বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পূজার বিষয়টিকে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে যে কোনো মুসলমানের কাছেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তার সঙ্গে কোনোরকম সংশ্লিষ্টতারই সুযোগ কোনো মুসলমানের নেই। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের শুরুর যুগে এ জাতীয় ধর্মাচারের বিরোধিতা করেই ইসলামের তাওহিদ তথা একত্ববাদের দিকে মানুষকে আহবান করেছেন এবং সকল প্রকারের মূর্তি ও পূজাকে শিরক আখ্যা দিয়ে তা থেকে বেঁচে থাকার তাগিদ দিয়েছেন।
সুতরাং আক্বীদাগত বা বিশ্বাসগত দিক থেকে একজন মুওয়াহহিদ (একত্ববাদী মুসলিম)-এর জন্য পূজা-জাতীয় ধর্মাচারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, সমর্থন করা এবং সেটিকে নিজের উৎসবের বিষয় মনে করার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। তবে এক ধর্মের সাথে অপর ধর্মের অনুসারীদের সহাবস্থান এবং অন্য ধর্মের অনুসারীদের আপন আপন পূজা-আরাধনা নির্বিঘ্নে পালন করতে সহযোগিতার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পরিষ্কার। ইসলাম এতে পূর্ণ সমর্থন দেয় ও দায়িত্ব গ্রহণ করে। এ বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন সময়েই আমরা আলোচনা করেছি। ইসলামের স্পষ্ট নীতি হচ্ছে- যে কোনো ধর্মাবলম্বী নিজস্ব গন্ডির মধ্যে তার ধর্ম পালন করুক। নিজস্ব পরিধির মধ্যে তার ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা তার রয়েছে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। বরং তাদের নিজস্ব গন্ডির ভেতরে থেকে এগুলো পালন করার জন্য ইসলামি সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও দেয়া হয়েছে ইসলামি খেলাফতের সময়গুলোতে। হজরত উমর রা. তাঁর শাসনামলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের গির্জা (কানিসা) বানানোর সুযোগও দিয়েছেন। এ নীতিতেই মুসলিমপ্রধান দেশে অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত মুসলিম দায়িত্বশীলদের ডিউটি জায়েজ। রাষ্ট্র নির্ধারিত সংশ্লিষ্ট লোকজন ছাড়া সাধারণ মানুষের এতে কোনোভাবেই যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। যখন হাদিসে বলা হয়েছে, যারা অন্য ধর্মের উৎসবে গিয়ে তাদের সমাবেশকে বড় করবে, তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত (অর্থাৎ এমন মুসলমান আমার উম্মত নয়।) সুতরাং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার এবং ধর্মীয় আচার-আচরণকে এক করে দেখার পেছনে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, প্রত্যেক ধর্মের নিজস্ব। এ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব ও আনন্দও তাদের নিজস্ব। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যদের ধর্মীয় কাজে যোগ দেয়া, সেগুলোকে পছন্দ করা, সে উৎসবকে নিজের উৎসব মনে করার কোনো একটি বিষয়ই শরিয়ত কর্তৃক সমর্থিত নয়।
মূলত অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সহাবস্থান, নিজস্ব পরিধির মধ্যে তাদের ধর্মপালন ও পালনের অধিকার একটি সমর্থিত ও স্বীকৃত বিষয়। এটি ইসলামেরই নীতি। কিন্তু অপর ধর্মের ধর্মীয় আচার এবং ধর্মভিত্তিক উৎসবকে নিজের উৎসব মনে করা কিংবা সে উৎসবে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে অংশ নেয়া সম্পূর্ণ অসমর্থিত, অযৌক্তিক ও বাস্তবতাবহিভর্‚ত। মূর্তিপূজা সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠান-উৎসবে কোনো মুসলমানের পক্ষে এভাবে একাত্মবোধ করার কোনো অবকাশই নেই। এটা ইসলামের অন্যতম প্রধান শিক্ষা এবং ভিত্তিগত চেতনারও বিরোধী।
পরিশেষে দু’তিনটি হাদিস ও আসার পেশ করে নিবন্ধ শেষ করছি। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভ‚ক্ত বলে গণ্য হবে।’ -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-৪০৩১। অন্য একটি বর্ণনায় খলিফা হজরত উমর রা. বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর দুশমনদের উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাক।’ -আস্সুনানুল কুবরা, হাদিস-১৮৮৬২। অন্য বর্ণনায় তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘কারণ এ ক্ষেত্রে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাজিল হয়ে থাকে।’ আরেকটি বর্ণনায় হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেছেন, অর্থাৎ যারা বিধর্মীদের মতো উৎসব করবে, কিয়ামত দিবসে তাদের হাশর ওই লোকদের সাথেই হবে। -আস্সুনানুল কুবরা, হাদিস-১৫৫৬৩।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সহিহ বুঝ দান করুন এবং সকল শিরক-মিশ্রণ থেকে মুক্ত থেকে খালেছ মিল্লাতে ইব্রাহিমীর ওপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।