Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চায়ের বাজার চাঙ্গা

অধিকাংশ বাগানে চা-গাছের বার্ধক্য অনাবৃষ্টিতে উৎপাদনে রফতানি শূন্যের কাছাকাছি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

চায়ের বাজার বেজায় চাঙ্গা। বিকিকিনি বেড়েই চলেছে। দেশে এমনিতেই চা পানের চাহিদা বৃদ্ধির দিকে। সেই তুলনায় উৎপাদন সীমাবদ্ধ। অনেক সময়েই তা ঘাটতির পর্যায়ে। তার ওপর শীত মৌসুমে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের রাজনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠছে। শহর বন্দর গ্রামে দিন দিন আড্ডা-আসর সরগরম হচ্ছে। উঠেছে ‘চায়ের কাপে ঝড়’। এরফলে চা পানের চাহিদাও বেড়ে চলেছে সমানতালে। দেশে বার্ষিক প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে গোটা চা শিল্প ও বাণিজ্য খাতকে ঘিরে।
এদেশের ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পের সুখবর হচ্ছে চলতি বছরের গোড়া থেকেই চায়ের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি অব্যাহত আছে এখনো। বিক্রি হচ্ছে আগের তুলনায় বেশী পরিমান চা। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অবস্থিত দেশের প্রায় পৌনে এক শতাব্দী প্রাচীন আন্তর্জাতিক চা নিলাম বাজারে গত পরশু ২৩ অক্টোবর (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত মৌসুমের ২৫তম সেলে দর ছিল বেশ চাঙ্গা। মানসম্মত ভালো চা কেজিপ্রতি ৩শ’ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত চা পাতা বিক্রি হয়েছে মোট ৪ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার ৩৮৪ কেজি। আর গড়মূল্য পড়েছে প্রতিকেজি ২৬৭ টাকা ৭৪ পয়সা। অন্যদিকে গতবছর (২০১৭) সালের একই সময়ে চা পাতা বিকিকনি হয় ৪ কোটি এক লাখ ৩০ হাজার ৩২৬ কেজি। তখন গড়মূল্য ছিল ২০৯ টাকা ৮৫ পয়সা। গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ৩৬ লাখ কেজি অতিরিক্ত পরিমানে চা পাতা বিক্রি হয়েছে। সেই সাথে গড়মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে কেজিপ্রতি ৫৭ টাকা ৮৯ পয়সা হারে।
তবে চা শিল্প-বাণিজ্য খাতে দুঃসংবাদ হচ্ছে মূলত দুইটি। এক. নিকট অতীতকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত চায়ের কদর এবং বাজার চাহিদা দুইই ছিল। কিন্তু তা আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। দেশের প্রায় ১৬০টি উৎপাদনশীল চা বাগানে আবাদ ও ফলনকৃত চা অভ্যন্তরীণ ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গিয়েই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন ৬ কোটি কেজির অঙ্কের ঘরেই ওঠানামা করছে। এ অবস্থায় চলতি বছরে এ যাবত চা পাতা রফতানি করা হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আর অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো হচ্ছে ৯৯ দশমিক ৯৬ ভাগ চা দিয়েই। কাগজে-কলমে বর্তমানে চা যাকে ‘রফতানি’ (দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ) বলা হচ্ছে বাস্তবে তা অভ্যন্তরীণ প্যাকেটিয়াররা কিনে নিয়ে হরেক ব্রান্ডের প্যাকেটজাত চা বাজারজাত করছে। এমনকি এই চা পাতাকে ‘বিদেশী’ উন্নতজাতের আমদানিকৃত চা বলেও প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এতে করে চা রফতানি এখন শূন্যের কাছাকাছি পর্যায়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাজার চাহিদা এবং মূল্য বৃদ্ধি পেলেও চায়ের উৎপাদনে মন্দাদশা চা শিল্প খাতের দ্বিতীয় দুঃসংবাদ। চলতি বছরের গত আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশে চা উৎপাদিত হয়েছে ৩ কোটি ৭০ লাখ কেজি। অথচ গত বছরের একই সময়ে দেশে চা উৎপাদিত হয় ৩ কোটি ৯৫ লাখ কেজি। অর্থাৎ এবার ২৫ লাখ কেজি চা কম ফলন হয়েছে। চা শিল্প-বাণিজ্য খাতের অভিজ্ঞ কাজী মোঃ কেফায়েত উল্লাহ গতকাল (বুধবার) দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চায়ের আবাদ ও উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য হচ্ছে বৃষ্টিপাত। এ বছর বৃষ্টি হয়েছে দেরিতে। বৃষ্টিপাতেও ছিল ঘাটতি ও অসঙ্গতি। এরফলে চা বাগানগুলো সিক্ত, আর্দ্র ও সতেজ হয়ে ফলন বেশী দিতে পারছে না। তাছাড়া অধিকাংশ বাগানে চা-গাছ বয়োঃবার্ধক্যে উপনীত হয়েছে। এ কারণে উৎপাদনে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। সেসব পুরনো গাছের পরিবর্তে ভালো জাতের গাছ লাগানো (নতুন প্লান্টেশন) করা প্রয়োজন। পঞ্চগড়সহ উত্তর জনপদে নতুন প্লান্টেশনের কারণে বাগানগুলো অধিক চায়ের ফলন দিচ্ছে। গুণগত মানেও উৎকর্ষতা রয়েছে।
এ বছর দেশজুড়ে ভরা বর্ষায় খরার দহন, বর্ষা শেষেও অনাবৃষ্টি, অনিয়মিত বৃষ্টি, খরা, তাপপ্রবাহ নিকট অতীতের রেকর্ড অতিক্রম করে। গত শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ভরা বর্ষা মৌসুমে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত হয় ৩৬.৩ শতাংশ কম। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় ৪৩.৬ শতাংশ কম। গত এক বছর ধরে বৃষ্টি-প্রধান অঞ্চল এবং চায়ের প্রধান এলাকা বৃহত্তর সিলেটে বৃষ্টিপাতে ঘাটতি অসঙ্গতি অর্থাৎ বৈরী ও বিপরীতমুখী আবহাওয়ার কারণে চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হয়।
এদিকে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক চা নিলাম বাজারে ৪৪ হাজার ৭৫৬ ব্যাগ পাতা চা এবং ৭ হাজার ৯৮৯ ব্যাগ গুঁড়ো চা বিক্রির জন্য আনা হয়। এরমধ্যে ৮৯ শতাংশ গুঁড়ো চা এবং ৮৩ শতাংশ পাতা চা বিক্রি হয়েছে। বিক্রিত চায়ের বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে ব্রোকেন বেস্ট প্রতিকেজি ২৯৩ টাকা থেকে ৩০৩ টাকা, গুড ২৮৩ থেকে ২৯২ টাকা, মিডিয়াম ২৭১ থেকে ২৮২ টাকা, প্লেইন ২৪০ থেকে ২৭০ টাকা, ফেনিংস ২৯৩ থেকে ৩০৫ টাকা দরে বিক্রি হয়।
নিলাম বাজারে উৎকৃষ্টমানের ও বিশেষভাবে চয়নকৃত চা সীমিত পরিমাণে হলেও বিক্রি হয়েছে চড়া দামে। পাতা চায়ের মধ্যে রয়েছে- মধুপুর জিবিওপি ক্লোন চা প্রতিকেজি ৩২০ টাকা, ক্লিবডন জিবিওপি ক্লোন ৩২০ টাকা, মধুপুর পিএফ ৩২৭ টাকা, বৃন্দাবন ডিএমপিএফ ৩০৫ টাকা। গুঁড়ো চায়ের মধ্যে রয়েছে- মধুপুর আরডি ৩১৫ টাকা, ক্লিপডন ৩শ’ টাকা, সিডি ৩০৫ টাকা, লালাখাল ডাস্ট ২৯৪ টাকায় বিকিকিনি হয়েছে।
প্রসঙ্গত বিশ্ববাজারে জনপ্রিয় ও বনেদী পানীয় চায়ের চাহিদা, কদর ও দরদাম ওঠানামা হয়ে থাকে চায়ের ঘ্রাণ, রঙ ও স্বাদ এই তিনটি ফ্যাক্টরের ওপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশে এক্ষেত্রে চায়ের উৎকর্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুগোপযোগী উদ্যোগ অনেকাংশে অনুপস্থিত। বাগানগুলোতে বার্ধক্যে জর্জরিত চা গাছ নবায়নের পদক্ষেপ এখনও সীমিত। তবে তা পাতার উৎপাদন প্রক্রিয়াজাত ও বৈচিত্র্যকরণের ফলে ভিন্ন ভিন্ন আস্বাদনের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের। বেড়েছে মূল্যও।



 

Show all comments
  • ১৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১:০৭ পিএম says : 0
    very nice post, i certainly love this website, keep on it
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ