Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুলতান মাহমুদ কেন সোমনাথ মন্দিরে অভিযান চালান

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

হিন্দুস্থানে ১৭ বার সফল অভিযান পরিচালনাকারী দ্বিগিজয়ী সুলতান মাহমুদ গজনবী ১০২৫/২৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর (৪১৬ হি:) হিন্দুদের সর্ব বৃহৎ মন্দির ‘সোমনাথ’ জয় করে ‘মোকাসসিরুল আছনাম’ এবং উপমহাদেশে ‘বুত শেকন’ বা মূর্তি ধ্বংসকারী নামে খ্যাত হয়ে রয়েছেন। তাঁর বিজয় অভিযানসমূহের মধ্যে সোমনাথ বিজয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে। কেননা অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা ছিল সুকঠিন কাজ।
‘কথিয়াওয়াড়ে’ সমুদ্র তীরে অবস্থিত, হিন্দুদের অতি সম্মানিত মন্দির সোমনাথের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন। তাঁর বর্ণনা থেকে এই মন্দিরের প্রতি হিন্দুদের ভক্তি-বিশ্বাসের কথাও জানা যায়।
ইবনে খালদুন লিখেছেন, সমুদ্র তীরে নির্মিত এই মন্দির পর্যন্ত জোয়ার-ভাটার ঢেউ খেলত। আর হিন্দুরা বিশ্বাস করত, এই মন্দির চুম্বন করার জন্য সমুদ্র মন্দিরের কাছে এসে থাকে। তাদের আরো বিশ্বাস ছিল, আত্মাসমূহ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর সোমনাথে এসে সমবেত হয় এবং সোমনাথে ওই সব আত্মাকে দেহে সংযোজন করে দেয়। তা ছাড়া হিন্দুরা বহু উত্তম ও মূল্যবান জিনিসপত্র সোমনাথের নামে মানত করত। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, গঙ্গা সাগর বেহেশত হতে নির্গত, মুক্তির আশায় তাতে মৃতদের হাড় নিক্ষেপ করা হতো। সোমনাথকে গঙ্গা সাগরের পানি দিয়ে প্রত্যেক দিন ধৌত করা হতো। সোমনাথের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতি বিষয়ে ইবনে খালদুন মনোজ্ঞ আলোচনার পর সুলতান মাহমুদ কেন এটা জয় করার মনস্থ করেন তারও বর্ণনা দিয়েছেন। হিন্দুস্থানে অভিযানকালে সুলতান মাহমুদের বিভিন্ন দুর্গ জয়ের খবরে কিংবা কোনো মন্দির ধ্বংসের খবরে হিন্দুরা বলাবলি করত, সোমনাথ কবেই সুলতান মাহমুদকে ধ্বংস করে ফেলত। সুলতান মাহমুদের কাছে এ খবর পৌঁছার পর তিনি মূর্তিপূজা বন্ধ করার, এসব বাতিল ‘মাবুদের’ অসহায়ত্ব প্রমাণ করার এবং হিন্দুদের এসব দাবির অসারতা প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে জিহাদ শুরুর উদ্যোগ গ্রহণ করে রাজাকে পরাজিত করেন এবং শেষ পর্যন্ত সোমনাথে পদার্পণ করেন। সোমনাথের অধিবাসীরা সুলতান মাহমুদের আগমনের খবর পেয়ে বলতে থাকে, ‘আমাদের প্রভু সোমনাথ এখানে তোমাদেরকে এ জন্যই নিয়ে এসেছেন যে, একই সঙ্গে তোমাদের সকলকে ধ্বংস করবেন। তোমরা হিন্দুস্থানের মহাত্মাদেরকে হত্য করেছ, এখন তোমাদের থেকেও আমাদের প্রভু তার প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন।’ অত:পর মুসলিম বাহিনী তকবীর ধ্বনি সহকারে দুর্গের প্রাচীর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। রাজপুত ও পন্ডিতদের বাহিনী সোমনাথের কাছে গিয়ে কান্নাকাটির মাধ্যমে প্রার্থনা করতে থাকে। অবশেষে উভয় পক্ষে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং তিন দিন পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত থাকার পর শত্রু বাহিনী পরাজয় বরণ করে, অনেকেই পলায়ন করে। এই যুদ্ধে শত্রু পক্ষের ৫০ হাজার সৈন্য নিহত হয় এবং নৌকাযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় মুসলিম বাহিনী ধাওয়া খেয়ে আরো অনেকে সমুদ্রে ডুবে মারা যায়। বহু সংখ্যক মুসলমানদের হাতে নিহত হয় এবং দুর্গ সাফল্যজনকভাবে সুলতান মাহমুদের দখলে এসে যায়। বলা হয়ে থাকে, এই যুদ্ধে সুলতানের নিকট গণিমতের যে মাল হস্তগত হয়, তার পরিমাণ ছিল দুই কোটি দিনার বা ১৪ কোটি টাকা। সোমনাথ বিজয়ের ফলে হিন্দুদের শক্তি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।



 

Show all comments
  • Sanjoy Paul ১ আগস্ট, ২০২২, ১২:৫৪ পিএম says : 0
    সোমনাথ মন্দীর,সোমনাথ মন্দীরের জায়গায় স্বমহীমায় মাথা উচুকরে দাড়িয়ে আছে....কিন্তু এখন কোথাই সুলতান মাহমুদ ও তার চুরি ডাকাত দলের সাঙ্গ পাঙ্গরা?? অত্যাচারীর ধ্বংস অনিবার্য
    Total Reply(0) Reply
  • muslim ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:০৪ এএম says : 0
    বাতিল সকল শক্তি সব সময় মুসলমানদের হাতে পরাজিত হবে এটায় সত্য
    Total Reply(0) Reply
  • মাসুদ ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:১৬ এএম says : 0
    লেখাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
    Total Reply(0) Reply
  • আজগর ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:১৭ এএম says : 1
    ইতিহাস থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি
    Total Reply(0) Reply
  • তামান্না ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:১৭ এএম says : 0
    লেখাটির জন্য ইনকিলাব ও লেখক খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী সাহেবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • RAFIQUL ISLAM ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:৪০ এএম says : 0
    Sultan Mahmaud ar full history janta # SULTAN MAHMUD GAJNABOIR VAROT OVIJAN By ANAYTULLAH ALTAMASH AR Boita porar onurod roilo pathok dar Kaca. porla khub moja paban.
    Total Reply(0) Reply
  • মো: আশরাফুল ইসলাম ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:২৮ এএম says : 2
    সুলতান মাহমুদ, সালাহউদ্দিন আইয়ুবী, খালিদ বিন ওয়ালিদ, মুসা বিন নুসায়ের এর মত মুসলিম বীর এখন হয় না কেন।
    Total Reply(0) Reply
  • ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:২১ এএম says : 0
    আজ ও যদি আমরা ঐক্য বধ্য হই মুসলমানদের কেউ ফরাজীত করতে পারবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • monir zaman ১ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:৫২ পিএম says : 0
    khub valo laglo. thanks shobaike.
    Total Reply(0) Reply
  • দীপ্ত ২ এপ্রিল, ২০২২, ১১:২২ এএম says : 0
    বাহ্‌,খুব সুন্দর কাহিনী সাজালেন তো। অত্যাচার, শোষণ আর নিপীড়ণ কে বীরত্ব বানিয়ে দিলেন। ক্যাপশনটাও বেশ সুন্দর। লেখার ভিতর বীরত্বের সাথে মন্দির ধ্বংসের কথা লিখলেন আর ক্যাপশন দিলেন শান্তি ও সমৃদ্ধির ধর্ম। তা এভাবে অত্যাচারের মাধ্যমে বীরত্ব প্রদর্শনই কি শান্তি? আর হ্যা, আপনাদের হিসেবে ইসরায়েলও কিন্তু ফিলিস্তিনে প্রতিদিন দারুণ বীরত্বের পরিচয় দিচ্ছে। তাদেরও একটু সাধুবাদ জানানো উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • shafiul alam rana ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০৬ এএম says : 0
    নিজের হাতে বাননো মূর্তি যে কোন উপকার করতে পারেনা তা বুঝানোর জন্যই সুলতান মাহমুদ রহঃ সোমনাথ মন্দিরে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন।
    Total Reply(0) Reply
  • MD.ASIF AL ZUBAER AKASH ২০ নভেম্বর, ২০২২, ২:৩০ পিএম says : 0
    মাটির মুর্তি এর ওপর ভরসা করলে এমনি হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন