Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আজ দায়িত্ব নিচ্ছেন নতুন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ

বিশাল দায়দেনা আর মাথাভারি প্রশাসনের সাথে বিপর্যস্ত বিসিসির নাগরিক পরিষেবা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বিশাল মাথাভারি প্রশাসন নিয়ে নতুন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বরিশালের নগর ভবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন আজ। এর আগে গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালের নতুন নগর পিতা সাদিক আবদুল্লাহকে শপথ পাঠ করান। পরে তিনি টুঙ্গিপাড়াতে বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করে বিশাল মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে সন্ধ্যায় বরিশালে পৌঁছেন। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে ফজলুল হক এভিনিউতে দলীয় সংবর্ধনা শেষে মেয়র নগর ভবনে প্রবেশ করবেন। এসব কর্মসূচির সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। ফজলুল হক এভেনিউর পূর্বাংশে নগর ভবন সংলগ্ন রাস্তায় বিশাল সামিয়ানা সহ প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে। ফলে রোববার থেকেই ঐ সড়কের অর্ধেক এলাকায় যানবাহন চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নৌ বন্দরমুখী রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় যাত্রীদের কিছুটা দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। দলের বিভিন্নস্তরের নেতা-কর্মীরা নতুন সিটি মেয়রকে বরণ করতে বরিশাল মহানগরীর প্রধান সব সড়কগুলোতে বিপুল সংখ্যক তোরণ নির্মাণ করেছেন। নগরীর রাস্তাগুলোতে নতুন মেয়রকে স্বাগত জানিয়ে বিপুল সংখ্যক প্লাকার্ডও লাগান হয়েছে।
তবে ৪র্থ মেয়র হিসেবে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে বিশাল মাথাভারি প্রশাসন, বেশীরভাগ রাস্তাঘাটের জীর্ণ দশার সাথে আবর্জনার ভাগাড় আর রুদ্ধ পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থাসহ একটি জঞ্জালের নগরীর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। সজানা গেছে, নগর ভবনের দেড় সহস্রাধিক দৈনিক মজুরী ভিত্তিক শ্রমিকের হাজার খানেকেরই কোন দেখা মেলেনা মাস জুড়ে। অথচ বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে তাদের অস্ত্র বানিয়েই এতদিন আন্দোলন করেছেন নগর ভবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। নতুন মেয়র এ বিষয়টি কিভাবে দেখবেন তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। প্রয়োজনের দ্বিগুণেরও বেশী পরিচ্ছন্ন কর্মী থাকার পরেও নিকট অতিতের পরিছন্ন বরিশাল মহানগরী ইতোমধ্যে জঞ্জালে পরিনত হয়েছে। বিগত ৩০ জুলাই সিটি নির্বাচনের আগে থেকেই নগরীর পরিচ্ছন্নতাসহ অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ কাজেই ধীরে চল নীতি অনুসরণ করতে থাকেন কতিপয় কর্মকর্তা। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
২০১৭-এর বর্ষা মৌসুমে নজিরবিহীন বর্ষণে এ নগরীর প্রায় সব রাস্তাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। রুদ্ধ পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার কারণে ঘণ্টায় ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতেই এ নগরীর প্রায় সব প্রধান সড়কগুলো পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। অনেক রাস্তায়ই জাল দিয়ে মাছ শিকারও করেন সাধারণ মানুষ। নবগ্রাম রোডর মত প্রধান সড়কের পাশের অনেক দালানকোঠার নিচতলায় পানিতে থৈ থৈ করছিল। বছরের পর বছর ধরে ঐ সড়কটির ধারের ড্রেনের ওপর ও পাশে ইট-বালু ফেলে রেখে ভবন নির্মাণ করেছেন কতিপয় বিবেকহীন নগরবাসী। আর নগর প্রশাসনের দুর্নীতিবাজরা নিজ স্বার্থে নগরীর বেশীরভাগ এলাকাতেই এ ধরনের অন্যায়-অনিয়মকে প্রশ্রয় দিয়েছেন বছরের পর বছর। গত সপ্তাহখানেক ধরে নবগ্রাম রোডের ওপর একজন কাউন্সিলরের নির্মানাধীন ভবনের ইট ভাঙা হচ্ছে মেশিনের সাহায্যে।
এ ধরণের বিবেকহীন কর্মকান্ডে গোটা নগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা ইতোমধ্যে অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে গেছে। ফলে রাস্তাঘাটের ক্ষতির পরিমানও ক্রমশ বেড়েছে। গতবছর দফায় দফায় প্রবল বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তাঘাট মেরামতে অর্থ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে বারবার অনুরোধ পাঠান হলেও তাতে খুব একটা সাড়া মেলেনি। তবুও নিজস্ব রাজস্ব তহবিল থেকে যতটুকু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ হয়েছে তা নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। প্রকৌশলীরা সহজে কাজ পরিদর্শন করেননি এতদিন। যেসব কার্য সহকারীরা দায়িত্বে ছিলেন, তারা নগরবাসীর স্বার্থের চেয়ে ঠিকাদারের লাভের সাথে নিজের পকেটের কথাই বেশী ভেবেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নগর ভবনের মাথাভারি প্রশাসন এ নগরীকে ঘুনপোকার মত ধ্বংস করেছে । ৫শ’র মত নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে দেড় সহস্রাধিক দৈনিক মজুরী ভিত্তিক শ্রমিক এ নগর ভবনকে অসার করে দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে এসব শ্রমিকদের মধ্যে হাজার খানেকের দেখা মেলে শুধু বেতন নেয়ার সময়। অথচ গোটা নগরী জুড়ে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়। ড্রেনগুলো অনিয়মিতভাবেও পরিস্কার হচ্ছে না। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। মশা মারার ওষুধ কেনার টাকা নেই নগর ভবনের।
নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে যেখানে প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকার প্রয়োজন, সেখানে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক এসব শ্রমিকদের পেছনেও আরো দুই কোটিরও বেশী টাকার প্রয়োজন হচ্ছে। নগরবাসীর সমুদয় করের টাকা যোগ করলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সংকুলন হচ্ছে না। ফলে এ নগর প্রশাসন ইতোমধ্যেই তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিনত হয়েছে।
এদিকে, প্রায় ৫৮ বর্গ কলোমিটারের বরিশাল মহানগরীতে মোট রাস্তার পরিমান প্রায় ৬শ’ কিলোমিটার। যার মধ্যে এখনো কাঁচা রাস্তার পরিমান প্রায় পৌনে ৩শ’ কিলোমিটার। সোয়া ৩শ’ কিলোমিটার ড্রেনের মধ্যে এখনো কাঁচা ড্রেন প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার। এ নগরীতে ৮০টি বিভিন্ন ধরনের পোল থাকলেও বাঁশের সাকো আছে ২১টি। স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নিয়ে বড়াই করা বরিশাল মহানগরীতে এখনো কাঁচা পায়খানার সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশী। নগরীর প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহকের জন্য দৈনিক ৪০-৪৫ লাখ গ্যালন পানি সরবারহের কথা বলেছে নগর ভবন। বাস্তবে যার দেখা মেলেনা।
এসব কারণে এখনো নাগরিক পরিষেবা নগরবাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না। এর পেছনে সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও তার সষ্ঠু ব্যবহারের অভাবসহ মাথাভারি প্রশাসনের পেছনে অপচয়কেও দায়ী করছেন নগরবাসী। এসব অব্যবস্থাপনার সত্তে¡ও নগরবাসীর প্রত্যাশা নতুন নগর পিতা সাদিক আবদুল্লাহ করের টাকার অপচয় রোধসহ তার সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেয়র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ