কোন গাড়ির মালিক। এ অবস্থায় ডিজিটাল নম্বর প্লেট বাবদ কুমিল্লা বিআরটিএ ক’য়েক কোটি টাকা আদায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কুমিল্লার একাধিক গাড়ির মালিক।
কুমিল্লার সালাউদ্দিন সুমন পেশায় একজন ব্যবসায়ী, তার গাড়িটি চুরি যাওয়ার পর দৈনিক ইনকিলাবের কাছে বর্ণনা করছিলেন নিজের অভিযোগ। ডিজিটাল গাড়ির নাম্বার প্লেট নিলাম সুবিধা পাওয়ার জন্য। এখন সুবিধাতো কিছুই পেলাম না। চুরি যাওয়া গাড়ির সর্বশেষ অবস্থান দ্রু ত সনাক্ত করতে থানায় জিডি করি। জিডির কপি নিয়ে কুমিল্লা বিআরটিএ অফিসে যোগাযোগ করলে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, চুরি যাওয়া গাড়ির অবস্থান সনাক্ত করার মত কোন সফট ওয়্যার আমাদের কুমিল্লা অফিসে এখনো আসেনি। তবে সফট ওয়্যারটিতে ত্রু টি থাকায় পরিপূর্ণভাবে কাজ না করায় কুমিল্লায় এখন এর কার্যক্রম শুরু হয়নি উল্লেখ করে কুমিল্লা বিআরটিএ বলছে শিগগিরই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান। অথচ সড়কে নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে বিআরটিএ ২০১২ সাল থেকে গাড়িতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট ও আরএফআইডি স্টিকার লাগানো শুরু করে। অথচ গত ৭ বছরেও এর কোন সুফল মেলেনি। এরই মধ্যে ডিজিটাল নম্বর প্লেট বাবদ কুমিল্লায় প্রায় ৪০ হাজার গাড়ির মালিকের পকেট থেকে বেরিয়ে গেছে কোটি কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও জবাবদিহিতা না থাকায় এ প্রকল্প সফলতার মুখ দেখেনি। ডিজিটাল নম্বর প্লেট সংযোজনের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হলেও তা যে হয়নি কুমিল্লার সালাউদ্দিন সুমনের অভিজ্ঞতাই তা বলে দেয়। গাড়ি চুরিরোধ অথবা চুরি গেলেও দ্রুত খুঁজে বের করাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করে ডিজিটাল নম্বর প্লেট ও আরএফআইডি স্টিকার বিতরণ শুরু হয়। নম্বর প্লেট ও স্টিকার বাবদ বাহন অনুযায়ী ৪৬২৮ ও ২২৬০ টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করে কুমিল্লা বিআরটিএ। এ অবস্থায় ডিজিটাল নম্বর প্লেট বাবদ প্রায় ৫ হাজার টাকা করে আদায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কুমিল্লার একাধিক গাড়ির মালিক।
আলমগীর স্বপন পেশায় একজন চাকুরীজীবি। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গাড়িতে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট লাগিয়েছি। তাতে আমরা কোনো সুবিধা পাই না। রেজিষ্ট্রেশন বাবদ প্রচুর টাকা নিচ্ছে। কিন্তু এত টাকা দিয়ে আমরা এর কোনো ফলাফল পাই না। এ বিষয়ে কুমিল্লা ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের সঙ্গে এর কোন সংযুক্তি না থাকায় গাড়ি চুরি প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করে দৈনিক ইনকিলাবের কাছে কুমিল্লা ট্রাফিক কন্ট্রোল বিভাগের কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, এ সিস্টেমটা আমাদের কাছে এখনও আসেনি। কুমিল্লা বিআরটি অফিসের হিসাবে, গত অক্টোবর পর্যন্ত কুমিল্লায় নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। এর মধ্যে ৩৫ হাজার ৩০৩ টি গাড়ির রেট্রো-রিফ্লেক্টিং নাম্বার প্লেট তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। আর ২৬ হাজার ১০৯টি গাড়িতে তা সংযোজন সম্পন্ন হয়েছে। জানা গেছে, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাসসহ বড় সব ধরনের গাড়ির জন্য রেট্রো-রিফ্লেক্টিং নম্বর প্লেট ও আরএফআইডি ট্যাগ বাবদ নেয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৬৫২ টাকা। সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের জন্য এ ফি ১ হাজার ৮০৫ টাকা। মোটরযান ভেদে তিন রঙের নম্বর প্লেট চালু করেছে বিআরটিএ। ভাড়ায় চালিত বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সিক্যাব ও সিএনজি অটোরিকশার জন্য সবুজ রঙের নম্বর প্লেট, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক মোটরযানের জন্য সাদা রঙের এবং কূটনৈতিক ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য হলুদ রঙের নম্বর প্লেট। তবে প্রতিটির ওপরই মোটরযানের নম্বর লেখা থাকে বাংলা অক্ষরে ও কালো রংয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যানবাহনে নতুন এ প্রযুক্তি সংযোজনের ফলে আশার আলো দেখছেন গাড়ি মালিকরা। কারণ এতে গাড়ি চুরির ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। কুমিল্লা বিআরটি কর্মকর্তারা বলছেন, গাড়ি চুরির সঙ্গে সঙ্গে তা বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের দফতরে জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে গাড়ির অবস্থান দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব। গাড়ির নতুন নম্বর প্লেট সংযোজনে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ ধরনের স্ক্রু, যা একবার খুললে ভেঙে যায়। ফলে গাড়ির নম্বর প্লেট বদলে চালানোর সুযোগ নেই। এছাড়া চুরি করা গাড়ি বিক্রি করলেও তার নিবন্ধন পরিবর্তন সম্ভব হবে না। কারণ রেট্রো-রিফ্লেক্টিং নম্বর প্লেট দেয়ার আগে গাড়ির ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর এবং অন্যান্য সব তথ্য বিআরটিএর ডিজিটাল সার্ভারে সংরক্ষণ থাকছে। ফলে গাড়ি চোরকে ধরা পড়তেই হবে। তবে, গ্রাহকদের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বিআরটিএ কুমিল্লা সহকারি-পরিচালক নুরুজ্জামান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এ প্রযুক্তি ব্যবহারে সফলতা আসতে সময় লাগবে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে অপরাধ নির্মূলে বিআরটিএ আবারো নতুন প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা আলোচনা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিজিটাল নম্বর
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ