পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গত দুই নিবন্ধে আমরা ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ও মজলিশে শূরার সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ৫টি শর্ত বা গুণ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ আরও কয়েকটি শর্ত বা গুণ নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। ৬. জাকির ও স্মরণকারী হওয়া : ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানকে ‘জাকির’ বা স্মরণকারী হতে হবে। এই স্মরণের পরিমন্ডল খুবই বিস্তৃত। কোরআনুল কারীমে আল্লাহ বিভিন্ন অবস্থা, উপযোগিতা ও বিভিন্ন স্তর বিন্যাসের সাথে জিকির বা স্মরণের ব্যবহারিক দিকগুলো তুলে ধরেছেন। বস্তুত: মু’মিন মুসলমানদের যাবতীয় কাজ-কর্ম, চিন্তা-ভাবনা, আচার-ব্যবহার, ব্যবসা-বাণিজ্য, সবকিছুতেই ‘জিকির’ বা স্মরণের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। কোরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছে- ‘যারা আল্লাহকে সুখে-দুঃখে অর্থাৎ সর্বাবস্থায় স্মরণ করে।’ এই আয়াতের দ্বারা বুঝা যায় যে, মু’মিন মুসলমানদের সকল কাজই ইবাদত, যদি তা নিয়ত ও উদ্দেশ্য অনুসারে করা হয়। জিকিরের মাঝে দৈহিক ও আত্মিক উভয় প্রকার স্মরণই নিহিত আছে। একজন রাষ্ট্রপ্রদান যদি ইবাদতগুজার না হয়, এমনকি তার সাথে সহযোগী পরামর্শ সভার সদস্যগণও যদি আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হয় তাহলে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দেখা দেবে নানা প্রকার অন্যায়, অবিচার, অনাচার ও ধর্মবিরোধী কার্যকলাপ। তাই রাষ্ট্রপ্রধান ও পরামর্শ সভার সদস্যদের নির্বাচন ক্ষেত্রে এই গুণটির প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। যে নিজেই পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ সে অন্যের হেদায়েতের কারণ হতে পারে না বা তার নিকট হতে অন্য কেউ হেদায়েত লাভের প্রত্যাশা করতে পারে না। হযরত ইরবাদ বিন সারিয়া রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) ফজর নামাজ আদায় করার পর আমাদের সামনে এম মর্মস্পর্শী অভিভাষণ প্রদান করেন, যার দরুন আমাদের চোখে অশ্রæর বন্যা দেখা দিল এবং হৃদয়-মন দ্রবীভ‚ত হয়ে গেল। সাহাবীদের একজন বললেন, এত বিদায় গ্রহণকারী ব্যক্তির মতই উপদেশ দেয়া হচ্ছে? ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.), আপনি আমাদের কি উপদেশ দিচ্ছেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি তোমাদের আল্লাহ ভীতি অবলম্বন করতে এবং আনুগত্য প্রকাশ করতে উপদেশ দিচ্ছি, যদিও কোনো আবিসিনীয় গোলাম তোমাদের আমীর নিযুক্ত হয়। কারণ তোমাদের মাঝে যারা ভবিষ্যতকালে জীবিত থাকবে, তারা বহু বিষয়ে মতভেদ ও মত পার্থক্য দেখতে পাবে। এমতাবস্থায় তোমাদের বিদআত হতে বেঁচে থাকতে হবে। কেননা, বিদআত হচ্ছে সুস্পষ্ট ভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতা। তোমাদের মাঝে যে কেউ এমন সময়ে উপস্থিত হবে তার জন্য আমার সুন্নাত ও হেদায়েত প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত দাঁত দ্বারা দৃঢ়ভাবে কামড়ে ধরা একান্ত কর্তব্য।’ এজন্যই মহান আল্লাহপাক তার প্রিয় হাবীব রাসূলুল্লাহ (সা.) কে লক্ষ্য করে আল কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘আপনি জিকির ও নসীহত করুন, অবশ্যই আপনি নসীহতকারী।’
৭. ন্যায় বিচার সম্পর্কে অভিজ্ঞ হওয়া : ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান ও তার পরিষদকে ন্যায় বিচার সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে। বিচার মীমাংসার ক্ষেত্রে ন্যায়ানুগ আইন ও বিধান সম্বন্ধে অপরিচিত ব্যক্তি কোনোক্রমেই ইসলামী রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে সক্ষম নয়। কোরআনুল কারীমে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের ন্যায় বিচার করার নির্দেশ দিচ্ছেন, ইহসান বজায় রাখার আদেশ করেছেন।’ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম উদ্দেশ্য এবং এই ন্যায় বিচারের পথ সহজ ও সুগম করে তোলার সুষ্ঠু পরামর্শ যারা দান করবেন, তাদেরকেও এ বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞ হতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর বিচারক রয়েছে। এই তিন শ্রেণীর মাঝে কেবলমাত্র একটি শ্রেণী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। আর অপর দু’শ্রেণীর বিচারকগণ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। যে শ্রেণীর বিচারক জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা এমন ব্যক্তি যে প্রকৃত ও যথার্থ সত্যকে জানতে পেরেছে এবং তদানুযায়ী বিচার মীমাংসা করেছে। আর যে ব্যক্তি প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরও ফায়সালা করার প্রাক্কালে অবিচার ও জুলুম করেছে সে জাহান্নামে যাবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি নিজের অজ্ঞতা ও মূর্খতা সত্তে¡ও মানুষের বিচার মীমাংসায় অংশগ্রহণ করেছে, সে অবশ্যই জাহান্নামী হবে।’
ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ও পরামর্শ সভার সদস্যবৃন্দকে যেহেতু রাষ্ট্রীয় কর্মকাÐে বিচারকের ভ‚মিকা পালন করতে হবে, সেহেতু ন্যায়-বিচার সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধান সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞ হতে হবে। ন্যায়-বিচার বলতে ওই ফায়সালাকেই বুঝতে হবে, যা কোরআন ও সুন্নাতভিত্তিক। শরীয়তের বিধান মোতাবেক যে রায় বা ফায়সালা হওয়া দরকার এর মাঝে বেশি-কমীর অবতারণা করা যাবে না। জাহিল ও অনভিজ্ঞ লোকজন এই সকল দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হতে পারে না। যথাযথ যুক্তি-প্রমাণের ব্যবহার ও প্রয়োগ সম্পর্কে ওয়াকেফহাল হওয়া এবং আইনের ধারাসমূহ সম্বন্ধে অভিজ্ঞ হওয়া একটি বিশেষ নৈতিক গুণ। এই গুণটি মেধা ও জ্ঞানানুশীলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ কারণে ইসলাম সুষ্ঠু বিচার কাজ পরিচালনা ও ইনসাফপূর্ণ বিচার ব্যবস্থার প্রবর্তনের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘শেষ যুগে অত্যাচারী শাসক, ফাসিক ও মিথ্যাবাদী মন্ত্রী ও কার্যনির্বাহী বিশ্বাসঘাতক ও প্রবঞ্চক বিচারপতি এবং মিথ্যাবাদী ফকীহের প্রদুর্ভাব ঘটবে। তোমাদের মাঝে যারা এই যুগ পাবে, তারা যেন ওই সব লোকের রাজস্ব আদায়কারী হতে প্রস্তুত না হয়, তাদের তরফ হতে কোনো নেতৃত্ব ও সর্দারী যেন গ্রহণ না করে এবং তাদের কোনো মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত পদ দখল করতে প্রয়াসী না হয়।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।