Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আসামে এনআরসির নেপথ্যে রঞ্জন গগৈ

সাউথ এশিয়ান মনিটরের প্রতিবেদন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

আসামের জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি)’র তৈরি করে আসাম থেকে সকল কথিত অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করতে মাস্টার রোল প্লে করছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। ‘সাউথ এশিয়ান মনিটর’ বাংলা অনলাইনে গতকাল ‘ভারতে রোহিঙ্গাদের জন্য কেউ নেই, এমন কি সুপ্রিম কোর্টও নেই’ শিরোনামে কিশলয় ভট্টাচার্যের লেখায় একথা বলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার দক্ষিণ আসামের শিলচর কারাগারে ২০১২ সাল থেকে আটক থাকা ৭ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরৎ পাঠানো নিয়ে একটি করা প্রতিবেদনে তিনি একথা বলেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “১৯৯০’র দশকে দিল্লিতে সাংবাদিকতা করেছেন তাদের মনে থাকবে ৩ কৃষ্ণ মেনন মার্গ রোডের অরক্ষিত বাড়িতে আরাকানি, চীনা, কারেন, বার্মিজ, শিল্পী, সাংবাদিক, শিশু ও নারীদের আশ্রয়গ্রহণের কথা। এটা ছিলো ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেজের ঠিকানা। তার ঠাঁই হয়েছিলো বাড়ির মাত্র একটি কক্ষে। আক্ষরিক অর্থে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাড়ি থেকেই বার্মার প্রতিরোধ আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে। মজা করে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল বলেছিলেন যে, ফার্নান্দেজ সবসময় ‘হারানো মামলা’র যোদ্ধা হয়েছেন।
গুজরালের এই ‘হারানো মামলা’ মন্তব্যটি দৈববাণী বলে মনে হয় যখন মিয়ানমারের ৭ নাগরিক, যারা ধর্মীয় কারণে নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে পালিয়ে এসেছিলেন, তাদেরকে ভারত ফেরত পাঠায়। অবশ্য ভারত বলছে যে, তারা মিয়ানমারের নাগরিকদের ফেরত পাঠাচ্ছে না, পাঠাচ্ছে রোহিঙ্গাদের। যে পরিচয়ের সঙ্গে ধর্ম জড়িয়ে আছে।
গত বছর আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী শুদ্ধি অভিযান শুরু করলে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘের ভাষ্যে রোহিঙ্গারা হলো বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জাতি। জাতিসংঘ ভারতকে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার কথা মনে করিয়ে দিলেও ভারত তা কানে তোলেনি। সে সাত রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকে এবং তাদেরকে তুলেও দেয়া হয়েছে। এরা গ্রেফতার হয়ে ২০১২ সাল থেকে দক্ষিণ আসামের শিলচর কারাগারে আটক ছিলো। বিদেশী আইনে তাদের বিচার হয়।
ঘটনাটিকে কাকতালীয় বলা হলেও ভারতের নতুন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এই ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে আবেদন আমলে নিতে অস্বীকার করেন। এতে বিস্ময়ের কিছু নেই, কারণ গগৈ নিজেও আসামের জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি)’র পক্ষে। আসাম থেকে সকল অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করতে মাস্টার রোল প্লে করছেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে সাত রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর মধ্য দিয়ে যদি কোন ইংগিত পাওয়া যায় তা হলো যে, ৪০ লাখ মানুষকে চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে তাদের ভাগ্যেও একই ঘটনা ঘটতে পারে তারা যদি নিজেদেরকে ভারতীয় বলে প্রমাণ করতে না পারেন। যদিও এটা বাস্তবতার নিরিখে অসম্ভব। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে না আর বাংলাদেশেরও কোন কথিত অভিবাসীকে ফিরিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা নেই।
জাতিগত নির্মূল, উদ্বাস্তু ও অভ্যন্তরীণ বাস্তচ্যূত মানুষের সঙ্গে আসাম অপরিচিত নয়। নাগরিকত্ব খুবই স্পর্শকাতর এবং সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার করা একটি ইস্যু। রাজনৈতিক দল ও গ্রুপগুলো এর সুযোগ নিচ্ছে আদিবাসীদের অধিকারের জিগির তুলে। এই প্রক্রিয়া একসময়ের বাংলাভাষী-আসামীয় বিভক্তিকে আরো তীব্র করবে। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও বাঙ্গালী অধ্যুষিত বারাক উপত্যকার মধ্যে শত্রুতা বাড়াবে। নাগরিকত্ব বিল সংশোধন হোক বা না হোক যেকোন রাজনৈতিক ব্যবস্থা ধর্মীয় মেরুকরণ নিশ্চিত করবে। এতে রোহিঙ্গারা আরো বিরূপ অবস্থায় পড়বে।”



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আসাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ