পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘দুনিয়ায় এমন একদল বুযর্গ রয়েছেন-যারা কোন ব্যক্তিবিশেষের যেমন অন্ধ সমর্থন করেন না, তেমনি কারো অহেতুক বিরোধিতাও পছন্দ করেন না। তারা কাউকে ভালোবাসলে যেমন ঘোষণা দিয়ে বাসেন না তেমনি কাউকে অপছন্দ করলেও ঢাকঢোল পিটিয়ে করেন না, অথচ তাদের এই নিরব বিরোধিতা ও নিরব সমর্থনেই নিহিত রয়েছে দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণ।’
গতকাল বুধবার ঢাকার মালিবাগস্থ খানকায়ে মুছলিহীন মালিবাগ ঢাকায় অনুষ্ঠিত পীর-মাশায়েখ বিশেষ সম্মেলনে দেশবরেণ্য খ্যাতনামা পীর ছাহেবগণ এসব কথা বলেন।
পীর ছাহেবগণ বলেন- আরব বিশ্বসহ মুসলিম জাহানে বিভিন্ন বাতিল ফেরকা ও মতাদর্শের প্রাদুর্ভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। দ্বীন-ইসলামের খেদমতের নামে চরমপন্থী উগ্রবাদীদের দ্বারা খুব জোরে-শোরে তাহরীফে দ্বীন-ধর্মের বিকৃতি সাধন চলছে। তাজদীদে দ্বীন-ধর্মীয় সংস্কার ওলামায়ে হক্কানী ও আউলিয়ায়ে কেরামের কাজ, আর তাহরীফে দ্বীন-ধর্মের বিকৃতি সাধন ইসলামের দুশমন ও ধর্মদ্রোহীদের কাজ। সংখ্যাধিক্য সত্তে¡ও সুষ্ঠু নেতৃত্বের অভাবে ইসলামের প্রকৃত অনুসারী তথা আহলে সুন্নত অল-জামায়াত কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় বাতিল, বিদয়াতী ও গোমরাহদের মোকাবেলায় দ্বীন-ইসলামের হেফাজতের জন্য কাদরিয়া চিশতিয়া নকশবন্দিয়া মুজাদ্দেদিয়াসহ সকল সুন্নিয়া তরীকার হক ছিলছিলার ওলামায়ে কেরাম ও পীর-মাশায়েখ’র কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন অপরিহার্য, প্রয়োজন প্রত্যেকের কাজের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন। পারস্পরিক সম্মান, পরিচয় ও যোগাযোগের এ সভা অব্যাহত থাকলে অচিরেই সমুদয় ইফরাতী-উগ্রপন্থী বাতিলদের পরাভব ঘটবে ইনশা আল্লাহ!
পীর ছাহেবগণ বলেন-‘দ্বীন-ইসলামের অন্যান্য মৌলিক ফরজসমূহের মতো ‘ইত্তেহাদ’ বা ঐক্যবদ্ধতাও একটি মৌলিক ফরজ। এই ফরজ তরক করার কারণেই বিশ্বব্যাপী মুসলমানগন আজ অস্তিত্ব রক্ষার চরম সঙ্কটে নিপতিত। এ অবস্থায় যারা এই ফরযিয়াতের গুরুত্ব উপলব্ধি করে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন এবং ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন-তা অনেকটা ‘আমার ছাতার তলে আসো’ ধরনের দলীয় কিংবা গোষ্ঠীগত আহ্বান হওয়ায় ঐক্যের পরিবর্তে তা অনৈক্যই সৃষ্টি করছে। মুজাদ্দেদে মিল্লাত হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) এহেন দুর্দশা থেকে মুসলমানদের উত্তরণের লক্ষ্যে দল-মত ছিলছিলা নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য ‘ইত্তেহাদ মা’য়াল ইখতেলাফ’ তথা ‘মতানৈক্যসহ ঐক্যে’র এক যুগান্তকারী দর্শন পেশ করেছেন। তাঁরই উত্তরসূরী আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুরের নেতৃত্বে দেশব্যাপী মুছলিহীনের যে ব্যাপকভাবে দাওয়াতী কার্যক্রম চলছে এবং পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামাসহ ইসলামে বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যে এ কর্মসূচীতে একীভূত হচ্ছেন-তা জাতির জন্য নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। আমরা নাস্তিক্যবাদী অপতৎপরতা এবং ইসলামের নামে ফেৎনাবাজীর মোকাবিলায় দেশ, জাতি ও ঈমান রক্ষায় মুসলমানদের তৌহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।
এক শ্রেণির উগ্র ধর্মবিদ্বেষী বøগিংয়ের নামে কী করছে তা সকলের জানা। সরকারের এ সিদ্ধান্তে গুটিকয়েক ধর্মবিদ্বেষী কষ্ট পেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মবিশ্বাসী মানুষ আনন্দিত। কোনো চাপের মুখে এ অবস্থান থেকে সরকারের ফিরে আসা উচিত হবেনা। উগ্র ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিকদের কঠোরভাবে দমন না করলে ওরা ক্রমান্বয়ে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টে উদ্যত হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকান্ড মেনে নেয়া যায় না। সকল ধর্মবিশ্বাসী সাংবাদিক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীর উচিত এ ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা।
অনুষ্ঠানে পীর-মাশায়েখ’র মধ্যে বক্তব্য রাখেন হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. এর ছাহেবজাদা আমীরুল মুছলিহীন হযরত নেছারাবাদী হুজুর, ছারছীনা দরবারের মেঝ হুজুর রহ. এর জাঁনিশীন হযরত মাওলানা শাহ মাওলানা ছাইফুল্লাহ সিদ্দিকী, ছাহেবজাদা হযরত মাওলানা শাহ্ মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, ছাহেবজাদা হযরত মাওলানা শাহ্ মুহাম্মদ মোস্তাকিম বিল্লাহ সিদ্দিকী, মৌকারা দরবারের পীর হযরত মাওলানা শাহ নেছার উদ্দিন ওয়ালীউল্লাহী, চরমোনাই মরহুম এছহাক রহ. এর ছাহেবজাদা হযরত মাওলানা সাইয়্যেদ রশিদ আহমেদ ফেরদৌস, মোকামিয়ার পীর হযরত মাওলানা শাহ মাহমুদূল হাসান ফেরদৌস, শাহতলীর পীর হযরত মাওলানা আবুল বাশার, ছারছীনা মরহুম পীর ছাহেব হুজুর রহ. এর জামাতা দাউদকান্দি সিংগুলা দরবারের হযরত মাওলানা শাহ্ নুরুল ইসলাম, হদুয়ার পীর হযরত মাওলানা শাহ মুহম্মদ আবু তাইয়্যেব, তিলিপের পীর হযরত মাওলানা শাহ সূফী রূহুল আমীন, ফয়রা দরবারের হযরত মাওলানা আব্দুস সবুর, দুধলের পীর হযরত মাওলানা শাহ মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ সিদ্দীকী, পটুয়াখালী পাংগাশিয়া দরবারের হযরত মাওলানা শাহ্ আতাউল্লাহ বোখারী, বদরপুর দরবারের হযরত মাওলানা শাহ মুহাম্মদ মু’তাছিম বিল্লাহ রব্বানী, রাজবাড়ী ভান্ডারিয়া দরবারের হযরত মাওলানা সিরাজুম মুনির এরশাদ, নিলফামারীর হযরত মাওলানা মোঃ সিরাজুস সালেকীন, হলদিবাড়ি দরবারের হযরত মাওলানা মোঃ আশ্রাফুল হক নুরী, পঞ্চগর ফয়েজে রব্বানী দরবারের হযরত মাওলানা মোঃ মাহবুবুল আলম মাছুম, ফেনী ইমামিয়া দরবারের হযরত মাওলানা মোঃ আবুল কালাম আজাদ, পিরোজপুর নাঙ্গুলী দরবারের হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুল মতিন, দুমকীর পীর হযরত মাওলানা হাবীবুর রহমান, নেত্রকোনার মরহুম ওসমান আলী রহ. এর ছাহেবজাদা হযরত মাওলানা শাহ মোঃ আব্দুল্লাহ, পঞ্চগড়ের হযরত মাওলানা মাহবুবুল আলম মাসুম, চাদঁপুর বাগদী দরবারের মাওলানা মুহাম্মদ আশিকুল আরেফীন, বগুড়া আশোকলা দরবারের হযরত মাওলানা মোঃ এমদাদুল হক, নাটোরের হযরত শাহ্ সূফী মোঃ রফিকুল ইসলাম নড়াইল পুটিমারী দরবারের হযরত মাওলানা মোঃ ইকবাল সাঈদ, হাকিমপুর দরবারের হযরত মাওলানা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, শরীয়তপুর খানকায়ে এমদাদীয়ার হযরত মাওলানা হোসাইন আহমাদ, চাঁদপুর মুমিনবাড়ীর হযরত মাওলানা ক্বারী মোঃ আশ্রাফ আলী, কুমিল্লা নাগাইশ দরবারের হযরত মাওলানা মোঃ মোস্তাক ফয়েজী, বুরিচং দরবারের হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুজ জব্বার, শিদলাই দরবারের হযরত মাওলানা মোঃ রূহুল আমীন, সোন্দ্রম দরবারের হযরত মাওলানা মোঃ শফিকুর রহমান, ঢাকা নূরে মদিনা পাক দরবারের হযরত মাওলানা মোঃ আলোমগীর, ভোলা পাতাবুনিয়া দরবারের হযরত মাওলানা মাহমুদুল্লাহ, মির্জাপুর পীর ছাহেবের ছাহেবজাদা হযরত মাওলানা শাহ মোঃ তাজুল ইসলাম, বারেশ্বর দরবারের হযরত মাওলানা কে এম সাইফুল ইসলাম, ঢাকা আশকোনার হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুর রহমান, আড়াইবাড়ীর হযরত মাওলানা গোলাম সরোয়ার সাইফী, জামেয়া মাদানীয়্যার প্রিন্সিপাল মুফতি ড. আনোয়ার হোসাইন সাইফী, জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক ড. আহমদ আবুল কালাম, মুছলিহীন সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা মাসুম বিল্লাহ আযীযাবাদী, বরগুনা চলাভাঙ্গার হযরত মাওলানা মোঃ হেলাল উদ্দিন উসমানী, হযরত মাওলানা মোঃ মুহবুবুর রহমান, হযরত মাওলানা এ বি এম ওয়াহিদুজ্জামান-উজিরপুর, হযরত মাওলানা মোঃ আবুল বাসার হেলালী-পটুয়াখালী, ছারছীনার হেড মুহাদ্দীস মাওলানা তাইয়্যেবুর রহমান রহ. এর ছাহেবজাদা মাওলানা নাছরুল্লাহ বিন তৈয়ব, হযরত মাওলানা মুফতি মজির উদ্দিন-ভোলা, উত্তর বাড্ডা ইসলামীয়া কামিল মাদরাসার হেড মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা মুফতি মোঃ বদিউল আলম সরকার, হযরত মাওলানা মজিবর রহমান প্রমূখ। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দেশবরেণ্য শতাধিক ওলামা পীর-মাশায়েখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হযরত নেছারাবাদী হুজুর বলেন-‘ওয়ালেদে মুহতারম হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. কোনদিন দলীয় রাজনীতি করেননি তবে এক্বামতে দ্বীন ও তাবলীগে দ্বীনের খেদমতের নিমিত্ত রাজনীতিকে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে তিনি আজীবন দেশে যখন যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার রাহনোমায়ী করেছেন। আমরাও আওলিয়ায়ে কেরামের অনুসৃত পথে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণ ও খেদমতের নিমিত্ত আমাদের মতামত ব্যক্ত করে আসছি। আলহামদুলিল্লাহ! গাউছে যামান হযরত নেছারুদ্দীন আহমদ রহ. থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত হক্কানী আউলিয়ায়ে কেরাম যখন যে বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেছেন, তা যে পক্ষই গ্রহণ করেছে উপকৃত হয়েছে, অবজ্ঞা করেছে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি বিভিন্ন ইসলামী ফেরকা ও ছিলছিলার অনুসারীদের অনুরোধ করছি যে, যতদিন পর্যন্ত দেশে ধর্মদ্রোহী নাস্তিক, দেশদ্রোহী দালালদের মূল উৎপাটিত না হয় ততদিন পর্যন্ত তারা যেন এখতেলাফী মাছায়েল নিয়ে বাড়াবাড়ি না করেন। কেননা তা দ্বীনের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনে এবং ‘এখতেলাফুল ওলামায়ে রহমাতুন’কে যহমতে পরিণত করে। কারণ রসূলুল্লাহ স. বলেন-‘গুলুফিদ্দীন’ দ্বীন ইসলামের জন্য অত্যন্ত মারাত্মক। আল্লাহ আমাদের সকলকে সিরাতুল মুস্তাকীমে পরিচালিত হওয়ার তৌফীক দিন। আমীন! - প্রেস বিজ্ঞপ্তি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।