Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিষ্ঠুরভাবে মানুষ হত্যা চরম অমানবিক

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

যে কোনো হত্যাকান্ডই নিন্দনীয়। অকারণে প্রাণী হত্যাও সমর্থনযোগ্য নয়। ইসলাম এমনকি প্রয়োজন ছাড়া একটি গাছের পাতাও ছিড়তে নিষেধ করে। হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমরা কোনো গর্তে পেশাব করো না।’ এর কারণ কোনো পোকা-মাকড় বা পিঁপড়ে এতে কষ্ট পাবে। অন্য হাদিসে আছে, ‘প্রয়োজনে কোনো কীটপতঙ্গ বা কষ্টদায়ক প্রাণী মারতে হলেও কম কষ্ট দিয়ে দ্রুত মেরে ফেলবে। অবশ্যই আগুনে পোড়াবে না। কারণ, একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আগুনে পোড়ানোর অধিকার আর কাউকে দেয়া হয়নি।’
যুদ্ধকালে কেবল আক্রমণকারী শত্রু কেই হত্যা করা যায়। কিন্তু মধ্যযুগীয় নিয়মে তার মৃতদেহ বিকৃত করা ইসলামে চিরতরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যা জাহেলি যুগে প্রচলিত ছিল। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘অকারণে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা হারাম। যে কোনো কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করবে, সে হবে চিরস্থায়ী জাহান্নামের বাসিন্দা। যেখান থেকে তার কোনো পরিত্রাণ নেই।’ আল কোরআন।
মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি একটি মানুষকে হত্যা করল, সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করল।’ আল কোরআন। কেননা আল্লাহর কাছে তার প্রিয় সৃষ্টি প্রতিটি মানুষই এক পৃথিবী মানুষের সমান গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, আল্লাহ তায়ালা নবী করিম সা.-এর মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, ‘যদি বিশ্বের সব মানুষ মিলেও আমার কোনো বান্দাকে হত্যা করে, তাহলে এর বিনিময়ে আমি সবাইকেই জাহান্নামের আগুনের স্বাদ আস্বাদিত করাবো।’
অপর হাদিসে আছে, ‘হত্যাকান্ডে সমর্থন দেয়া আর অংশ নেয়া সমান কথা। যদি কোনো মানুষ হত্যার সময় কেউ বলে, ‘উক্’ তবে তাকেও হত্যাকারী হিসাবে গণ্য করা হবে।’ আল হাদিস। ‘উক্’ অর্থ কিছুই না। এটি কথার অর্ধেক অংশ। সবটুকু কথা হলো ‘উক্তুল’ যার অর্থ ‘মারো’। হাদিসে মারো না বলে শুধু ‘মা...’ পর্যন্ত বললেও হত্যাকারী রূপে হাশরের দিন চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন।
বর্তমান যুগে কারণে-অকারণে মানুষ মানুষকে হত্যা করছে। বিধ্বংসী বোমায় লাখো নিরপরাধ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার প্রাণ হরণ করা হচ্ছে পৃথিবীব্যাপী। এসবের অনুপুঙ্খ বিচার মহান আল্লাহর আদালতে একদিন হবেই হবে। আমাদের বাংলাদেশেও মানুষ মানুষকে হত্যা করে। কে কাকে কেন হত্যা করে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তবে অসহায় মানুষ কিছু করতে না পারলেও মানুষের রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার সাথে সাথে তা ভ‚পৃষ্ঠকে কম্পিত করে দেয়। জমিন ভয় পায়, আল্লাহর আজাব নেমে আসে কি না।
মজলুম মানুষের আর্তনাদ, মা, স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয় বন্ধুদের হাহাকার আল্লাহর আরশে সরাসরি পৌঁছে যায়। আরশে কম্পন সৃষ্টি করে। আল্লাহ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জালিমকে ছাড় দেন। পরে সময়মতো পাকড়াও করেন। খুনের বদলা না নিয়ে আল্লাহ ছাড়েন না। ইহলোকে না হলেও পরলোকে প্রতিটি অন্যায় হত্যাকান্ডের বিচার আল্লাহ করবেন।
আমাদের দেশে প্রায়ই দেখা যায়, বহু মানুষকে কে বা কারা হত্যা করে রাস্তাঘাটে, খালে-ডোবায়, মাঠে-ময়দানে, ঝোপ-জঙ্গলে ফেলে রাখে। হত্যাকারীর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। নিরীহ মানুষ গায়েব হয়ে যায়, পরে মরে পড়ে থাকে। ইদানীং আরো নিষ্ঠুরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। হত্যার পর মাথা থেঁতলে দেয়া, চেহারা বিকৃত করা, দেহ আঘাতে খন্ড-বিখন্ড করা ইত্যাদি অমানবিক আচরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কোনো কারণে মানুষকে এভাবে মেরে ফেলা, সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ও চরম ভয়ভীতি আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া বিশাল উদ্বেগের বিষয়।
হাদিস শরিফে আছে, ‘যারা মানুষের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করে, হাশরের দিন আমি আল্লাহ তাদেরকে চরম সন্ত্রস্ত করে ছাড়ব।’ আল হাদিস। যারা অন্যায় করে তাদের এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, আল্লাহ সব দেখেন ও শোনেন। তিনি তার বান্দাদের ব্যাপারে সদা অবহিত। কোরআন শরিফে আছে, ‘আজ আমি (কেয়ামতের দিন) তাদের মুখে সিল মেরে দেবো। কথা বের করে আনব তাদের হাত থেকে। সাক্ষী দেবে তাদের পাসমূহ।’ আল কোরআন।
হত্যাকারী বা অন্য অপরাধীরা দুনিয়াতে পার পেয়ে গেলেও শেষ বিচারের দিন তাদের জবান বন্ধ করে দেয়া হবে। কথা বলবে তাদের শরীর, হাত-পা, অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। সেখান থেকেই আল্লাহ নিহত ব্যক্তির খুনিকে শাস্তির জন্য প্রমাণ সংগ্রহ করবেন। মৃত ব্যক্তির রক্ত, হত্যার স্থান, অস্ত্র ইত্যাদি সেদিন আল্লাহর সামনে সাক্ষী দেবে। তার অপরাধ ছিল কি না বা সে মৃত্যুর সময় কি কি বলেছিল, কিভাবে আর্তনাদ করেছিল, খুনিরা কে কি ভ‚মিকায় ছিল সবই সেদিন মহা প্রযুক্তিবান, পরম বিজ্ঞানময়, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞ, সর্বোচ্চ বিচারক, আল খাবির, আল আলিম, আস সামিয়, আল বাসির ও আহকামুল হাকিমিনের দরবারে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে।
আল্লাহ বলেন, ‘কারো ওপর চুল পরিমাণ জুলুমও করা হবে না।’ ‘সেদিন অণু পরিমাণ অপরাধও অপরাধী দেখতে পাবে।’ আল কোরআন। আল্লাহ সবাইকে বোঝার তাওফিক দিন। মানুষ যেন নির্মমভাবে মানুষ হত্যা না করে। মহা বিচারের আগে মানুষ যেন অন্যায় থেকে তওবা করে নিতে পারে।



 

Show all comments
  • হাবিব ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৫:২১ এএম says : 0
    আল্লাহ সবাইকে বোঝার তাওফিক দিন।
    Total Reply(1) Reply
    • মো সরোয়ার ২৬ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:১৬ এএম says : 4
      ইসলামী প্রচারনা চালানোর জন্য ধন্যবাদ
  • মানিক ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৫:২২ এএম says : 0
    ইসলামের প্রত্যেকটি বিধানই মানব জাতির জন্য কল্যাণকর।
    Total Reply(0) Reply
  • টুটুল ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৫:২৩ এএম says : 0
    লেখাটির জন্য উবায়দুর রহমান খান নদভী হুজুরকে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • জয়নুল আবেদীন ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৫৫ পিএম says : 0
    ইসলামের বিধান মেনে আমাদেরকে সকল অন্যায় থেকে বিরত থাকতে হবে, তাহলেই পরকালীন মুক্তি সম্ভব
    Total Reply(0) Reply
  • রিপন ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৫৬ পিএম says : 0
    এই অমানবিক কাজটাই পৃথিবী জুড়ে এখন বেশি বেশি হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • তামান্না ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৫৮ পিএম says : 0
    আমরা যদি কোরআন ও হাদিসের কথা গুলো মেনে নিজেদের জীবন পরিচালনা করতাম তাহলে পৃথিবীতে সর্বত্র শাস্তি বিরাজ করতো। কোথাও কোন অশান্তি, মারামারি, কাটাকাটি কিংবা যুদ্ধ বিগ্রহ থাকতো না।
    Total Reply(0) Reply
  • জুবায়ের ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১:০০ পিএম says : 0
    ধরাবাহিকভাবে ইসলাম বিষয়ে এই লেখাগুলো প্রকাশ করার জন্য দেশের বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাবকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি এর সার্বিক সাফল্য কামনা করছি
    Total Reply(0) Reply
  • ফাতেমাতুজ্জহুরা ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১:০২ পিএম says : 0
    হত্যাকারী বা অন্য অপরাধীরা দুনিয়াতে পার পেয়ে গেলেও শেষ বিচারের দিন তাদের জবান বন্ধ করে দেয়া হবে। কথা বলবে তাদের শরীর, হাত-পা, অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। সেখান থেকেই আল্লাহ নিহত ব্যক্তির খুনিকে শাস্তির জন্য প্রমাণ সংগ্রহ করবেন। সুতরাং সেখানে পার পাওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মোজাম্মেল খান ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১:০৫ পিএম says : 0
    আমাদের সকলের উচিত বেশি বেশি পরকালকে স্বরণ করা, তাহলেই এসব অন্যায় করতে আমাদের বুক কাঁপতে। কারণ তখন আমাদের মনে পরবে যে রোজ কিয়ামতের দিন আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • রুবেল ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১:০৮ পিএম says : 0
    যারা নিষ্ঠুরভাবে মানুষ হত্যা করছে, তারা কী পবিত্র কোরআনের বাণী জানে না, নাকি ভুলে গেছে? পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘অকারণে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা হারাম। যে কোনো কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করবে, সে হবে চিরস্থায়ী জাহান্নামের বাসিন্দা। যেখান থেকে তার কোনো পরিত্রাণ নেই।’ ------ এটা সকলের স্বরণে রাখা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Shona ২৯ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:৩৬ পিএম says : 0
    I needed to thank you for this
    Total Reply(0) Reply
  • Solaiman Shah Mohammad Siddiquee ৫ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:৩২ এএম says : 0
    Hope our great Political leaders & Law enforcing people see this & help themselves correct in their life time, In Sa Allah.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন