Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষককে লাঞ্চিতের ঘটনায় ৪৮শিক্ষকের পদত্যাগপত্র জমা

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৬:২৭ পিএম

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ কতৃক জোড় করে পরীক্ষা দেয়ানোর সময় শিক্ষকরা বাধা দিলে লাঞ্চনার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের চার নেতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে তাৎক্ষণিক বিচার না পাওয়ায় সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ৪৮ জনের পদত্যাগ পত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. তৌহিদুল ইসলামের কাছে জমা দেয়া হয়। এর মধ্যে ২ জন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, ৪ জন ডীন, ৪ জন প্রভোস্ট, ১৪ জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান, সকল হাউজ টিউটর, সকল সহকারী প্রক্টরসহ ৪৮ জন।
জানা যায়, গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষায় বিভাগের পক্ষ থেকে অনুমোদন না দেয়ার পরেও জোড় করে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। গত শনিবার ২য় বর্ষ ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ। এ পরীক্ষায় ঈশিতা বিশ্বাস উন্নীত হতে পারেনি। তার ফলাফল ৪ এর মধ্যে ১.৯৮। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সর্বনি¤œ ২.২৫ পেলে উন্নীত হতে পারবে। পরীক্ষায় ফলাফল ১ দিন আগে ঘোষণা করায় এক অধ্যাদেশ বিরোধী উল্লেখ করে ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার তার সহযোগীদের নিয়ে ঈশিতার পক্ষ হয়ে তাকে জোড় পূর্বক পরীক্ষার সিটে বসিয়ে দেয়। বিভাগের শিক্ষকরা এ বিষয়ে বাধা দিতে গেলে সজীব তালুকদার উক্ত বিভাগের চেয়ারম্যান ও উক্ত বিভাগের শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেন ও মহিউদ্দিন তাসনিনের সাথে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও মারার উপক্রম হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঈশিতাকে পাহাড়া দিয়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করায়।
ঈশিতাকে পরীক্ষা শেষ করানোর পর সকল শিক্ষার্থীদের ডেকে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করে। এ সময় কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বন্ধ করা হয়।
এদিকে শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনায় বিকাল ৪ টার দিকে জরুরি সভা ডাকে শিক্ষক সমিতি। সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহ-সভাপতি ইমরান মিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবাল ও সহ-সভাপতি আদ্রিতা পান্নার বিচারের দাবি জানানো হয়। মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি ও ১৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর দুইটি আবেদনে এই চার জনের বিচারের দাবি জানানো হয়। পরে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ভাইস চ্যান্সেলরের কক্ষে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের নিয়ে সভা করা হয়। সভার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বের হয়ে এসে প্রতিটি হল থেকে ছাত্র-ছাত্রী বের করে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করে। রাত সাড়ে ১০টার দিক থেকে ৩ টা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকে।
অর্ডিন্যান্স হল বিশ^বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দেয়া ক্লাস পদ্ধতি, পরীক্ষা পদ্ধতি, ফলাফল পদ্ধতি।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ভাইস চ্যান্সেলর অফিস থেকে বৈঠক করে জানান, স্যাররা আমাদের আশ^স্ত করেছেন অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের ব্যাপারে। আমরা সকাল ৯ টায় ছাত্র-ছাত্রী স্বাক্ষরিত স্বারকলিপি ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর জমা দিব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এরপর ছাত্র-ছাত্রী হলে ফিরে যায়।
ছাত্র-ছাত্রী চলে যাবার পর ভাইস চ্যান্সেলরের কনফারেন্স রুমে বিচার না পাওয়ার কারণে মধ্যেই রাতেই সকল শিক্ষক একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে রাতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলের ছাত্রলীগের নেত্রীরা হলে ফিরে গেলে সেখানে সাধারণ ছাত্রীদের সাথে তাদের হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি ছাত্রলীগের নেত্রীরা ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার ও সাধারন সম্পাদক সাইদুর রহমানকে জানায়। পরে সজীব ও সাইদুর ছাত্রী হলের ভিতরে প্রবেশ করে অন্যান্য ছাত্রীদেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে সজীব ও সাইদুরকে ছাত্রীরা হল থেকে ধাওয়া দিয়ে বের করে দেয়। পরে বিশ^বিদ্যালয় প্রক্টর এসে ছাত্রলীগের নেত্রীদের হলের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেন, আমরা সঠিক বিচার না পাওয়ায় আজ সোমবার দুপুরের দিকে শিক্ষককরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমরা এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি।
এ ব্যাপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের ড. মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে সোমবার বিকেলে ঢাকা লিয়াজো অফিসে জরুরি সভা ডেকেছেন ভিসি। সভায় এ পরিস্থিীতি নিয়ে আলোচনা ও পরবর্তী করনীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ