Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাতিল অধ্যাদেশে গঠিত বোর্ডে চলছে শিশু হাসপাতাল

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা শিশু হাসপাতাল সরকারি সাহায্যপুষ্ট হলেও এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। তাই এটি পরিচালনায় একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এভাবেই চলে আসছে। তবে বর্তমানে যে ব্যবস্থাপনা বোর্ড দ্বারা হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে সেই বোর্ডটি আইনত বৈধ নয়- কারণ একটি বাতিল করা অধ্যাদেশে এটি গঠন করা হয়েছে। এমনটি জানিয়েছে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
তারা জানান, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি নিয়মানুযায়ী বোর্ড গঠিত হতো। কিন্তু ২০০৮ সালে তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার হাসপাতাল পরিচালনায় একটি অধ্যাদেশ জারি করে। যদিও পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকার সেই অধ্যাদেশ জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বাতিল করে। কিন্তু ২০১৬ সালে গঠিত হাসপাতালের বর্তমান বোর্ড সেই বাতিল করা অধ্যাদেশ অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে। তাই বাতিল অধ্যাদেশ অনুযায়ী গঠিত ব্যবস্থাপনা বোর্ডের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ধানমন্ডির গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের চেয়ারপারসন ন্যাশনাল প্রফেসর ডা. শাহলা খাতুনকে সভাপতি ও শিশু হাসপাতালের পরিচালককে সদস্যসচিব করে ১০ সদস্যের ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠন করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ঢাকা শিশু হাসপাতাল অধ্যাদেশ-২০০৮’ অনুযায়ী এ ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠন করা হলো।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ‘ঢাকা শিশু হাসপাতাল অধ্যাদেশ-২০০৮’ জারি করা হলেও পরবর্তীতে নবম জাতীয় সংসদে সেটি আর পাস হয়নি। ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ প্রকাশিত নবম জাতীয় সংসদের ‘বিশেষ কমিটি’র প্রথম রিপোর্টে বলা হয়, ৬৮টি অধ্যাদেশ গ্রহণ করার কোন যৌক্তিকতা আছে বলে কমিটি মনে করেনা। বিশেষ কমিটির বাতিলকৃত অধ্যাদেশ গুলোর তালিকায় ৫৮ নম্বরে ছিল ‘ঢাকা শিশু হাসপাতাল অধ্যাদেশ ২০০৮’।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা শিশু হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, ২০০৮ সালের পর একাধিক ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠিত হলেও সে সকল বোর্ড ২০০৮’র অধ্যাদেশ অনুযায়ী গঠিত হয়নি। কারণ ২০০৮’র ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সদস্য সংখ্যা ১০ জনে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২০০৯, ২০১২, ২০১৩ সালে গঠিত বোর্ডে সদস্য সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১১, ১৪, ১৪ জন করে। সেই বোর্ডগুলোতে যে কোনো পেশার অনেক যোগ্য ব্যক্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সদস্য হওয়ার সুযোগ পেতেন। কিন্তু বর্তমানে যে বোর্ড কার্যকর রয়েছে সেটি ২০০৮’র অধ্যাদেশ অনুযায়ী ১০ সদস্যের।
শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, অধ্যাদেশ জাতীয় সংসদে পাস না হওয়ায় বর্তমান ব্যবস্থাপনা বোর্ড বৈধ নয়। তারা হাসপাতালের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বর্তমানের এ অবৈধ বোর্ড ভেঙে নতুন করে বোর্ড গঠনের দাবি জানান।
২০০৮ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী গঠিত শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১০ জন। চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব ছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় পর্যায়ে সুনাম অর্জনকারী দুই ব্যক্তি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ডা. শারফিুদ্দিন আহমেদ ও দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবুল কাশেম হুমায়ুন), চিকিৎসা পেশায় সুনাম অর্জনকারী দুই চিকিৎসক বিশেষ করে শিশু বিশেষজ্ঞ (হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সাবেক প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া ও বিএসএমএমইউর সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লা), ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহের হোসেন সাজু, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একজন প্রফেসর।
শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. আবদুল আজীজ বিদেশে থাকায় এ বিষয়ে তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) বাবলু কুমার সাহা ইনলিাবকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি না হওয়ায় এটা সম্পর্কে বলা সম্ভব নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ