বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
১৩ বছর আগে ৯ বছরের ফুটফুটে সুন্দর মেয়েটিকে বাবা-মা অভাবের তাড়নায় অন্যের বাড়িতে কাজ করতে দেয়। সে থেকে মনির কোনো খোঁজ নেই। অবশেষে গ্রষ্টার অপার করুণায় অনেকটা নাটকীয়ভাবে চাঁদপুর পুলিশ সুপারের প্রচেষ্টায় নার্গিস আক্তার মনি তার পরিবারের সন্ধান পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মো. জিহাদুল কবির পিপিএম মনিকে তার পিতার হাতে তুলে দেন। দীর্ঘ ১৩ বছর পিতা তার সন্তানকে পেয়ে যেনো স্বর্গ খুঁজে পেলো। তখন সেখানে আনন্দ অশ্রু মিশ্রিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, নার্গিস আক্তার হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা আঃ সাত্তার কৃষক। সংসারে অভাব-অনটন থাকে সবসময়। সন্তানদের ভালোভাবে ভাত-কাপড় দিতে পারেন না। অগত্যা প্রতিবেশী স্বজনের দারস্থ হলেন বাবা। তারা ধনাঢ্য পরিবার। প্রায় সারাবছর ঢাকাতেই থাকেন। তাদের বাসায় গেলে খাওয়া-পড়ার অভাব হবে না। ধনাঢ্য এ পরিবারও আশ্বাস দিলো, বাসাই তেমন কাজ নেই, খাবে-দাবে, টিভি দেখবে আর মাঝে মাঝে গৃহকর্ত্রীকে সাহায্য করবে। বিনিময়ে মাস গেলে ভালো বেতন পাবে। এ চিন্তা থেকে বাবা আঃ সাত্তার তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে মনিকে ঢাকায় পাঠালো। যাওয়ার সময় বাবার গলা ধরে খুব কেঁদেছিল মনি। মায়ের আঁচলটা ঝাপটে ধরে ছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিদায় নিয়েছিল ঠিকই। মা বলেছিল সামনের মাসেই দেখা হবে আবার। বিশ্বাসও করেছিলো মেয়েটা। কিন্তু তার বিশ্বাস সত্যি হয়নি। ঢাকার বাসায় আনার পর তার ওপর শুরু হয় অকথ্য নির্যাতন। সইতে না পেরে মাসখানেক পরেই মনি রাতের আঁধারে পালিয়ে চলে যায় সদরঘাট। ৮/৯ বছরের বাচ্চাকে একা একা ঘুরতে দেখে এগিয়ে আসে এক লোক। ওই লোকটি মনিকে নিয়ে যায় উত্তরায় তার চাচীর বাসায়। একমাস পরেই ঢাকা থেকে তাকে বাগেরহাটে পাঠিয়ে দেয় তার মেয়ের কাছে। ৮ বছর কাজ করে ওই বাসাতে। তবে সেখানেও তার ওপর চলে নির্যাতন। আবার পালায় মনি। কিন্তু কোথায় যাবে, কী করবে বুঝতে পারে না। আবারো অসহায়ের মতো ঘুরতে থাকে পথে পথে। এবার আশ্রয় হয় এক কমিশনারের বাড়িতে। কিছুদিন পরই কমিশনার মনিকে পাঠায় তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট হলেও বর্তমানে ঢাকায় স্থায়ীভাবে থাকবেন। বাড়ির কর্ত্রী অমায়িক মানুষ। মাঝে মাঝেই গল্প করেন মনির সাথে। সদা উচ্ছল মেয়েটা মাঝে মাঝেই উদাস হয়ে যায়। একদিন কথাচ্ছলে মনি জানায় তার করুণ ইতিহাস। শুনে খুব মায়া হয় গৃহকর্ত্রীর। কিন্তু কিছুই করার ছিলো না। কেননা মনির ছোটবেলার কথা কিছুই মনে ছিলো না। শুধু বলতে পারে চাঁদপুরের দিকে কোথাও হরিণহাটা জাতীয় নামের একটা গ্রামে ছিলো তাদের বাড়ি। বাবার নাম সাত্তার। যাই হোক, এটুকু সম্বল নিয়ে এক যুগ আগের ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায় না। ওই গৃহকর্ত্রী হচ্ছেন চাঁদপুরের বর্তমান পুলিশ সুপারের বন্ধু। হঠাৎ একদিন গৃহকর্ত্রীর আলাপ হয় পুলিশ সুপারের সাথে। কথা প্রসঙ্গে মনির কথা উঠে আসে। ঘটনাটা দুঃখ প্রকাশ আর সান্ত¡নার মধ্য দিয়েই শেষ হতে পারতো। কিন্তু পুলিশ সুপার বাসায় এসে ঘুমোতে পারেননি। যতোবার তার মেয়ে বাবা বলে ডেকেছে, ততোবারই তার মনে হয়েছে কেউ হয়তো প্রতীক্ষা করছে মনির বাবা ডাক শোনার জন্যে। তাই স্থির করলেন মনিকে খুঁজবেন। তিনি চাঁদপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুব মোল্লাকে মনির ঠিকানার সন্ধানের দায়িত্ব দেন। সন্ধান মেলে হরিণাঘাটের। তারপর ওই এলাকার সাবেক মেম্বার হাসানের সহায়তায় সন্ধান মেলে ১২ জন সাত্তারের। তবে দুঃখের বিষয় মনির বাবা সাত্তারের সন্ধান কেউ দিতে পারে না। হাল ছাড়েন না পুলিশ সুপার। গত ১০/১২ বছরে কোন কোন সাত্তার মারা গেছেন, কারা গ্রাম ছেড়েছেন তাদের খোঁজ নেয়া চলে।অবশেষে জানা যায়, মূল গ্রাম থেকে বসতি ছেড়ে চর এলাকায় বসতি করেছে এক সাত্তার। ২৬ অক্টোবর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আনা হয় সেই সাত্তারকে। কথা শুনে কিছুটা মিল পাওয়া যায়। এরপর একটা ভিডিওকল। এক প্রান্তে পুলিশ সুপার অন্য প্রান্তে মনি। কথার এক পর্যায়ে ফোনের ক্যামেরা তাক্ করা হয় সাত্তারের দিকে। এরপর স্তব্ধ সবাই। ফোনের ভেতর দিয়ে যেনো বেরিয়ে আসতে চায় দুটি মানুষ। জড়িয়ে ধরতে চায়।কাঁদতে চায় এক যুগের জমা হওয়া কান্না। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ঢাকা থেকে আনা হয়েছে মনিকে। ফিরিয়ে দেয়া হবে তার বাবা, ফিরিয়ে দেয়া হবে তার ঠিকানা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।