বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘হজরত খালেদ ইবনে সেনান (আ:) ছিলেন ‘ফাতরাত’ যুগের নবী’ শিরোনামের একটি লেখা সম্প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেহেতু এটি একটি আকীদাগত বিষয় এবং এ মধ্যবর্তী যুগে আর কোনো নবীর আগমন না হওয়ার বিষয়টি এক হিসাবে একটি সর্বসম্মত মাসয়ালা, বিশেষ করে বর্তমান যুগে, অধিকন্তু সংশ্লিষ্ট লেখকের এ তথ্যটি বুখারী ও মুসলিমসহ সিহাসিত্তার অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত সুস্পষ্ট হাদিসের পরিপন্থী, তাই মুসলিম সম্প্রদায়কে ভুল ধারণা থেকে রক্ষা করার নিমিত্ত তাদের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরা দ্বীনি দায়িত্ব মনে করছি। এতে দৈনিক ইনকিলাবের পাঠকরাও একটি সঠিক ধারণা পাবেন। দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য বর্ণনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বা জ্ঞান সংশোধন করে নেবেন। প্রথমে ওইসব হাদিস পেশ করব, যেগুলো দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হজরত ঈসা আ. এর অন্তরবর্তীকালীন যুগে কোনো নবীর আগমন ঘটেনি। যেমন-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি অন্য মানুষের তুলনায় (ঈসা) ইবনে মরিয়মের অধিক নিকটবর্তী। নবীগণ বৈমাত্রেয় ভাই সদৃশ। আমার মাঝে আর তাঁর (ঈসা আ. এর) মাঝে আর কোনো নবী নাই।’ -সহীহ বুখারী : ১/৪৮৯ (ইন্ডিয়ান ছাপা) ২. হজরত আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি অন্য মানুষের তুলনায় ঈসা আ. এর অধিক নিকটবর্তী। নবীগণ বৈমাত্রেয় ভাই সদৃশ। আমার মাঝে আর ঈসা আ. এর মাঝে অন্য কোনো নবী নাই।’-সহীহ মুসলিম : ২/২৬৪-২৬৫
আরো দেখুন সুনানে আবি দাউদ, পৃষ্ঠা : ৬৪২, মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং : ৯২৭০
এসব সহীহ হাদিসের মোকাবেলায় তাফসিরে কাশ্শাশে কালবী নামক যে ব্যক্তির উক্তি বর্ণনা করা হয়েছে তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।
লেখক তাঁর লেখায় লিখেছেন, বিখ্যাত তফসির ‘কাশশাফ’ এর লেখক জারুল্লাহ জমখশরীসহ একদল আলেম বলেন ... অথচ কাশ্শাফের লেখক আল্লামা যমখশরী একথা বলেছেন বলে কাশ্শাফ কিতাব থেকে বোঝা যায় না। তিনি মূলত: কালবী নামক জনৈক মুফাস্সিরের বরাত দিয়ে শুধু এ কথাটি বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ আল্লামা যমখশরী রহ. লিখেছেন, কালবী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ...
আর কালবী সম্পর্কে হাদিস বিশারদগণের অভিমত ও উক্তি জানা গেলে অনায়াসে বোঝা যাবে যে, উল্লিখিত সহীহ হাদিসসমূহের মোকাবেলায় তাঁর উক্তি একেবারেই গুরুত্বহীন। এ ব্যাপারে নিম্নে সংক্ষেপে কয়েকজন প্রখ্যাত হাদিস বিশারদের উক্তি ও অভিমত উল্লেখ করা গেল-
১. আল্লামা যাহাবী রহ. কালবীর আলোচনা করতে গিয়ে একপর্যায়ে লিখেছেন, কিতাবে তার আলোচনা করাই জায়েজ নেই। অতএব তার কথা দ্বারা দলিল পেশ করা যেতে পারে কিরূপে? -আল্লামা তকী উসমানী রচিত উলূমুল কুরআন, পৃষ্ঠা : ৪৯৯
২. কালবী (শিয়াদের সরদার) আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার অনুসারীদের অন্যতম অনুসারী ছিলেন, যাদের আকীদা ছিল, হজরত আলী রাযি. মৃত্যুবরণ করেননি। তিনি আবার দুনিয়াতে ফিরে আসবেন...। -ইবনে হিব্বান রচিত কিতাবুল মাজরুহীন, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা : ২৬২
কালবীর দুর্বলতা সম্পর্কে হাদিস বিশারদগণের আরো বহু উক্তি রয়েছে। সেগুলো উল্লেখ করে কথা দীর্ঘায়িত করা সমীচীন মনে করছি না। ইলমি জগতে তাঁর মান কতটুকু তা নির্ণয়ের জন্য উপরোক্ত কয়েকটি উদ্ধৃতিই যথেষ্ট।
মোটকথা হজরত ঈসা আ. ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাঝে অন্য কোনো নবীর আগমন ঘটে নাই, এটা যেহেতু সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, সুতরাং এর বিপরীত অন্যসব উক্তি বা রেওয়ায়াত মোটেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।