পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঐক্যের জোয়ারে ভাসছে চট্টগ্রাম। রাজধানী ঢাকার বাইরে সিলেটের পর আজ শনিবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে বিভাগীয় মহাসমাবেশ তথা জনসভা। নগরীর কেন্দ্রস্থল কাজীর দেউড়ী নূর আহম্মদ সড়ক সংলগ্ন নাসিমন ভবনস্থ চট্টগ্রাম বিএনপি কার্যালয় চত্বরে আজ বেলা ২টায় শুরু হতে যাচ্ছে এই জনসভা। মহানগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে ঐক্যফ্রন্টের তৃণমূলের নেতা-কমী, সমর্থক ছাড়াও উৎসুক হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনসভায় যোগ দেবেন এমনটি আশা করছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ। নগরী ও জেলা চট্টগ্রামের গন্ডি ছাড়িয়ে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনীসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত হতে মানুষের ঢল নামতে পারে জনসভা অভিমুখে।
এ বছরের শুরু দিকেও বিএনপি লালদীঘি ময়দানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে না পাওয়ায় নাসিমন ভবন চত্বরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশ পরিণত হয়েছিল এক জনসমুদ্রে। কেননা চট্টগ্রাম হচ্ছে আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার। চাটগাঁ জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থী রাজনৈতিক শক্তির বহু পুরনো মজবুত ঘাঁটি। এটি বারো আউলিয়ার পূণ্যভূমি। তাছাড়া নবগঠিত জাতীয় ঐক্যের একটি মঞ্চের প্রতি চট্টগ্রামবাসীর বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছিল গোড়া থেকেই। এসব কারণে আজকের জনসভায় গণজোয়ার সৃষ্টি হতে পারে এমনটি ধারণা ফুটে উঠেছে চট্টগ্রামের জনসাধারণের আলাপ-আলোচনার ভেতরেই।
ঐক্যফ্রন্ট ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে জনসভা করার জন্য এক সপ্তাহ পূর্বে অনুমতি চেয়েও শেষ পর্যন্ত তা মিলেনি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ শর্তসাপেক্ষে জনসভা করা এবং একই সাথে ভ্যানুর (নাসিমন ভবন চত্বর) অনুমতির বিষয়টি গতকাল (শুক্রবার) দুপুরের আগে জানায়। এরপরই কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রামের ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ তড়িঘড়ি জনসভার জন্য আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি শুরু করেন। রাতে চলছিল সভা মঞ্চ তৈরির কাজ। বিভিন্ন স্থানে অব্যাহত পুলিশি তল্লাশি, ধর-পাকড়, গায়েবী মামলা, হুলিয়া, বাধা-বিপত্তি, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে সবখানেই ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা চোখে পড়ে। দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে চলমান আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর সামনে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কী ঘোষণা নিয়ে আসছেন তা নিয়ে রাজনীতি সচেতন সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহ-কৌতূহলের যেন শেষ নেই। চাটগাঁবাসীর চোখ এ মুহূর্তে নাসিমন ভবন চত্বরে। ঘরে-বাইরে সরব আলোচনা চলছে চট্টগ্রামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভাকে ঘিরে।
গতকাল দুপুরের একটু আগে ২৫ দফা শর্তসাপেক্ষে অনুমতি পাওয়ার পর জনসভার মঞ্চ তৈরীসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রস্তুতি সভায় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আশা প্রকাশ করেন আজকের এই জনসভায় জনতার বাধভাঙ্গা ঢল নামবে। জনসভায় যোগ দিতে উন্মুুখ এখন বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসী। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় নেতারা কি কি দিক-নির্দেশনা দেবেন তা নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।
চট্টগ্রামের জনসভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সেক্রেটারী চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ছাড়াও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখবেন। জনসভা সফল করতে গতকাল বিকেলে নাসিমন ভবনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাপক ধরপাকড়, পুলিশী হয়রানিসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে জনসভাকে সর্বাত্মক সফলের অঙ্গীকার করেন নেতারা। এর আগে সকালে একই স্থানে ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন জনসভার অনুমতি দিলেও পুলিশী হয়রানি আর ধরপাকড় বন্ধ হয়নি। গতকালও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এসময় অন্তত ১০ বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, শত প্রতিকূলতার মধ্যে এই জনসভা সফল করাকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি, আমরা সফল হবো। গত দশ বছর ধরে প্রতিটি কর্মসূচিতে আমাদের এসব মোকাবেলা করতে হয়েছে। সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে বীর চট্টলার সংগ্রামী জনতা এই মহাসমাবেশকে সফল করবে।
এদিকে শেষ সময়ে হলেও জনসভার অনুমতি পাওয়ার পর ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিকেলে নাসিমন ভবন এলাকায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাসমাবেশের জন্য লালদীঘি ময়দান ব্যবহারের অনুমতি নেওয়া হয় মাঠের মালিক মুসলিম হাই স্কুল থেকে। এরপর পুলিশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। তবে জনসভার কয়েক ঘন্টা আগে গতকাল দুপুর পৌনে ১২টায় চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে বিকল্প স্থানে জনসভা অনুষ্ঠানের বিষয়টি ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়।
সিএমপির কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবর রহমান জনসভার অনুমতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কিছু শর্ত দিয়ে ঐক্যফ্রন্টকে জনসভার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মিছিল নিয়ে জনসভায় না আসা, বিকেল ৫টার মধ্যে জনসভা শেষ করাসহ বেশকিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। লালদীঘি ময়দানে জনসভার জন্য অনুমতি চাওয়া হলেও সার্বিক দিক বিবেচনা করে তাদের নাসিমন ভবন এলাকায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয় বলে জানান তিনি। তিনি আশা করেন, আয়োজকরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে কোনো প্রকারের ব্যত্যয় ঘটাবেন না। সিএমপির নগর বিশেষ শাখার এডিসি (ইন্টেলিজেন্স) কাজেমুর রশিদ বলেন, ২৫ দফা শর্ত দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তের বিষয়ে আয়োজকদের জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।
যে কোনো মূল্যে জনসভা সফল করার অঙ্গীকার
প্রতিকূল পরিস্থিত মোকাবেলা করে যেকোন মূল্যে আজকের জনসভা সর্বাত্মক সফল করার অঙ্গিকার করেছেন বিএনপির নেতারা। গতকাল নাসিমন ভবনস্থ নগর বিএনপি কার্যালয়ে এক প্রস্তুতি সভায় তারা এ অঙ্গিকার করেন। নেতারা বলেন, চট্টগ্রামের এই জনসভা হবে চলমান আন্দোলনের টার্নিংপয়েন্ট। সভায় প্রধান অতিথি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, দমন পীড়ন চালিয়ে এবং গায়েবী মামলা দিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। মামলা, হামলা ও পুলিশী হয়রানী উপেক্ষা করে চট্টগ্রামবাসী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করে চট্টগ্রাম থেকে সরকার পতনের সাইরেন বাজাবে। বিএনপির অপর ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। এই জনসভা হবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের জনসভা। জনসভায় আসার পথে যেখানে বাধা সেখান থেকে মিছিল নিয়ে রাজপথে নামার আহবান জানান তিনি। ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। এই সরকার স্বৈরাচারি কায়দায় মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভোটের অধিকার ফিরে পেতে যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, জাতীয় নেতারা দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। জনসভায় যে ঘোষণা আসবে তা বাস্তবায়নে সবাইকে মাঠে নামতে হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, সকল বাধা উপেক্ষা করে গণতন্ত্রের লড়াই এগিয়ে নিতে হবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, জনতার চাপে এ সরকারের পুলিশ অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে। আন্দোলনের মুখে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় হবে।
প্রস্তুতি সভার শুরুতে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, শেষ সময়ে এসে জনসভার অনুমতি দেওয়া হলেও পুলিশী হয়রানি আর ধরপাকড় থেমে নেই। পুলিশ নেতাদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের হুমকিতে জাতীয় নেতাদের জন্য দেওয়া বুকিং বাতিল করছে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল। জনসভার জন্য মঞ্চ তৈরীর কাজেও ডেকোরেশন কোম্পানিকে বাধা দেয়া হচ্ছে। এতসব প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও চট্টগ্রামবাসী জনসভা সফলে প্রস্তুত বলে জানান তিনি। তিনি বলেন জনসভাকে ঘিরে চট্টগ্রামের রাজপথে মানুষের ঢল নামবে।
প্রস্তুতি সভায় গোলাম আকবর খন্দকার ও এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া, মৎস্যজীবি বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল, নগর বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, জাহাঙ্গীর আলম, ব্যারিষ্টার মীর হেলাল উদ্দিন, বিএনপি নেতা এম এ হালিম চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন এস এম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আবদুল মান্নান, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, জাহাঙ্গির আলম দুলাল, আনোয়ার হোসেন লিপু, মীর্জা মো. আকবর, ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, কামরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তার আগে সকালে একই স্থানে ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে আরও একটি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলের মহানগর ও জেলা নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ঐক্যফ্রন্টের সভায় বেগম খালেদা জিয়ার ছাড়া জনসভায় অন্যকোন নেতার নামে ব্যানার ফেস্টুন বহন না করতে বলা হয়েছে। ডা. খুরশীদ জামিল জানান, জনসভায় চট্টগ্রামের পেশাজীবীগণ দলে দলে শামিল হবেন।
এদিকে গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে জয় বাংলা স্লোগান সহকারে ছাত্রলীগের একটি মিছিল এনায়েত বাজার জুবিলী রোড, নূর আহম্মদ রোড হয়ে আজকের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্ধারিত জনসভাস্থলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যায়। এসময় জনসভাস্থল নাসিমন ভবন চত্বর ও সড়কে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।