Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সাতক্ষীরায় ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে বাসকপাতা

সাতক্ষীরা থেকে আব্দৃল ওয়াজেদ কচি | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:৩৬ পিএম


সাতক্ষীরার পল্লীতে বাড়িতে বাড়িতে ঘেরা বেড়া দেওয়ার কাজে বেশ জনপ্রিয় ঔষুধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ বাসক গাছ। গ্রামজুড়ে এর ছড়াছড়ি। এক ধরনের দুর্গন্ধের জন্য এর পাতায় গবাদিপশু মুখ দেয় না। অথচ দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে ঔষুধি গুণসম্পন্ন এই বাসক উদ্ভিদের পাতা। গ্রামাঞ্চলে বাসক পাতার বেশ কদর রয়েছে। সর্দি-কাশি সারাতে সবুজ বাসক পাতা রস করে খেলে উপকার পাওয়া যায় এ বিশ্বাস রয়েছে সবারই। কিন্তু এই পাতা যে মানুষের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে তা ছিল ধারণার বাইরে।
জেলার সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের গৃহবধূ বিউটি বেগম জানান, বাসক পাতা এখন তাদের কাছ থেকে ওষুধ কোস্পানিগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এর ঔষুধি গুণ এত বেশি যে, এই পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে কাশির সিরাপ। বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা করে বলে সর্দি-কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহ নিরাময়ে বেশ উপকারী।

তিনি আরো জানান, সাতক্ষীরা অঞ্চলে বাসক উদ্ভিদ জন্মায় প্রচুর পরিমাণে। ঘেরা বেড়ায় ব্যবহার করা এই পাতা ছিড়লে গাছ মরে যায় না। আবারো নতুন নতুন পাতা গঁজায়। সারা বছর চলে নতুন পাতা গঁজানো। ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে দিলে হয়ে ওঠে নতুন গাছ। আর্দ্র ও সমতল ভ‚মিতে এই উদ্ভিদ জন্মায়। বিকট গন্ধের কারণে এতে ছত্রাক জন্মায় না। এমনকি পোকামাকড়ও ধরে না।
ফিংড়ি ইউনিয়নের কাঁচাপাকা রাস্তার দুই ধারে ছয় কিলোমিটার এলাকা বরাবর রয়েছে বিপুল পরিমাণ বাসক উদ্ভিদ। এখানকার কমপক্ষে ১০ হাজার বাসক গাছ ব্যবহৃত হচ্ছে জমির চারধারে কিংবা বাড়ির ঘেরা বেড়ায়। প্রতি বছর এক শ’ টন সবুজ পাতা সংগ্রহ হচ্ছে এখানে। এ থেকে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ২৬ টন শুকনো পাতা।

পানিউন্নয়ন বোর্ড প্রতিনিধি মো. শামীম আলম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প বøু গোল্ডের আওতায় ২৮৫ জন নারী এখানে বাসক পাতা সংগ্রহ করছেন। আর এই পাতা কিনে নিচ্ছে ওষুধ কোম্পানিগুলো। বাসক পাতা যেমন আনতে পারে অর্থনৈতিক বিপ্লব, তেমনি বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই পাতা দেশের ওষুধ শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তিনি আরো জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে বাসক উদ্ভিদের চাষ শুরু হয়েছে। ভারতেও রয়েছে এর ব্যাপক চাষ

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রতিনিধি মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আমরা শুকনো বাসক পাতা কিনে নিচ্ছি। জার্মান প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বাসক পাতা কাশির সিরাপ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাতক্ষীরার গ্রামে এরই মধ্যে বেশ সাড়া পড়ে গেছে বাসক পাতা নিয়ে। গ্রামবাসী নিজ নিজ বাড়ির চারপাশে বাসক গাছ লাগাচ্ছেন। গ্রামের দরিদ্র নারীরা প্রতিদিনই সংগ্রহ করছেন বাসক পাতা। পরিচ্ছন্নভাবে রোদে শুকিয়ে তা বিক্রি করছেন ওষুধ কোম্পানির কাছে। এতে তারা অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করছেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. নাসরিন আক্তার জানান, বাসকের বৈজ্ঞানিক নাম আঢাটোডা বাসিকা (অফযধঃড়ফধ ঠধংরপধ)। এটি ঔষুধি গুণসম্পন্ন। ভারতীয় উপমহাদেশের একটি উদ্ভিদ। গুণের কারণে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বাংলাদেশেও।
তিনি আরো জানান, বাসক উদ্ভিদের জন্ম ও বৃদ্ধিতে সাতক্ষীরার মাটি অনুক‚ল। বেশি বেশি করে বাসক গাছ লাগালে এর পাতা দেশের ওষুধ শিল্পে অবদান রাখা ছাড়াও গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাসকপাতা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ