Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১১ বছরেও চালু হয়নি ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতাল নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র ভেঙে পড়ছে ভবন

প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০১৬

মোস্তফা মাজেদ, ঝিনাইদহ থেকে
ঝিনাইদহে পঁচিশ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটি এগারো বছরেও চালু করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে চিঠি চালাচালির মধ্যে হাসপাতালের কার্যক্রম ও ডাক্তার কর্মচারী নিয়োগের বিষয়টি আটকে আছে। ২০১২ সালে ২১ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব নুরুন নবী চৌধুরী ১৬০নং স্মারকে চিকিৎসকসহ শিশু হাসপাতালটিতে ১৮টি পদ সৃষ্টির প্রজ্ঞাপন জারি করলেও এই চার বছরে স্বাস্থ্য বিভাগ বিশেষজ্ঞ কোন শিশু চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দিতে পারেনি। আবার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এমএলএসএস, ওয়ার্ড বয়, আয়া, কুক, মালি, নিরাপত্তাকর্মী ও সুইপারের ১২টি পদে লোকবল নিয়োগ দিলেও গত ৩ মাস তাদের বেতন হয় না। ঢাকার দারুস সালাম রোডের উষা সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিঃ আউটসোর্সিংয়ের নিয়োগের ঠিকাদার ছিল। এদিকে শিশু হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে দিনকে দিন শিশু রোগীর চাপ বড়ছে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে শিশুদের জন্য মাত্র ৮টি শয্যা আছে। কিন্তু প্রতিদিন ৬০ জন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। আউটডোরে ২০০ শিশু রোগীর ধকল সমলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের একমাত্র বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক ডাঃ আনোয়ারুল ইসলাম। শিশু হাসপাতাল ছাড়াও খাবার স্যালাইন ফ্যাক্টরি, ম্যাটস, আইএইচটিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জোড়াতালি দিয়ে চলছে। সরেজমিন দেখা গেছে, নির্মাণাধীন শিশু হাসপাতালের চারটি ভবন দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরেছে। কন্সট্রাকশন মেইনটেনেন্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের (সিএমএমইউ) নির্মাণ কাজে চরম ত্রুটির কারণে ভবনের বারান্দা ধসে পড়েছে মাত্র ১১ বছরে। ময়লা-আবর্জনায় ভরা জরাজীর্ণ শিশু হাসপাতালের লোহার গ্রিল, জানালা দরজা ও কাচের গ্লাস ভেঙে গেছে। চুরি হয়ে গেছে বৈদ্যুতিক মুল্যবান সরঞ্জাম। পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন সময় হাসপাতালে আসা মুল্যবান মেশিন ও আসবাবপত্র। গত দুই বছর জোড়াতালি দিয়ে শিশু হাসপাতালটি চালু করা হলেও সেখানে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফাল্গুনি রানী সাহাকে ডেপুটেশনে শিশু হাসপাতালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি সময় দিতে পারেন না। তার সঙ্গে দুই জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শহিদুর রহমান ও রোখসানা ওয়াসিম দায়িত্ব পালন করছেন। শিশু চিকিৎসায় অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রতিদিন ১০/১৫ জন শিশু রোগীকে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা ও উপদেশ দিচ্ছেন তারা। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় শিশু হাসপাতালটিতে শিশুদের মারাত্মক রোগের নিদ্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই, বরাদ্দ নেই সরকারি ওষুধ। তাই চিকিৎসার জন্য ভরসা একমাত্র খাবার স্যালাইন। ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুস সালাম জানান, ২৫ শয্যার শিশু হাসপাতালটি ২০০৫ সালে ৩ একর জমির ওপর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। জমি অধিগ্রহণ বাবাদ ৮৮ লাখ টাকা ও ভবন নির্মাণে ৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। ২০০৬ সালের ৩০ এপ্রিল শিশু হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হয় এবং একই বছরের ৩০ আগস্ট ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি আরো জানান, ভবন বুঝে পাওয়ার পর থেকেই লোকবল নিয়োগের জন্য বিভিন্ন সময় চিঠি দেওয়া হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। ২০১২ সালে শিশু হাসপাতালটিতে চিকিৎসকসহ ১৮টি পদ সৃষ্টি হলেও এই চার বছরে বিশেষজ্ঞ কোনো শিশু চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করা হয়নি। সিভিল সার্জন বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এমএলএসএস, ওয়ার্ড বয়, আয়া, কুক, মালি, নিরাপত্তাকর্মী ও সুইপারের ১২টি পদে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের কোন বেতন হচ্ছে না। বেতনের জন্য পদ সৃজন, প্রশাসনিক অনুমোদন ও টেন্ডার পক্রিয়া করেও এসব কর্মচারীর বেতন ছাড় হয়নি। শিশু হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় সদর হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ বাড়ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে খুলনার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ মোঃ মাসুম আলী জানান, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির আওতায় ঝিনাইদহে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো ঝিনাইদহের শিশু হাসপাতাল। তিনি বলেন, শিশু হাসপাতালে এ পর্যন্ত পদ সৃজন করার জন্য কোন পক্রিয়া গ্রহণ করা হয়নি। চার বছর আগে পদ সৃষ্টি হলেও তারা কোন কোড থেকে বেতনভাতা উত্তোলন করবেন তা নির্ধারণ করা হয়নি। সে জন্য ডাক্তার, নার্স বা অন্যান্য কর্মচারীর নিয়োগ পক্রিয়া ঝুলে আছে। এখন যদি শূন্য পদে লোক নিয়োগ করা হয় তবে, কোড ও খাতের সুনিদ্দিষ্ট ফয়সালা ছাড়া তারা কোন বেতনভাতা পাবেন না। এ জন্য নিয়োগ পক্রিয়া ঝুলে আছে। পরিচালক ডাঃ মোঃ মাসুম আলী এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কোড নির্ধারণের জন্য চিঠি পাঠানোর পরামর্শ দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ১১ বছরেও চালু হয়নি ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতাল নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র ভেঙে পড়ছে ভবন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ