Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রসঙ্গ : ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ও মজলিশে শূরার সদস্য নির্বাচন-২

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

গত লেখায় আমরা ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ও মজলিশে শূরার সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ২টি শর্ত বা গুণ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ আরও কয়েকটি শর্ত বা গুণ নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
৩. জ্ঞানী ও স্বাস্থ্যবান হওয়া : ইসলামী রাষ্ট্রের কর্ণধার ও তার সহযোগী সংগঠনের সদস্যদের জ্ঞানী ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। জ্ঞানহীন, চিররোগা, ব্যাধি-জরাগ্রস্ত ব্যক্তি এই দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হতে পারে না। জ্ঞান, মনীষা ও বুদ্ধিমত্তা দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনের মূল হাতিয়ার। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের নেতা, ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধান হবে সেই ব্যক্তি, যে তাদের মাঝে সবচেয়ে বড় জ্ঞানী বা আলীম। এদিক থেকে সকলে সমান হলে সেই ব্যক্তি অগ্রসর হবে যে সুন্নাত সম্পর্কে অধিক অভিজ্ঞ। এতেও সকলে সমান হলে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ইমাম বা নেতা হবেন। কোনো ব্যক্তি যেন অপর কোনো ভ্রাতার প্রভাব প্রতিপত্তির স্থানে নেতৃত্ব না করে এবং তার ঘরে ও তার গদীর ওপরে তার বিনা অনুমতিতে না বসে।’ এই হাদিসে প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধানকে জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ হতে হবে। অনুরূপভাবে সুস্বাস্থ্য আল্লাহপাকের এক শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। এই নিয়ামতের অধিকারী ব্যক্তিরা বড়ই ভাগ্যবান। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর নিকট উত্তম স্বাস্থ্য কামনা কর।’ এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের মাঝে ব্যস্ততার যেমন শেষ নেই, তেমনি পরিশ্রমেরও অন্ত নেই। রাষ্ট্রপ্রধান বা পরামর্শ সভার সদস্যদের স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে, তাদের পক্ষে এই গুরুভার বহন করা মোটেই সম্ভব নয়।
৪. পদলোভী ও পদপ্রার্থী না হওয়া : পদলোভ ও পদ প্রার্থনার প্রত্যাশী না হওয়া রাষ্ট্রপ্রধান ও পরামর্শ সভার সদস্যদের উচিত। ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা ও পরামর্শ সভার দায়িত্বপূর্ণ কাজ নির্বাহ করা খুবই কঠিন। মেধা, বিচক্ষণতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব সহকারে এখানে পথ চলতে হয়। অসচেতন ও অমনোযোগী হওয়ার কোনো সুযোগ এখানে নেই। তাই সকল মানুষ এই দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখে না। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপূর্ণ পদের লোক এবং এ সকল পদের প্রার্থীগণকে রাসূলুল্লাহ (সা.) উপেক্ষা করেছেন এবং তাদের এ কাজ যে গর্হিত তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।
হযরত আবু মুসা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি এবং আমার চাচার বংশের দু’ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর খেদমতে হাজির হলাম। অপর দু’জন লোকের একজন বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ, মহান আল্লাহপাক আপনাকে যে ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রদান করেছেন, এর কোনো দায়িত্বপূর্ণ কাজে আমাকে নিযুক্ত করুন। অপরজনও একই ধরনের প্রার্থনা জানাল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, আমি এমন কাজে কাউকেই নিয়োগ করব না, যে এর জন্য প্রার্থনা করে এবং তা পাওয়ার জন্য লোভ পোষণ করে।’ অনুরূপভাবে অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমীর বা নেতার পদ লাভের জন্য প্রার্থী হয়ো না। কেননা এই পদমর্যাদা যদি তুমি প্রার্থনা করে লাভ কর তবে তোমাকে এরই নিকট সোপর্দ করে দেয়া হবে।’
শুধু তাই নয়, কোনো বিচারকের পদের জন্য প্রার্থনা করা ও লোভ করাও অন্যায়। পদ লোভ ও পদপ্রার্থী না হওয়ার মূলে যে হেকমত নিহিত আছে তা হলো এই যে, যে লোক পদপ্রার্থী হবে তাকে কোনো পদ না দেয়ার কারণ হলো, তাকে তা দেয়া হলে তাকে এর প্রতিই সোপর্দ করা হবে। একইভাবে উপযুক্ত না হলে তাকে কোনো পদ দেয়া ঠিকও নয়।
৫. বিদআতের অনুসারী না হওয়া : ইসলামের বিধি-বিধানের মাঝে বিদআতের অনুপ্রবেশ এক মারাত্মক অভিশাপ। বিদআত বলতে এমন কোনো কাজ, কথা ও পথকে বুঝায়, যা শরীয়তের কোনো বিধানের ওপর নির্ভরশীল নয়। এমন কাজ, এমন কথা ও পথকে বুঝায়। যা শরীয়তের কোনো বিধানের ওপর নির্ভরশীল নয়। এমন কাজ, এমন কথা এবং এমন পথকে শরীয়তসম্মত বলে মনে করা বা মেনে নেয়ার নামই বিদআত।
চলমান জীবনে নতুন কোনো সমস্যা দেখে দিলে, ইজতিহাদের মাধ্যমে এর শরীয়তসম্মত বিধান দানের ব্যবস্থা ইসলামে আছে। এই ইজতিহাদ যুগে যুগে কালে কালে শরীয়তসম্মত পন্থায় যাবতীয় সমস্যার সমাধান দিয়ে আসছে। কিন্তু বিদআতের ক্ষেত্রে শরীয়তসম্মত সমাধান দেয়া মোটেই সম্ভব নয়। কারণ, শরীয়তের আইনানুগ রীতি ও পদ্ধতির সাথে কল্পিত বিদআতের কোনো সংশ্রব নেই। মানুষের ঝোঁক, প্রবণতা বা শরীয়তসম্মত নয়, তদনুযায়ী কাজ করাই বিদআত। এ কারণেই খিলাফতকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রাজত্বের অংশ বিশেষ মনে করা, কোরআন ও সুন্নাহ পরিহার করে ইচ্ছামত শাসন কাজ পরিচালনা করা, সম্পত্তির বণ্টন নীতিতে মনগড়া ব্যবস্থা চালু করা, মদ-জুয়ার প্রচলন করা, ব্যক্তি অধিকার ও মালিকানা হরণ করা, মানুষের মধ্যে বর্ণ-গোত্র, সম্পদ ও অর্থের পরিমাণের ভিত্তিতে পার্থক্যের জগদ্দল প্রাচীর সৃষ্টি করা সব কিছুই বিদআত।
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী বিদআতের সংজ্ঞা এভাবে নির্ধারণ করেছেন, বিদআত অর্থ নতুন কথার সৃষ্টি, যার কোনো মূল উৎস ও মানদন্ড নেই। তবে যার মূলে শরীয়তের কোনো দলিল-প্রমাণ পাওয়া যায়, তা বিদআত নয়।



 

Show all comments
  • সুফিয়ান ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ৫:৪২ এএম says : 0
    এই ধরনের লেখা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে এবং এসব লেখা থেকে ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ পাই। তাই আপনাদেরকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Abu Taher ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ৫:৪২ এএম says : 0
    thanks to the writer
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rasel ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ৫:৪২ এএম says : 0
    very nice writing
    Total Reply(0) Reply
  • Nasrul Haque ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ৫:৪৪ এএম says : 0
    অনেক সুন্দর লিখেছেন। এমন একটি লেখা জাতিকে উপহার দিয়েছেন। আল্লাহ আপনাকে জাঝায়ে খায়ের দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • জুবায়ের ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ৫:৪৬ এএম says : 0
    ধরাবাহিকভাবে ইসলাম বিষয়ে এই লেখাগুলো প্রকাশ করার জন্য দেশের বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাবকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি এর সার্বিক সাফল্য কামনা করছি
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Imam Hasan ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:২২ পিএম says : 0
    Mashallah excellent documents
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Taslim ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৩৮ পিএম says : 0
    Inqilab should take initiative to establish Islamic govt not secular govt.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন