বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘ইহুদি মিথ্যাবাদী জাতি। আমি আলেমের পুত্র আলেম এবং সর্দারের পুত্র সর্দার। আপনি তাদেরকে ডেকে আমার কথা জিজ্ঞাসা করুন; কিন্তু আমার ইসলাম গ্রহণের কথা তাদের নিকট প্রকাশ করবেন না।’ এই স্বীকারোক্তি একজন ইহুদি বংশোদ্ভ‚ত সাহাবির। ইহুদি আলেম হিসেবেও তিনি ছিলেন সকলের নিকট সুপরিচিত। এই সাহাবির নাম হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)। হজরত ইয়াকুব ইবনে ইউসুফ (আ.)-এর বংশধর ইবনে সালাম (রা.) সেই মহান সাহাবি, যিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করে এসেছেন- এ খবর পাওয়া মাত্র রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর দরবারে উপস্থিত হন। তখন মদিনার লোকেরা দলে দলে হুজুর (সা.)-এর খেদমতে এসে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
নবুওয়াতের দাবির সত্যতা যাচাই করার জন্য হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)-এর মনে কতিপয় প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল পূর্বেই। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নূরানী চেহারা প্রথম দর্শনেই অনুভব করতে পারেন যে, সত্যিই ইনি আল্লাহর নবী-রাসূল; ইনি মিথ্যা দাবি করতে পারেন না। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন উপস্থিত নও-মুসলিমদের মধ্যে ওয়াজ করছিলেন। ওয়াজ শ্রবণ করার পর কোনো প্রশ্ন না করেই হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) সেদিনকার মতো সেখান থেকে চলে যান। অত:পর দ্বিতীয়বার রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁর সাথে কিছুক্ষণ একান্ত আলোচনাকালে এমন কিছু প্রশ্ন করেন, যেগুলোর জওয়াব নবী ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। হুজুর (সা.)-এর কাছ থেকে অত্যন্ত সন্তোষজনক জওয়াব পেয়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)-এর এতদূর বিশ্বাস হয় যে, তিনি আর কোনো প্রশ্ন না করে তৎক্ষণাৎ ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর জাতির পক্ষ থেকে সমূহ বিরুদ্ধাচরণের আশঙ্কা থাকা সত্তে¡ও হুজুর (সা.) এর প্রতি ঈমান আনতে তিনি বিন্দুমাত্র দ্বিধান্বিত হননি। ইসলাম গ্রহণের পর আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে যেসব কথা বলেন, তার অংশ-বিশেষ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। অত:পর মহানবী (সা.) মদিনার ইহুদিদের ডেকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানান এবং তাদেরকে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) এর পরিচয় কি জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে তারা বলেন, ‘তিনি আমাদের নেতা এবং নেতার পুত্র।’ রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, ‘সে কি ইসলাম গ্রহণ করতে পারে?’ তারা বলল, ‘না, পারে না।’ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) এ সময় গৃহের কোণে আত্মগোপান করে ছিলেন। হুজুর (সা.) তাঁকে আহ্বান করলে তিনি কলেমা পড়তে পড়তে বের হয়ে নিকটে আসেন এবং ইহুদিদের লক্ষ্য করে বলেন; ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা ভালোরূপেই জানো, ইনি আল্লাহর রাসূল। তাঁর ধর্ম সম্পূর্ণ সত্য অথচ তোমরা তাঁর প্রতি ঈমান গ্রহণ করছ না।’ এতে ইহুদিরা অপ্রত্যাশিতভাবে অপমানিত বোধ করে এবং রাগে ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)-এর উদ্দেশ্যে বলতে থাকে ‘তুমি মিথ্যাবাদী এবং আমাদের দলের নিকৃষ্টতম ব্যক্তি। তোমার পিতাও নিকৃষ্ট ব্যক্তি ছিলেন।’ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আপনি তো দেখলেন, আমার এটাই আশঙ্কা ছিল।’
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বেহেশতি হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছিলেন এবং কেউ কেউ বলেন যে, ‘আশারায়ে মোবাশশারা’ (বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত) ১০ জন সাহাবির পর একাদশ সাহাবি ছিলেন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)। হিজরি ৪৩/৬৬৩ সালের ৯ অক্টোবর তিনি মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর উদ্বৃত বাক্য মিথ্যাবাদী ইহুদিদের স্বরূপ উদ্ঘাটিত করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।