পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সড়কে শৃৃঙ্খলা ফেরাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। লঘু শাস্তি থেকে গুরু দন্ড কোন পদক্ষেপই কাজে আসছে না। প্রায় প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের দায়ে মামলা জরিমানা অব্যাহত আছে। চলছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের সচেতনতা কার্যক্রম। এত কিছুর পরেও সচেতন নয় পথচারী ও বেপরোয়া চালকরা। কোন নিয়মই যেন একরোখা বাঙালির চেতনাকে জাগাতে পারছে না। নিয়ম ভঙ্গই যেন এদেশে ক্ষমতা আর বাহাদুরির বহিঃপ্রকাশ। নগরবাসী ও সংশ্লিষ্ট নগর বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন- নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থী ও দেশবাসীর এত বড় আন্দোলনও কি ব্যর্থ হতে বসেছে অবশেষে? ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, রাজধানীতে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠে পুরো দেশ। ঠিক সে রকম একটি মুহুর্তে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে ‘ট্রাফিক পুলিশ সপ্তাহ’ ঘোষণা দেয় পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। গত ৫ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত দু’দিন বাড়িয়ে টানা ১০ দিন পালন করা হয় ট্রাফিক সপ্তাহ। এই ১০ দিনে ট্রাফিক আইন ভঙ্গসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন যানবাহনে ৮৮ হাজার ২৯৩টি মামলা দেওয়া হয়। এ সময়ে জরিমানা করা হয় ৫ কোটি ১০ লাখ ৯৬ হাজার ২৭৭ টাকা। এ হিসেবে ট্রাফিক সপ্তাহের ১০ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার ৮শ’র বেশি মামলা করা হয়। যেখানে গড় জরিমানা ছিল ৫০ লাখ টাকারও বেশি।
ট্রাফিক সার্জেন্টদের ভাষায়, এত বড় অভিযানেও সড়কে স্থায়ী শৃঙ্খলা ফেরেনি। শত চেষ্টা করেও নগরবাসীকে আইন মানতে সচেতন করা সম্ভব হয়নি। তারা বলেন, কোন ব্যক্তি মামলা ও জরিমানার পরে দু-চারদিন সতর্ক থাকলেও আবারও পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসে নিয়ম ভঙ্গ করছে।
ট্রাফিক বিভাগ আরও জানায়, ট্রাফিক সপ্তাহ শেষে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, স্কাউট, বিএনসিসি ও গার্লস গাইডসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমন্বয়ে চলতি সেপ্টেম্বর মাসকে ‘সচেতনতা মাস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে সচেতনতা মাস শুরুর পরে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনে বিভিন্ন যানবাহন ও চালককে ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৮৭টি মামলা দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। এ সময় জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৯ কোটি ৩৭ লাখ ৬০ হাজার ৯৫০ টাকা। এ সময় বিপুল পরিমন যানবাহন ডাম্পিং ও রেকার করা হয়।
ট্রাফিকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নগর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন- পথচারী-চালকসহ সংশ্লিষ্ট নগরবাসী স্বেচ্ছায় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আইন মানতে সচেষ্ট না হলেও কখনো সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। একইসঙ্গে ফুটপাত মুক্তকরণসহ পরিকল্পিতভাবে সড়কের অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
গত কয়েকদিন নগরীর বিভিন্ন সড়কে সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে শৃঙ্খলা তৈরি এবং চালক ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে ট্রাফিক পুলিশের সাথে নিরলসভাবে কাজ করছেন স্কাউটসহ স্বেচ্ছাসেবীরা। এ সব শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীরা জেব্রা ক্রসিং ও ফুট ওভারব্রিজ মেনে পথ চলাচল, নির্ধারিত স্টপেজে যাত্রী ওঠানামা করানো, গাড়ির ভেতরে দাঁড়িয়ে লোক না ওঠানো, গাড়ির নাম্বার ও চালকের পরিচয় পত্র ঝুলিয়ে রাখতে বলাসহ নানাভাবে সতর্ক ও সচেতন করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অধিকাংশ পথচারী ও চালক নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে সব কিছু নিজের ইচ্ছেমতো করছেন। এতে শত চেষ্টা থাকা সত্তে¡ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে মতিঝিলে গার্লস গাইডের সদস্য সুমাইয়া পারভিন বলেন, খুব কম মানুষ আইন মানতে চায়। অনেককে হাত দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার পরে জেব্রা ক্রসিং বা ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে চায় না। বাংলা মোটরে দায়িত্বরত বিএনসিসির সদস্য মিরাজ হোসেন বলেন, মোটরসাইকেল চালকরা বেশি আইন ভঙ্গ করে। এ ছাড়া অনেক পথচারীও নিয়ম মানার পরিবর্তে উল্টো গালিগালাজ করেন। মিরপুর ১০ নম্বরে দায়িত্বরত স্কাউট সদস্য আরিফ হোসেন বলেন, অনেক চালক বা পথচারী আইন ভাঙতে পারলে আনন্দিত হয়। তারা বাঁকা হাসি দিয়ে আমাদের অবজ্ঞা করে চলে যায়। অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবীরা বলেন, প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে সচেতন হলেই যানজটমুক্ত সুন্দর সড়ক নিশ্চিত করা সম্ভব।
মগবাজার এলাকায় দায়িত্বরত সার্জেন্ট আসাদুল বলেন, প্রতিদিন মামলা জরিমানা করা হলেও কারো ভেতরে সচেতনতা জাগ্রত হচ্ছে না। আইন ভাঙাকে অনেকে বাহাদুরি মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাফিক পুলিশকে গালাগালি করেন। অনেক ভিআইপিও আইন জেনে অমান্য করেন। আইন মেনে চললে চালক-যাত্রী, পথচারী সবার জন্য কল্যাণকর বলে তিনি মনে করেন।
গত মঙ্গলবার ঢাকার মিরপুরে একটি স্কুলের সামনের মূল রাস্তায় প্রাইভেটকার রেখে যানজট তৈরি করলে ঝোটন শিকদার নামে এক সার্জেন্ট গাড়িটি সরাতে বলেন। এতে গাড়ীর ভেতরে থাকা এক নারী ক্ষিপ্ত হয়ে ওই সার্জেন্টকে হুমকি দেন। ওই নারী নিজেকে একইসঙ্গে সরকারি দলের লোক, এমপির মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোক দাবি করে সার্জেন্টকে হুমকি দেন।
এ বিষয়ে নগর বিশেষজ্ঞ বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, চালক বা পথচারীদের শুধু জরিমানা বা শাস্তি দিয়ে আইন মানানো অযৌক্তিক। তিনি বলেন, ফুটপাত মুক্তকরণসহ পরিকল্পিতভাবে সড়কের উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি ছাড়া কখনো সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সহসভাপতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, সড়কে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের পেছনের মূল কারণটি আগে চিহ্নিত করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ পরিবহন সেক্টরকে যথাযথ আইনি তদারকিতে আনতে হবে। একইসঙ্গে নাগরিকদেরকে স্বেচ্ছায় আইন মানতে ও আইনের প্রতি সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল করা গেলে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব।
ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, সড়কের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা বহুদিনের। ট্রাফিক বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আগের থেকে বর্তমানে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। ধীরে ধীরে এ অবস্থা আরও অনেক পরিবর্তন হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।