Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বাসা-বাড়িতে বেড়েছে চুরি

জিডি নিয়েই ক্ষান্ত পুলিশ

আবদুল্লাহ আল মামুন : | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বাধা দিলে জখম-খুন
ছাড়া পেয়ে আবারো একই কাজে জড়িয়ে পড়ে : ডিএমপি


রাজধানীতে হটাৎ করে বাসা-বাড়িতে চুরির হিড়িক পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চুরির ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ভিআইপি ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরাও রেহাই পাচ্ছেন না চোরদের থেকে। চুরি সংঘটনকালে বাধা দিতে গেলে চোরদের হাতে জখমসহ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে চুরির ঘটনায় পুলিশ মামলার পরিবর্তে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) নিতে আগ্রহী বেশি। এ সব জিডির গুটি কয়েক ছাড়া বেশিরভাগেরই কখনো কোন তদন্ত হয় না। অনেকে চুরির সময়ের সিসি টিভি ফুটেজ পুলিশকে দিরেও পাচ্ছেন না যথাযথ প্রতিকার। এ সব কারণে চুরির পরেও অনেকে ঝামেলা এড়াতে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকছেন।
ভুক্তভোগী নগরবাসীর অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করায় চোর চক্রের সদস্যরা মাথাচড়া দিয়ে উঠেছে। পুলিশের অনুপস্থিতির এই সুযোগ কাজে লাগাতে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় চোরেরা। নগরবাসী মনে করেন, এলাকাভিত্তিক পুলিশি টহল জোরদারসহ তালিকাভুক্ত চোর ও দুস্যুদের প্রত্যাহিক কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করলে বাসা বাড়িতে চুরি অনেক কমে আসবে।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাচক ও সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর মোহাম্মদপুরের বাসায় গ্রিল কেটে সব কিছু নিয়ে গেছে চোরেরা। তিনি এশিয়া কাপের খেলা উপলক্ষ্যে দুবাইতে ছিলেন। ২৩ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে তিনি বলেন, বাসার সবকিছু ওলটপালট। ঘরে কোনো জিনিস রাখে নাই। টাকা-পয়সা, অলংকার যা ছিল- সব নিয়ে গেছে। ২১ সেপ্টেম্বর অনলাইন পোর্টাল পরিবর্তন.কমের সিনিয়র রিপোর্টার এইচ এম ফারুকের বাসা থেকে ৩টি মোবাইল ফোন, পাওয়ারবক্স, ক্যাবল ও মানিব্যাগসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে গেছে চোরেরা। তিনি বলেন, পাঁচ তলার বাসায় একটি জানালা ছাড়া সব কিছুই বন্ধ ছিল। এত উঁচুতে কিভাবে চুরি হল বুঝতে পারছি না। ঘটনার পর থানায় মামলা করতে পুলিশ মামলা না নিয়ে জিডি হিসেবে নথিভুক্ত করেন বলে তিনি জানান। ১৪ সেপ্টেম্বর লালবাগের খাজি দেওয়ান লেনের একটি বাসায় ঢুকে ৬ তলা থেকে ৫৬ হাজার টাকা মূল্যের দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় এক চোর। ঘটনার পর চকবাজার থানা জিডি নিলেও এখন পর্যন্ত কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মাজহার জানান, ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ পাওয়া গেলেও চোরের নাম-পরিচয় না জানায় থানায় মামলার পরিবর্তে জিডি গ্রহন করে।
এদিকে চুরি বা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা দেখে তাতে বাধা দিলে চোরদের হাতে জখম ও প্রাণহানিসহ বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটছে। গত ১৬ মার্চ মুগদায় একটি ভবনে ঢুকে চুরির সময় বাধা দেওয়ায় মিজান ও আবদুল গণি নামে দুইজনকে কুপিয়ে মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। ৯ মার্চ দারুস সালাম এলাকায় বাসার নিরাপত্তা কর্মী ওমর ফারুককে কুপিয়ে হত্যার পর মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয় চোরেরা। ১ মার্চ হাজারীবাগ ঝাউচর এলাকায় একটি নির্মাণাধীণ ভবনে চুরি করার সময় ধরে ফেলায় ছুরিকাঘাতে মুরাদ খান নামে এক নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়। ২৬ আগস্ট ডেমরার সারুলিয়ায় খাবারের সাথে অজ্ঞান করার ওষুধ খাইয়ে এক বৃদ্ধ দম্পতিকে হত্যা করে একটি নারী দস্যু চক্র। ঘটনার পর ডেমরা থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান বলেছিলেন, বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে কয়েকজন নারী লুট করার জন্য ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে অজ্ঞাত জাতীয় কিছু খাওয়ালে মারা যান তারা।
নগরবাসীর অভিযোগ, মহল্লায় পুলিশি টহল অনেক কমে গেছে। পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযানে বেশি সময় দেওয়ায় চোর চক্র অনেক বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নানা পদক্ষেপ নিয়েও বাড়ি-ঘরের চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। কয়েকজন বাড়ির মালিক বলেন, চোরদের থেকে বাঁচতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরেও কাজ হচ্ছে না। লালবাগের বাড়িওয়ালা মোবিন আহমেদ বলেন, চুরির অভিযোগে থানায় মামলা নিতে চায় না। বেশিরভাগ ঘটনায় হারানোর জিডি নেয় থানা। এ সব জিডি কখনো তদন্ত করতেও দেখা যায় না। যার কারণে এখন চুরি হলেও অনেকে অভিযোগ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। শাজাহান সিরাজ বলেন, চুরির পরে থানায় সিসি ফুটেজ জমা দিলেও চোরেরা ধরা পরে না। বাড়িওয়ালা বা ভাড়াটিয়ারা চোরদের চিনতে না পারায় এসব ঘটনা বারবার ঘটলেও অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। ধানমন্ডির বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, এলাকা ভিত্তিক টহল আরও জোরদার করতে হবে। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। পল্লবীর বাড়িওয়ালা আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের তালিকাভুক্ত চোর ও দস্যু চক্রের ওপর নিয়মিত নজরদারি বাড়ানো হলে নগরীতে ৮০ শতাংশ চুরি কমে যাবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, পুলিশ নিয়মিতভাবে এলাকায় টহল দিচ্ছে। ছিচকে চোর ও গ্রিল কাটা চোরদেরও নিয়মিত গ্রেফতার করা হচ্ছে। কোন চোরকে একাধিকবারও গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ছাড়া পেয়ে আবারও একই কাজে জড়িয়ে পড়ায় তাদের দমন করতে বেগ পেতে হচ্ছে। টহল পুলিশ ও কমিউনিটিং পুলিশি কার্যক্রম জোরদারের পাশপাশি প্রতিটি বাসায় উন্নতমানের তালা ব্যবহার ও সিসিটিভি লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চুরি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ