পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদারের বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। গত সোমবার নির্বাচন কমিশনে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও তফসিল নিয়ে বৈঠক শুরুর পাঁচ মিনিট পর সভায় তিনি নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তি দিয়ে বেরিয়ে যান। নির্বাচনের সময় কয়েকটি মন্ত্রণালয় কমিশনের কাছে রাখার বিষয়ে বৈঠকে কথা বলতে চেয়েছিলেন।
এ বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুইজন নেতা দুইভাবে দল ও চৌদ্দ দলীয় জোটের অবস্থান তুলে ধরেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, কমিশনের সদস্যদের মধ্যে মতানৈক্য গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতে সিদ্ধান্তে গ্রহণ করবে ইসি। অপর দিকে গত বুধবারদলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম ইসি মাহবুব তালুকদারের পদত্যাগ দাবি করে বলছেন, সাংবিধানিক পদে থেকে কেউ এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। তাই তার পদ ছেড়ে দেওয়া উচিত। তবে মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্য দলের নয় বরং তার ব্যক্তিগত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। দুই প্রভাবশালী নেতার দুই ধরণের বক্তব্যের কারণে ইসি মাহবুব তালুকদারকে নিয়ে দলে টানাপোড়েনের বিষয়টি উঠে এসেছে। এছাড়া আরেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেছেন, সরকারের নির্বাহী বিভাগ বা বিশেষ কোনো মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কমিশনার মাহবুব তালুকদার যে প্রস্তাব করেছেন তা সংবিধানসম্মত নয়। তার এ বক্তব্যের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্যতিত একজন কমিশনারের বিষয়ে আরেক জন কমিশনার মন্তব্য করতে পারেন না।
সূত্র জানায়, বিএনপির প্রস্তাবনায় নির্বাচন কমিশনার হওয়া মাহবুব তালুকদারকে নিয়ে বেজায় অখুশি আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের সময় তিনি যেকোন ভাবে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে পারেন বলে ধারণা দলটির। তাই তাকে নিয়ে করণীয় কি হবে তা নিয়ে ভাবছে ক্ষমতাসীনরা। একপক্ষের মত, তাকে ছুটি দিয়ে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হোক। আরেক পক্ষের মত, তাকে নিয়ে এমন কিছু করা যাবে না যাতে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এমনিতেই সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নিয়ে বিপাকে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এর মধ্যে আরো একজন প্রধানশালী ব্যক্তিকে নিয়ে কিছু হলে পুরো নির্বাচন বিতর্কিত হয়ে পড়বে।
এ আলাপ আলোচনার মধ্যেই দলের সভাপতিমন্ডলীর প্রভাবশালী সদস্য মোহাম্মদ নাসিম মাহবুব তালুকদারের পদত্যাগ দাবি করেন। এ নিয়ে ইতোমধ্যে কথা উঠে মাহবুব তালুকদারের পরিণতিও সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার মতই হতে যাচ্ছে। তাই নাসিমের বক্তব্য দল বা জোটের নয় বরং ব্যক্তিগত বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তবে দলের টানাপোড়নের বিষয়টি সামনে আসায় অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের কোন্দল বা টানাপোড়ন প্রকাশ্যে আসায় তৃণমূলের কোন্দল নিরসন নিয়ে কেন্দ্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ফলে নির্বাচনের আগে দলের চেইন অব কমান্ড না-ও ঠিক থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন নীতি-নির্ধারকরা।
এদিকে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই দলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে টানাপোড়ন প্রকাশ্যে আসে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর একই দিনে বিএনপি ও চৌদ্দ দলের সমাবেশ করা নিয়ে চরম মতভেদ তৈরী হয়। ওবায়দুল কাদের তখন বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করবে না। কিন্তু জোটের মুখপাত্র নাসিম সমাবেশ করার বিষয়ে স্থির থাকেন। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে চরম অস্বস্তি তৈরী হয়। এর পরবর্তীতে ঢাকা শহরে চৌদ্দ দলের সম্মিলিত কর্মসূচী পালনের কথা উঠে আসলে সে সময়ই দল থেকে সাপ্তাহব্যাপি গণসংযোগের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের টানাপোড়নের কারণে দলের বেশিরভাগ নেতাকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখন আর বক্তব্য রাখতে দেখা যায় না। বিগত সময়ে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকদের নেতৃত্বে সংবাদ সম্মেলন করা হলেও এখন আর তা হয় না। মিডিয়াতে বিগত সময়ের পরিচিত মুখ নেতাদেরও দেখা যায় না। কেন্দ্রীয় নেতাদের রেশারেশিতে এমন অবস্থার সৃষ্টি বলে সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল ঢাকার মহাখালীতে সেতুভবনে ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার যেকোনো নির্বাচন কমিশনারের আছে। মাহবুব তালুকদারের হয়তো কোনো বিষয়ে ভিন্নমত হয়েছে। তাতে তো নির্বাচন কমিশনের কোনো সংকট হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ কেন চাইব? আমরা দলগতভাবে এটা চাই না। এটা নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীন বিষয়। কোনো দল বা ব্যক্তি মাহবুব তালুকদারের পদত্যাগ চাইলে সেটা তার ব্যক্তিগত চাওয়া।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতবিরোধ হতেই পারে। আমরা দলীয়ভাবে যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যাই, তখন কি সবাই একমত হয়? একজনে ভিন্নমত পোষণ করলেই যে তার পদত্যাগ করতে হবে, আমি মনে করি না। মাহবুব তালুকদারের পদত্যাগ দাবি করতে হবে এমন কোন চিন্তা-ভাবনা আওয়ামী লীগের নেই। তাই তার পদত্যাগ দাবি করতে হবে বলে আমি মনে করি না। সব বিষয়ে সবাই তো একমত হবে না, না হলে কি পদত্যাগ করতে হবে? এখন তিনি যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে চান, তাহলে এটা তার ব্যাপার। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে তাঁর কোনো পদত্যাগ দাবি করছি না।’
একাদশ নির্বাচন নিয়ে ভারতের কোনো আশঙ্কা আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী কাদের বলেন, এ রকম কোনো আশঙ্কার কথা আমার সঙ্গে প্রকাশ করেননি হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। আমার মনে হয় না এ ধরনের কোনো আশঙ্কা আছে। কিন্তু আমাদের দেশে যখনই ইলেকশন আসে, তখনই নানা রকমের মেরুকরণ হয়। অ্যালায়েন্স আসে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভারত অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। আমি বলেছি, আমরাও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। আশা করি, সুন্দর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সাংবাদিকদের বলেন, ভারত আশা করে আগামী একাদশ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কোনো নাশকতার আশঙ্কা দেখছে না ভারত। আমরা আশা করি সবার অংশগ্রহণে সুন্দর একটি নির্বাচন হবে।
জোটের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই মেকিং, ব্রেকিংয়ের ফাইনাল কী শেপ (আকার) নেবে, এ নিয়ে বলা মুশকিল। যেমন আমাদের সঙ্গেও অনেকে আসতে চেয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী জোটে আসতে প্রতিদিনই যোগাযোগ করছে একাধিক রাজনৈতিক দল। এরই মধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কয়েকটি দল। জোটের রাজনীতির শেষ দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। এখনই মুখ খুলতে চাই না। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে জাকের পার্টি, সাতটি দলের একটি বাম অ্যালায়েন্স, বাহাদুর শাহের ইসলামী ফ্রন্ট। তারা আমাদের অফিসে এসেছেন, আমাদের কাছে একটি দাবি রেখে গেছেন, আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চান, শামিল হতে চান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।