দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
বর্তমান সময়ে ইসলামী বিশ্বের জ্ঞানী, চিন্তাশীল ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের জন্য সর্বাপেক্ষা আলোচ্য ও অনুসন্ধানী বিষয় হযরত ইমাম মাহদী (আ:)। কারণ, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি বিশেষ করে মুসলমানদের দুঃখজনক অবস্থা।
ইসলামী শরীয়তে দলিলী বা প্রমাণ দুই ভাগে বিভক্ত- (১) কোরআনিক দলিল, (২) হাদীসভিত্তিক দলিল। ইমাম মাহদী (আ:) ও তার আবির্ভাব সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে কোরআনিক দলিল উপস্থাপন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এ বিষয়ে হাদীসভিত্তিক দলিল অনেক।
মাহদি শব্দটি আরবি হেদায়েত শব্দ থেকে এর উৎপত্তি। আভিধানিক অর্থ হেদায়েতপ্রাপ্ত ব্যক্তি, সত্যের অনুসারী। পরিভাষায় মাহদি হলো যিনি নিজে সুনিশ্চিতভাবে হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছেন এবং মানুষকে মুক্তির পথের দিশা দেন। এ অর্থে সব নবী-রাসুল মাহদি ছিলেন।
আমাদের প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর শত উপাধি বা গুণবাচক নামের মধ্যে এক নাম হলোÑ মাহদি। প্রকৃত অর্থে আল্লাহ তায়ালা হলেন হাদি বা হেদায়েত দাতা। তার সত্যের অনুসারীরা হলেন মাহদী।
শেষ জামানায় এ উম্মতের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মোহাম্মদ নামে মহান বুজুর্গ মুজতাহিদকে পাঠাবেন। তার উপাধিও হবে মাহদি। আমাদের এতদঞ্চলে হযরত মাহদী আলাইহির রহমাহকে ইমাম মাহদী (আ.) নামে অভিহত করা হয়। (দ্র: মুফতি শাঈখ মুহাম্মদ উছমানগনী, সহ-অধ্যাপক আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সূফিজম)।
প্রথমে আমাদের জানা প্রয়োজন মাহদী শব্দের উৎপত্তি ও অর্থ। মাহদী শব্দটির মূল ধাতু হচ্ছে ‘হাদিউন’। এর আভিধানিক অর্থ সুপথ, সোজাপথ, উজ্জ্বলপথ। মাহ্দী’ শব্দের ব্যবহারিক অর্থ সুপথপ্রাপ্ত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব, সত্যোজ্জ্বল সত্তা, সেহায়েতপ্রাপ্ত ব্যক্তি। (দ্র: আল মুনজেদ, লেসানুল আরব, মিছবাহ)
আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে নূরের (আলো) দিকে হেদায়েত করেন।’ তিনি তার প্রিয় বন্ধু মোহাম্মদ (সা.)-কে বলেছিলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি যাকে চান, তাকে হেদায়েত করতে পারবেন না।’ এতে বুঝা যায়, কাউকে হেদায়েত করা না করা আল্লাহর দয়ার ওপর।
শেষ জামানায় এসে পথভ্রষ্ট মানব জাতিকে বিশেষ করে বিশ্ব মুসলমানদের বড় দুর্দিনে আল্লাহ ও রাসুল কর্তৃক একজন আধ্যাত্মিক নেতার আবির্ভাব হবে। তিনিই হবেন শেষ জামানার মহানায়ক হযরত ইমাম মাহদী (আ.)। বারো শরীফের মহান ইমাম (র.) বলেছিলেন; ‘মাহদী, উনার নাম নয়, এটা উনার উপাধি। মাহদী অর্থ সংস্কারক। যিনি এসে ধর্মকে যুগোপযোগী করবেন। তিনি হবেন রাসূলের প্রতিনিধি। যিনি ভিতরে বাইরে আশেকে রাসূল হবেন। তার ওপর রাসূলের রুহানী সমর্থন থাকবে। যিনি ইসলামকে পুনঃজীবন দান করবেন। মাহদী, সেই যিনি রাসূলকে অনুসরণ ও অনুকরণ করবেন, রাসুলকে যিনি ভালোবাসবেন আর রাসূলও যাকে প্রতিনিধি মনোনীত করবেন। ইমাম মাহদীর পরও তার খেলাফত চলতে থাকবে। এক একজন এক এক দিকে এগিয়ে যাবে। তবে প্রথম যিনি ‘মোহাম্মদী’ প্রচার করবেন। তিনিই ইমাম মাহদী। তার ওপর রাসূলের রুহানী সমর্থন থাকবে এবং খেলাফত পাবেন। তবে এটা এখনো বুঝে উঠতে পারি নাই, তিনি যে মাহদী এটা বাতেনী অবস্থায় থাকবে না প্রকাশ পাবে।
রাসূল নিজেকে শেষ নবী বলে ততদিন পর্যন্ত দাবি করেন নাই যতদিন না আল্লাহর নির্দেশ পান নাই। রাসূল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হয় যে ইব্রাহিমী কতদিন পর্যন্ত চলবে? উনি তখন চাঁদের দিকে তার শাহাদৎ অঙ্গুলি নির্দেশ করেন। সেদিন ছিল চাঁদের ১৪ তারিখ। অর্থাৎ ১৪শ’ হিজরির পর ইব্রাহিমী বিদায় নিয়ে মোহাম্মদী প্রকাশ পাবে। ইমাম অর্থ নেতা, মাহদী তার উপাধি। তার চেয়ারের নাম ইমাম মাহদী পূর্ণরূপে ‘মোহাম্মদী’ প্রচার করবেন। তিনি হবেন যুগশ্রেষ্ঠ। প্রতি একশত বছরের মাথায় (প্রথমদিকে) এরা এসে থাকেন। এর পূর্বে ছিলেন আশরাফ আলী থানবী। তিনি বাংলা, আসাম, বার্মায় বহু প্রভাব ফেলেছিলেন। তারই মুরিদ হাফেজ্জী হুজুর। পূর্বের যেসব মোজাদ্দেদ এসেছিলেন তাদের থেকে ইমাম মাহদী স্বতন্ত্র হবেন। তারপর আর মোজাদ্দেদ আসবে না। তবে তার খেলাফতে লোক আসবে।
* রাসূল (সা,) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতের জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর প্রারম্ভে এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন যিনি উম্মতের স্বার্থে তাঁর দ্বীনের (ইসলাম) সংস্কার সাধন করবেন। (আবু দাউদ শরীফ : হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত ছহীহ হাদীস বলে স্বীকৃত)।
‘সিরাজুম মুনিরা গ্রন্থে’ মোজাদ্দিদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘দ্বীনের সংস্কার (তাজদীদ) বলতে বুঝায় কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে যে জীবন ব্যবস্থা নিভু নিভু প্রায় সেটাকে জিইয়ে রাখা এবং পুনরায় কোরআন ও সুন্নাহর হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা।’
হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলা হয়, প্রত্যেক শতাব্দীর মাথায় এ অর্থ শতাব্দীর শেষ, আবার শতাব্দীর প্রথম উভয়ই হতে পারে। কিন্তু শতাব্দীর মধ্যভাগে হবে না। তাজহীদ’ অর্থ কোনো বিষয়কে নতুন করা বা সংস্কার করা। যিনি এরূপে কাজ করেন তিনি মোজাদ্দিদ। আল্লামা হক্কী এর বর্ণনানুযায় মোজাদ্দিদ যিনি হবেন তিনি এক শতাব্দীর সমাপ্তি লগ্নে দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুতে হওয়া আবশ্যক। আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী (রা) তার ‘মিরকাতুস সাউদ শরহে সুনানে আবু দাউদ’ গ্রন্থে এ কথা উল্লেখ করেছেন।
ইসলামী শরীয়তের প্রখ্যাত আইনবেত্তা আল্লামা হক্কী (র.) প্রণীত ‘হাশিয়ায়ে সিরাজুল মুনীর শরহে জামেয় সগীর’ নামক গ্রন্থে তাজদীদের যে ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন তা হলো- তাজদীদে দ্বীনের অর্থ কোরআন সুন্নাহকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং কোরআন ও সুন্নাহর যেসব বিধানাবলি নিশ্চিহ্ন বা বিলুপ্ত প্রায় তা নতুন রূপে পুনরুজ্জীবিতকরণ, এবং কোরআন হাদীসসম্মত বিধানাবলির প্রবর্তন।
লেখক, ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।