বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হিন্দুস্থানে ১৭ বার সফল অভিযান পরিচালনাকারী দ্বিগিজয়ী সুলতান মাহমুদ গজনবী ১০২৫/২৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর (৪১৬ হি:) হিন্দুদের সর্ব বৃহৎ মন্দির ‘সোমনাথ’ জয় করে ‘মোকাসসিরুল আছনাম’ এবং উপমহাদেশে ‘বুত শেকন’ বা মূর্তি ধ্বংসকারী নামে খ্যাত হয়ে রয়েছেন। তাঁর বিজয় অভিযানসমূহের মধ্যে সোমনাথ বিজয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে। কেননা অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা ছিল সুকঠিন কাজ।
‘কথিয়াওয়াড়ে’ সমুদ্র তীরে অবস্থিত, হিন্দুদের অতি সম্মানিত মন্দির সোমনাথের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন। তাঁর বর্ণনা থেকে এই মন্দিরের প্রতি হিন্দুদের ভক্তি-বিশ্বাসের কথাও জানা যায়।
ইবনে খালদুন লিখেছেন, সমুদ্র তীরে নির্মিত এই মন্দির পর্যন্ত জোয়ার-ভাটার ঢেউ খেলত। আর হিন্দুরা বিশ্বাস করত, এই মন্দির চুম্বন করার জন্য সমুদ্র মন্দিরের কাছে এসে থাকে। তাদের আরো বিশ্বাস ছিল, আত্মাসমূহ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর সোমনাথে এসে সমবেত হয় এবং সোমনাথে ওই সব আত্মাকে দেহে সংযোজন করে দেয়। তা ছাড়া হিন্দুরা বহু উত্তম ও মূল্যবান জিনিসপত্র সোমনাথের নামে মানত করত। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, গঙ্গা সাগর বেহেশত হতে নির্গত, মুক্তির আশায় তাতে মৃতদের হাড় নিক্ষেপ করা হতো। সোমনাথকে গঙ্গা সাগরের পানি দিয়ে প্রত্যেক দিন ধৌত করা হতো। সোমনাথের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতি বিষয়ে ইবনে খালদুন মনোজ্ঞ আলোচনার পর সুলতান মাহমুদ কেন এটা জয় করার মনস্থ করেন তারও বর্ণনা দিয়েছেন। হিন্দুস্থানে অভিযানকালে সুলতান মাহমুদের বিভিন্ন দুর্গ জয়ের খবরে কিংবা কোনো মন্দির ধ্বংসের খবরে হিন্দুরা বলাবলি করত, সোমনাথ কবেই সুলতান মাহমুদকে ধ্বংস করে ফেলত। সুলতান মাহমুদের কাছে এ খবর পৌঁছার পর তিনি মূর্তিপূজা বন্ধ করার, এসব বাতিল ‘মাবুদের’ অসহায়ত্ব প্রমাণ করার এবং হিন্দুদের এসব দাবির অসারতা প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে জিহাদ শুরুর উদ্যোগ গ্রহণ করে রাজাকে পরাজিত করেন এবং শেষ পর্যন্ত সোমনাথে পদার্পণ করেন। সোমনাথের অধিবাসীরা সুলতান মাহমুদের আগমনের খবর পেয়ে বলতে থাকে, ‘আমাদের প্রভু সোমনাথ এখানে তোমাদেরকে এ জন্যই নিয়ে এসেছেন যে, একই সঙ্গে তোমাদের সকলকে ধ্বংস করবেন। তোমরা হিন্দুস্থানের মহাত্মাদেরকে হত্য করেছ, এখন তোমাদের থেকেও আমাদের প্রভু তার প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন।’ অত:পর মুসলিম বাহিনী তকবীর ধ্বনি সহকারে দুর্গের প্রাচীর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। রাজপুত ও পন্ডিতদের বাহিনী সোমনাথের কাছে গিয়ে কান্নাকাটির মাধ্যমে প্রার্থনা করতে থাকে। অবশেষে উভয় পক্ষে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং তিন দিন পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত থাকার পর শত্রু বাহিনী পরাজয় বরণ করে, অনেকেই পলায়ন করে। এই যুদ্ধে শত্রু পক্ষের ৫০ হাজার সৈন্য নিহত হয় এবং নৌকাযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় মুসলিম বাহিনী ধাওয়া খেয়ে আরো অনেকে সমুদ্রে ডুবে মারা যায়। বহু সংখ্যক মুসলমানদের হাতে নিহত হয় এবং দুর্গ সাফল্যজনকভাবে সুলতান মাহমুদের দখলে এসে যায়। বলা হয়ে থাকে, এই যুদ্ধে সুলতানের নিকট গণিমতের যে মাল হস্তগত হয়, তার পরিমাণ ছিল দুই কোটি দিনার বা ১৪ কোটি টাকা। সোমনাথ বিজয়ের ফলে হিন্দুদের শক্তি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।