বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
![img_img-1719624256](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678506381_AD-1.jpg)
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম জেলার শতাধিক স্পটে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। প্রতিদিন কোটি টাকার বাণিজ্য। জেলার ২৭৩ কিঃ মিঃ সীমান্ত গলে ভারত থেকে অবাধে আসছে মদ,গাজা, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মরণ নেশা। বিনিময়ে ভারতে যাচ্ছে স্বর্ণ। এক ভরি স্বর্ণের বিনিময়ে মেলে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল। ফলে সংক্রামক ব্যধিরমত মাদক নেশা জড়িয়ে পড়েছে অভাবী জনপদ কুড়িগ্রাম জেলার সর্বত্র। নেশার রাজ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে গোটা যুবসমাজ। এগুলোকে ঘিরে পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে। ঘটছে সহিংস ঘটনা। বেড়ে গেছে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং রাহাজানী। মারাত্মকভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবক মহল। জানা গেছে, জেলায় প্রায় ৬ হাজার উঠতি বয়সের তরুণ/যুবক নিয়মিত ফেনসিডিল সেবন করে। তাদের প্রতিদিন প্রয়োজন হয় ১টি থেকে ৫টি। এক বোতল ফেনসিডিলের মূল্য ৮ শত টাকা হলে প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার উপর লেনদেন হয়। এছাড়া হিরোইন এক পুড়িয়া ২০০ টাকা, ইয়াবা প্রতিপিচ ১৫০ টাকা, গাঁজার কেজি ১০ হাজার টাকা। ফেন্সিডিলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে বাংলা মদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এসব নিয়ন্ত্রণে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হলেও তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাদের অবস্থা ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’। তাদের অস্ত্র দেয়া হয় না। অথচ অস্ত্র ছাড়া মাদক সংক্রান্ত কোন অভিযান পরিচালনা করা দুঃসাধ্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদক সেবীদের তালিকায় বৃহৎ অংশে রয়েছে ছাত্র, বেকার যুবক এমনকি কতিপয় শিক্ষক, সাংবাদিক, সরকারী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেএ তালিকায়। মাদকসেবীদের চাহিদা অনুযায়ী কোটি টাকার উপরে প্রতিদিন মাদকের ব্যবসা চলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মাদক ব্যবসায়ী জানায়, ভারত স্বর্ণের পরিবর্তে ফেন্সিডিল দিতে আগ্রহী।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক রায়হান আহমেদ জানান, স্বর্ণের পরিবর্তে ফেন্সিডিল আসে বিষয়টি শুনেছি। কুড়িগ্রামে প্রায় শতাধিক স্পটে মাদকের ব্যবসা রয়েছে। এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ কিছু মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। স্পটগুলোতে কারা ব্যবসা করেন তার তালিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদকের বিভিন্ন মামলার তথ্য মতে, কুড়িগ্রাম শহরে হিরোইন সররবাহকারী মিলন। শহরের গড়ের পাড়, চামড়ার গোলা, ভেলাকোপা ও শুল্কুর বাজারে যৌথভাবে শেখ সাদি, চান্দু, রফিকুল ব্যবসা করে। আমবাড়ির ঘাটে সেলিম, উলিপুর শহরে মমিনুল, মিলন ও মনি। কুড়িগ্রাম শহরে পরিত্যক্ত রেল স্টেশনে মালা, নাগেশ্বরী বাজারে মনু ও মুক্তা। ভূরুঙ্গামারীতে অপু, মুন্না এবং এদের তত্ত্বাবধানে আরও ৫ জন কাজ করে। ফুলবাড়ির জুম্মার মোড়ে শাহানুর ও মম মদ বিক্রি করে। মাদক শুধু শহরে আসে না। সীমান্ত পেরিয়ে সড়ক পথে বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক, ভ্যান-লরীতে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এছাড়া নৌ-পথে যাত্রাপুর, রৌমারী হয়ে এবং চিলমারী-গাইবান্ধা হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। জনবলের অভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
তিনি আরো জানান, ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রাম মহকুমা জেলা হিসেবে উন্নীত হওয়ার ১০ বৎসর পরে অর্থাৎ ১৯৯৪ সালে রৌমারী উপজেলায় ব্যাপকহারে গাঁজার চাষ শুরু হয়। গোটা জেলায় এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গাঁজার চাষ এবং অন্যান্য মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কল্পে ১৯৯৪ সালেই কুড়িগ্রামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুড়িগ্রাম সার্কেল গঠিত হয়। এই সার্কেলের অধীন ১৩ জন জনবলের মধ্যে বর্তমান আছে মাত্র চার জন। এর মধ্যে সহকারি পরিচালক, পরিদর্শক, এএসআই, অফিস সহকারি মিলে ৪জন থাকলেও শুন্য রয়েছে একজন এস আই, তিনজন সিপাহী, ওয়ারলেস অপারেটর একজন, গাড়ি চালক একজন, দারোয়ান একজন, এমএলএসএস একজন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী একজন।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুড়িগ্রাম সার্কেলের অধিনে রয়েছে কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী, রাজিবপুর এবং রৌমারী এই ৯টি উপজেলার ২ হাজার ২’শ ৯৬ বর্গ কিঃ মিঃ বিশাল এলাকা। এই অল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করে আরও পদ সৃষ্টি করা দরকার। মাদক দ্রব্য অধিদপ্তর কুড়িগ্রাম সার্কেলের গাড়ী নেই। গাড়ী না থাকায় অবৈধভাবে মাদক দ্রব্য বিক্রয় হচ্ছে অথবা এ ধরণের অন্য কোন খবর পেয়েও সার্কেল থেকে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করার উপায় নেই। অবৈধ মাদকদ্রব্য বিক্রি, পাচার ও দেশীমদ প্রস্তুতের বহু খবর বিভিন্ন সোর্স মারফত আসলেও একমাত্র পুলিশের অভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না। পুলিশের জন্য জেলা পুলিশ দপ্তরে খবর পাঠিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় পুলিশ পাওয়া যায় না। পুলিশ অফিস হতে জানানো হয় তাদের কাছে সেদিন অতিরিক্ত পুলিশ নেই।
কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার ডাঃ তবারক উল্লাহ্ মাদকের ব্যাপক বিস্তারে উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেন, পুলিশ বসে নেই। সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। মাদক ব্যবসায়ী ও সেবিদের আদালতে সোপর্দ করছে। কিন্তু আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে তারা আবারো জড়িয়ে পড়ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণের আন্দোলন পরিবার থেকে শুরু করতে হবে। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- সন্তানরা কোথায় যায়, কী করে, খোঁজ নিবেন না আর পুলিশকে বলবেনÑ দেশটা ভাল করে দাও, এটা হতে পারে না। নিজ সন্তানদের খোঁজ-খবর রাখুন। দেখবেন মাদক সেবী ও মাদক ব্যবসায়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না। মাদক যখন সংক্রামক ব্যাধির মত ছড়িয়ে পড়ে তখন পুলিশকে নিয়ে নানান অভিযোগ আসে। তবে যৌথ উদ্যোগে জনগণ, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ কাজ করলে মাদক নির্মুল করা সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।