বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
অদৃশ্য সেনাবাহিনী ফিরিস্তাদের মধ্যেও মান মর্যাদায় পার্থক্য আছে। একজন অন্য জনের তুলনায় শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান। কোরআনুল কারিমে ফিরিস্তাদের আলোচনা, তাদের মর্যদা ও তাদের সম্পর্কিত কর্মতৎপরতার বিবরণ বিস্তৃতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কখনো তাদেরকে আরশ বেষ্টনকারী, কখনো আরশ বহনকারী, কখনো নৈকট্যপ্রাপ্ত, কখনো উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন, কখনো পবিত্র আত্মা বিশ্লেষণে তাদেরকে উল্লেখ করা হয়েছে। (আকীদায়ে তাহাবিয়্যাহ মায়াশ শরহে : পৃ. ৩০১)। আর এ কথাও মনে রাখা দরকার যে, কোনো ফিরিস্তা কোনো প্রাণীর লাভ-ক্ষতির মালিক নয়। বরং উন্নতি অবনতির ব্যাপারে সকলেই আল্লাহ পাকের মুহতাজ ও মুখাপেক্ষী। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: (ক) ফিরিস্তাগণ সম্মানীত ভৃত্য। কোনো কথায় আল্লাহ পাকের অবাধ্য হয় না। তারা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে। (সূরা আল আম্বিয়া : আয়াত ২৬-২৭)। (খ) ঊর্ধ্ব জগতে অনেক ফিরিস্তা আছে যাদের সুপারিশ বিন্দুমাত্র কাজে আসবে না। (সূরা আন নাজম : আয়াত ২৬)।
আরবের মুশরিকগণ, মূর্তিপূজারীগণ ও ইসলাম বিদ্বেষী কতিপয় শ্রেণীর ধারণা ছিল যে, ফিরিস্তারা আল্লাহ তায়ালার কন্যা বা মেয়ে। মহান রাব্বুল আলামীন কোরআনুল কারীমের বিভিন্ন জায়গায় উক্ত ভ্রান্ত ধারণার মূলোৎপাটন করেছেন এবং এর অসারতা তুলে ধরেছেন। তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, অলীক কাহিনী ও মিথ্যাচার। ইরশাদ হয়েছে : (ক) তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, তারা কি তোমার প্রভুর জন্য কন্যা আর তাদের জন্য পুত্র নির্বাচন করে রেখেছে? (সূরা আস সাফফাত : আয়াত ১৪৯)। (খ) তারা কি প্রত্যক্ষ করেছে যে, আমি ফিরিস্তাগণকে নারী রূপে সৃষ্টি করেছি? (প্রাগুক্ত : আয়াত ১৫০)। (গ) তারা আল্লাহর জন্য কন্যা নির্ধারণ করে অথচ আল্লাহপাক সন্তান গ্রহণ হতে পবিত্র। আর নিজেদের জন্য ওই সন্তান নির্ধারণ করে যা তাদের সম্পদ। (সূরা আন নাহল : আয়াত ৫৮)। (ঘ) আল্লাহপাকের জন্য কন্যা আর তোমাদের জন্য পুত্র? (সূরা আত তুর : আয়াত ৩৯)। (ঙ) কাফিরগণ আল্লাহর বান্দাহ ফিরিস্তাগণকে নারী রূপে নির্ধারণ করে। (সূরা আয যুখরুক: আযাত ১৯)। (চ) মূর্তিপূজারীগণ ফিরিস্তাদেরকে আল্লাহর কন্যা মনে করে। তাদের এ ধারণা ফিরিস্তাদের মান মর্যাদার সীমা লংঘন ও সত্য হতে বিচ্যুতি। কেননা এর দ্বারা তারা মনিব-দাসের সম্পর্ককে পিতা-কন্যার সম্পর্কে উন্নীত করেছে। যা ডাহা মিথ্যা। (নিরবাস : পৃ. ২৮৮)।
ফিরিস্তাগণ যখনই মানবাকারে আত্মপ্রকাশ করেছেন, তারা পুরুষরূপে আত্মপ্রকাশ করেছেন। কোনো ফিরিস্তা কখনো নারীরূপে প্রকাশ পাননি। এমন কি হজরত মারইয়াম আ. এর কাছে আগমনকারী ফিরিস্তাও পুরুষ রূপ ধরেই আগমন করেছিলেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : অতঃপর আমি তার নিকট ফিরিস্তা (রূহ) প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট মানব আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল। (সূরা মারইয়াম : আয়াত ১৭)
বস্তুত: কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলুল্লাহ সা. দ্বারা প্রমাণীত যে, ফিরিস্তাদের বিভিন্ন শ্রেণী আছে এবং তারা সৃষ্টির বিভিন্ন শ্রেণীর কাজের সাথে সংযুক্ত আছেন। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত পর্বতরাজির নিয়ন্ত্রণের জন্য, মেঘমালার শৃঙ্খলা বিধানের জন্য, সুচারুরূপে বৃষ্টি বর্ষণের জন্য ফিরিস্তা নিযুক্ত করেছেন। মাতৃগর্ভে বীজের পূর্ণতা প্রাপ্তি পর্যন্ত দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ফিরিস্তা নিযুক্ত করেছেন। তা ছাড়া বান্দার আমলের সংরক্ষণ, তার হিসাব রক্ষণ ও লিপিবদ্ধকরণের ব্যাপারে ফিরিস্তা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন। মাখলুকের প্রাণ হরণ, কবরে প্রশ্ন করণ, নভোমন্ডলকে পরিচালনা করণ, চন্দ্র সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করণ, জাহান্নামের অগ্নি প্রজ্জলিত করণ ও তার আধিবাসীদের শাস্তিদান, জান্নাত ও জাহান্নামের ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ, জান্নাতে বৃক্ষ চারা রোপণ, জান্নাতের উপাদানসমূহ কাজে লাগানোর জন্য ফিরিস্তা নির্ধারিত ও নিযুক্ত আছেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয়, তার নিকট দুইজন কৃষ্ণ ও নীল চক্ষু বিশিষ্ট অন্ধ ফিরিস্তা আগমন করে, তাদের একজনকে ‘মুনকার’ অপরজনকে ‘নাকির’ বলে। (জামে তিরমিযী: খন্ড ১, পৃ. ৩৩২)। রাসূলুল্লাহ সা. আরো ইরশাদ করেছেন : আল্লাহপাকের একদল ভ্রাম্যমাণ ফিরিস্তা রয়েছেন, যারা আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌঁছে দেয়। (আস সুনানু নাসাঈ : খন্ড ১, পৃ. ১৮৯)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।