দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
হযরত ইমাম মাহদীর (আঃ) আবির্ভাবের পর হতে এই সময় পর্যন্ত সাত বৎসর অতীত হবে। এই সময় একটা সংবাদ প্রচারিত হবে যে, দাজ্জালের আবির্ভাব হয়েছে এবং তারা মুসলমানদের উপরে ভীষণ অত্যাচার করছে। দাজ্জালের সেনাবাহিনী যখন মুসলমানদের উপরে অসহনীয় অত্যাচার ও নির্যাতন করতে থাকবে, সে সময় হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) দামেস্ক অবস্থান করবেন। এই সময় একদা দামেস্কের জুম্মা মসজিদে মুয়াজ্জিন আছরের নামাযের আযান দিলে মুসল্লীগণ নামাযের জন্য প্রস্তুত হবে। ঠিক এমন সময় দু’জন ফেরেশ্তার কাঁধে ভর করে হযরত ঈসা (আঃ) মসজিদের পুর্বদিকের মিনারের উপরে অবতরণ করবেন এবং সেখান থেকে তিনি একটা সিঁড়ি দেয়ার জন্য মুসল্লীদেরকে আহ্বান করবেন। মুসল্লীগণ সিঁড়ি দিলে তিনি নিচে নেমে এসে হযরত ইমাম মাহদীর (আঃ) সাথে মোসাফাহ করবেন। এরপর ইমাম মাহদী তাকে নামাযের ইমামতি করতে অনুরোধ করবেন, কিন্তু হযরত ঈসা (আঃ) তাতে অসম্মতি জানিয়ে বলবেন, না, আমার জামানায় জামাতে নামাজ পড়ার বিধান ছিল না, আমি কোন দিন কোন জামাতের ইমামতি করিনি। একমাত্র দ্বীনে মুহাম্মদীতেই জামাতে নামাজ পড়ার ও জামাতে ইমামতি করার বিধান আছে, সুতরাং আপনিই ইমামতী করুন। অতঃপর হযরত ইমাম মাহদী (আঃ)-ই ইমামতী করবেন এবং হযরত ঈসা (আঃ) তাঁর পিছনে মোক্তাদী হয়ে আছরের নামায পড়বেন। তারপর ইমাম মাহদী (আঃ) দাজ্জালের আবির্ভাব ও মুসলমানদের উপর তার অমানুষিক অত্যাচার সম্বন্ধে আলাপ আলোচনা করবেন। নামায শেষ হবার পর হযরত ঈসা (আঃ) বলবেন, তোমরা দরওয়াজা খোলো। দরওয়াজা খোলা হবে। দেখা যাবে, উহার বিপরীত দিকে দাজ্জাল অবস্থান করছে। তার সহিত সত্তর হাযার ইহুদী রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের নিকট তরবারি ও তাজ রয়েছে। হযরত ঈসা (আঃ) দাজ্জালের দিকে তাকাতেই গলে যেতে থাকবে, যেমন গলে যায় পানির মধ্যে লবণ। সে পালাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু হযরত ঈসা (আঃ) তাকে বলবেন, তোমাকে আমি নিশ্চয় একটি আঘাত করব। উহা হতে তুমি কিছুতেই রেহাই পাবে না। এদিকে হযরত ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে হত্যা করতে অগ্রসর হবেন আর অপর দিকে মুসলিম সেনাগন দাজ্জালের দলবলকে আক্রমন করবে। পাপীষ্ট দাজ্জাল হযরত ঈসা (আঃ)-কে দেখেই উর্ধ্বশ্বাসে দৌঁড়ে পালাতে চেষ্টা করবে, কিন্তু হযরত ঈসা (আঃ)-এর হাত হতে সে নি®কৃতি পাবে না। একদিকে মুসলিম সেনাগণ দাজ্জালের সহচরদেরকে পঙ্গপালের ন্যায় হত্যা করতে থাকবে। উপায়ন্তর না দেখে তারা পাহাড় পর্বত, বন জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণ করবে, কিন্তু মুসলমান সৈন্যদের হাত হতে তারা কেউই রক্ষা পাবে না। তিনি পুর্বদিকে অবস্থিত ‘লুদ’ প্রান্তে তাকে পাকড়াও করে হত্যা করবেন। এভাবে আল্লাহ তাআলা ইহুদীদিগকে পরাজিত করবেন। প্রস্তর, বৃক্ষ, প্রাচীর, চতুষ্পদ প্রাণী ইত্যাদি যে কোনো বস্তুর আড়ালেই ইহুদীগণ আশ্রয় লউক, আল্লাহ তাআলা সেইদিন সেইগুলিকে ভাষা দিবেন। উহারা ডেকে বলবে, ওহে আল্লাহর মুসলিম বান্দাগণ। এই একজন ইহুদী। আসো উহাকে হত্যা করো। তবে বাবলা বৃক্ষ তাদেরই বৃক্ষ। উহা মুখ খুলবে না।-(তাফসীরে ইবনে কাসীর)
দাজ্জালের মৃত্যুর পর হযরত ঈসা (আঃ) ও হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) একত্রে দাজ্জালের অত্যাচারিত দেশসমূহে ভ্রমন করে সর্বত্র শান্তি স্থাপন ও শাসন শৃংখলা বিধান করবেন। তাঁরা উভয়েই সেসব দেশের ইহুদী খৃষ্টানদেরকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণের জন্য আহ্বান করবেন। যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করবে না, তাদেরকে হত্যা করা হবে। ফলে তখন দুনিয়ার বুকে আর একজন অমুসলামনও থাকবে না। এর কিছুকাল পরে উনপঞ্চাশ বছর বয়সে ইমাম মাহদী ইন্তেকাল করবেন ও হযরত ঈসা (আঃ) রাজ্য পরিচালনা করতে থাকবেন। দেশের জনসাধারণের মধ্যে আবার পরম সুখ-শান্তি ফিরে আসবে। হযরত ঈসা (আঃ) আসমান হতে অবতরণের পর মোট চল্লিশ বৎসর দুনিয়াতে অবস্থান করবেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি বিবাহ করবেন এবং তাঁর সন্তান-সন্তুতি জন্মগ্রহণ করবে। হযরত ঈসা (আঃ) পূর্বে যখন দুনিয়ায় এসেছিলেন তখন তিনি বিবাহ করেননি, এমন কি বসবাস করার জন্য তাঁর নিজস্ব কোন ঘর-বাড়ী পর্যন্ত ছিল না। দ্বিতীয়বার দুনিয়ায় আগমনের চল্লিশ বৎসর পর তিনি মদীনায় ইন্তেকাল করবেন এবং হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পবিত্র রওজা মোবারকের নিকট তাঁকে সমাহিত করা হবে।-(তাফসীরে ইবনে কাসীর)
আল্লাহ তায়ালা কোরআন শরীফে সূরা কাহাফ নাযিল করেছেন। কাহাফ আরবী শব্দ। এর অর্থ গর্ত। সাত জন যুবক এক গর্তে ঘুমিয়ে ছিল ৩০৯ বছর। এই সাতজন যুবকের কবর সিরিয়া এবং বেথেলহেমের মাঝে এক জায়গায় আছে। ইসা (আঃ) যখন পৃথিবীতে আগমন করবেন, তখন অলৌকিকভাবে এই সাতজন যুবক জীবিত হবেন। এই কবরের পাশে একটি গাছ সেই যুগ থেকে এখনও পর্যন্ত জীবিত আছে। ইসা (আঃ)-এর বিবাহ অনুষ্ঠান এই গাছের নীচে হবে এবং বেহেশত থেকে এই বিবাহ অনুষ্ঠানের খাবার আসবে। আখেরী জামানার ঘটনার সাথে এই সূরার সম্পর্ক আছে বিধায় সূরা কাহাফের প্রথম ও শেষ ১০ আয়াত মুখস্ত রাখলে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকা যায়। হযরত ইবনে আব্বাস ও আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি জুমআর দিন অথবা তার রাতে সূরা কাহফ পাঠ করে, তাকে তার পড়ার স্থান থেকে মক্কা শরীফ পর্যন্ত নূর দান করা হয় এবং দ্বিতীয় জুমআ ও আরও তিন দিনের মাগফেরাত করা হয়। সত্তর হাজার ফেরেস্তা সকাল পর্যন্ত তার প্রতি রহমত প্রেরণ করে। সে ব্যথা, পেটের ফোড়া, বাত, কুষ্ঠ এবং দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকে। অন্য রেওয়ায়েতে আছে, সূরা কাহাফের প্রথম ও শেষ ১০ আয়াত মুখস্ত রাখলে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকা যায়।-(তাফসীরে ইবনে-কাসীর)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।