বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করে কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না পদ্মা নদীতে ইলিশ শিকার । এ সব মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ স্থানীয়ভাবে বিক্রি হচ্ছে পানির দামে। সকাল-সন্ধা পদ্মাপাড়ে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও স্বীকার করলেন তাদের অসহায়ত্বের কথা।
জানা গেছে, ডিম ছাড়তে মা ইলিশ ছুটে আসে পদ্মায়। ইলিশের এই প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে কিছুদিন। যাতে মা ইলিশ নির্বিঘেœ ডিম ছাড়তে পারে। কিন্তু চিত্রটা ঠিক তার উল্টো! নিষিদ্ধ মৌসুমেও থেমে নেই শিবচরের চারজানাত বন্দরখোলা ও কাঁঠালবাড়ি এলাকার পদ্মা নদীতে ইলিশ শিকার। দেদারছে ইলিশ শিকার করছে জেলেরা। পদ্মা চরাঞ্চলের দূর্গম চর এলাকা সংলগ্ন পদ্মা নদীতে অনেকটা গোপনেই জেলেরা ব্যস্ত থাকে ইলিশ শিকারে। প্রশাসনের নাকের ডগায় চরাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে ডিম ভর্তি মা ইলিশ। অনেক সময় আবার প্রকাশ্য বাজারে ইলিশ বিক্রি করতে না পারায় খুবই সস্তায় জেলেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে । এসময় সুযোগ বুঝে পুলিশ জেলেদের ধরে এনে বিপুল পরিমান অর্থ আদায় করে পুলিশ তাদের ছেড়ে দিচ্ছে এমন অভিযোগও রয়েছে। উদ্ধারকৃত মাছ এ পর্যন্ত কোন এতিমখানা বা লিল্লাহ বোডিংএ দেওয়া হয়নি। তাহলে প্রতিদিন উদ্ধার হওয়া ইলিশ কোথায় যাচ্ছে ?
এদিকে স্বাভাবিক সময়ে যে ইলিশের বাজার মূল্য কেজিতে ৮‘শ থেকে ১হাজার টাকা; সেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দেড়শত টাকা দরে! এতো সস্তায় ইলিশ পেয়ে স্থানীয় দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ ভিড় করছে পদ্মা পাড়ে। ব্যাগ বোঝাই করে ইলিশ নিয়ে ফিরছে বাড়িতে! পদ্মাপাড়ে গেলে এ দৃশ্য সকাল-সন্ধা চোখে পড়ে।
সূত্র মতে, নিষিদ্ধ মৌসুমে ইলিশ শিকার বন্ধে অভিযান চালানো হয় পদ্মায়। তবে দূর্গম অঞ্চল প্রায় সময়ই অভিযানের বাইরে থেকে যায়। জেলেরা কৌশলে গভীর রাতে ও খুব ভোরে পদ্মার বিভিন্ন এলাকায় মাছ শিকার করে। সেক্ষেত্রে ইলিশের জাল নদীতে ফেলে কৌশলে জাল নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পানিতে লুকিয়ে রেখে মাছ শিকার করে বলেও জানা গেছে। জেলেরা চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ি ও বন্দরখোলা এলাকার চর সংলগ্ন পদ্মানদীতে জেলেরা ইলিশ শিকার করে থাকে। চরাঞ্চলের এই পদ্মার পাড়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুচরা বিক্রি হয় ইলিশ। ইলিশ বিক্রির চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, অভিযান শুরু থেকে প্রতিদিনই ভোর থেকেই ব্যাগ হাতে পদ্মার পাড়ে নারী-পুরুষের ভিড় জমে। রয়েছে ছোট ছেলে মেয়েরাও। উদ্দেশ্য সস্তায় ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফেরা।
ইলিশ কিনতে আসা আসলাম জানান, তিনি প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকা থেকে এসেছেন। পদ্মার পাড়ে সস্তায় ইলিশ পাওয়া যায়, এ খবর শুনে তিনি মাছ কিনতে এসেছেন। তার দিনমজুর পিতার পক্ষে অন্যান্য সময়ে বেশি দামে ইলিশ কেনা সম্ভব হয় না। তাই সস্তায় একটু বড় ইলিশ কিনতে কষ্ট করে এ দূর্গম চরে এসেছেন।
জেলেদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, পদ্মায় মাছ শিকারকারী জেলেরা বেশির ভাগই দরিদ্র। ঋণ করে জাল, নৌকা কিনে পদ্মায় মাছ ধরেন। ফলে মাসে মাসে ঋণ পরিশোধের কিস্তি দিতেই হচ্ছে। তাছাড়া সংসারের খরচ তো আর থেমে নেই। তাই মাছ শিকার বন্ধ করা আর হয়ে উঠে না। মাছ ধরা বন্ধ থাকার সময় জেলেদের সরকারীভাবে সাহায্য দেয়ার কথা কিন্ত এ পর্যন্ত কোন সাহায্য আমরা পাই নাই।
চরজানাজাত এলাকার অপর এক জেলে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক) বলেন, আমি প্রথম দিকে এই সময় মাছ ধরতে যেতাম না। গত বছরও ধরিনি। কিন্তু অন্যরা তো ঠিকই ধরছে। তারা মাছ বিক্রি করে পয়সা কামাচ্ছে। তাই এবার আমিও মাছ ধরতে নেমেছি। তবে দিনে একবারই পদ্মায় জাল ফেলি। এ সময় অনেক সতর্ক থাকতে হয়। পুলিশের হাতে ধরা পড়লে অনেক হয়রানি পোহাতে হয়। বিপুল পরিমান টাকা না দিতে পারলে পুলিশ ম্যাজিষ্ট্রেট দিয়ে জেল দেয়। এ ছাড়াও একইভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় মৎস্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
শিবচর উপজেলা মৎস কর্মকর্তা এটিএম শামসুজ্জামান (দায়িত্ব প্রাপ্ত) বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছি পদ্মা নদীর মাদারীপুর অংশে। দিনের পুরোটা সময়ই আমরা পদ্মায় নজর রাখছি। তাছাড়া জেলেদের মাছ ধরা বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যারা মাছ কিনতে আসছেন তাদেরও সচেতন করতে চেষ্টা করছি। তারপরও সাধারণ মানুষের ভিড় পদ্মার পাড়ে লেগেই থাকে। মাছ ধরা বন্ধের প্রথম দিন থেকেই আমরা অভিযান চালিয়ে আসছি। জেলেদের আটক, মাছ জব্দ এবং জাল ধ্বংস কার্যক্রম চলছে। তবুও থামছে না চুরি করে ইলিশ শিকার। মাছ ধরা এখনও নিষেধ। নদীতে মাছ ধরা বন্ধ করার অভিযান চালাতে গিয়ে আমরা চরজানাজাত খাসেরহাট এলাকায় ২জন অফিসার লাঞ্চিত হয়েছি। কিন্তু জেলেরা তো থেমে নেই; থেমে নেই মাছ ধরা ও বিক্রি। মানুষ কম দাম পেয়ে ইলিশ কিনছে। মাছ ধরা ও বিক্রি করা কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না।
শিবচর থানার অফিসার ইনচার্জ জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা মাঝে মধ্যেই নদীতে মা ইলিশ ধরা বন্ধে অভিযানে নামে। তাদের চাহিদা মত আমরা পুলিশ দিয়ে সহযোগিতা করি। পুলিশের কোন লোক জব্দকৃত মাছ নেয় না বলে তিনি দাবি করেন।
মাদারীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই আমরা নদীতে অভিযান পরিচালনা করে আসছি। কিন্ত অভিযান কালে জালে জড়িত জীবিত মাছ আমি পানিতে ছেড়ে দেই। কিন্ত পুলিশ তখন আপত্তি করে। তাতে বুঝলাম মাছের প্রতি পুলিশের অনেক লোভ আছে। জেলেদের আটক করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।