Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইসিতে অস্থিরতা

ইভিএম প্রকল্পে অন্ধকারে আর্ছি : ইসি রফিকুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

নির্বাচন কমিশনে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে। নানা বিষয় নিয়ে কমিশনে টানাপড়েন ও মতপার্থক্য চলছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে এই ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত হলেও সম্প্রতি তা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে চার কমিশনার কমিশন সচিবালয়ের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে আনঅফিসিয়াল নোট (ইউনোট) দিয়েছেন। এদিকে নির্বাচনের কমিশনের অভ্যন্তরীণ টানাপড়েনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
কমিশন সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ছাড়া বাকি চারজন নির্বাচন কমিশনার ইসি সচিবালয়ের কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ বিধি অনুযায়ী কমিশনের সব সিদ্ধান্ত জানার কথা থাকলেও তাদের বাইপাস করে ইসি সচিবালয় সিইসির সম্মতি নিয়ে বড় বড় অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়ের ৩ হাজার ৮শ’ কোটি টাকার প্রকল্পের বিষয়েও কমিশনার রয়েছেন অন্ধকারে। এছাড়া সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনে সফর, নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্তের বিষয়ে সিইসি বাদে অন্য কমিশনাররা জানেনই না। এসব কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ৪ কমিশনারই জোটবদ্ধ হয়ে ইসি সচিবকে একাধিক দফায় আনঅফিসিয়াল নোট দিয়েছেন। নোটে তারা কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ সব ফাইল কমিশনারদের কাছে উপস্থাপনের জন্য ইসি সচিবালয়কে নির্দেশনা দেন। এছাড়া অপর এক ইউনোটে কমিশনের নির্বাচন প্রস্তুতি, ইসি সচিবালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম ও প্রকল্প সম্পর্কে তথ্য চেয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দু’দফায় ইউনোট দিয়েছি। এ নোটে কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য সচিবালয়ের কাছে চাওয়া হয়েছে। নোটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইভিএম প্রকল্প, কমিশনারদের সফরসূচিসহ অনেক বিষয়ে আপনারা আমাদের কাছে জানতে চান। কিন্তু আমি নিজেই এসব বিষয়ে অন্ধকারে থাকার কারণে আপনাদের জবাব দিতে পারি না। আর একজন কমিশনার হয়ে ভেতরকার খবর না জানলে জনগণ আমাদের নিয়ে ভুল বুঝতে পারেন। এইসব কারণে কমিশনের সব বিষয়ে আপডেট থাকতে ইউনোট দিয়েছি। বলেছি ভবিষ্যতে ইসির যে কোনও কার্যক্রম যেন আমরা জানতে পারি। তিনি বলেন, এখানে টানাপড়েন বা অস্থিরতার কোনও বিষয় নেই।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বে এই নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অন্য কমিশনাররা হলেন মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। দায়িত্ব নেয়ার পর সব ঠিকঠাক চললেও গত বছরের জুলাইয়ে ইসি সচিবালয়ের বদলি প্রক্রিয়া নিয়ে সর্বপ্রথম ইউনোট দেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এরপর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারণার অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেন তিনি। এ সময় সিটি নির্বাচনে নানা অনিয়ম নিয়েও তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। সিইসির নির্দেশে কমিশনার মাহবুর তালুকদার গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অনিয়ম তদন্ত করে রিপোর্ট দিলেও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি। সম্প্রতি মাহবুব তালুকদার জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম যুক্ত করে আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট দেন এবং তিনি সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকে জানান। বিগত দিনে মাহবুব তালুকদার নানা বিষয়ে দ্বিমত অবস্থানে থাকলেও অতি স¤প্রতি তার সঙ্গে অন্য তিন কমিশনারও যুক্ত হয়েছেন।
ইসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ও ইসি সচিবের সঙ্গে চারজন কমিশনারেরই দূরত্ব ক্রমেই বেড়ে চলছে। এটা প্রকাশ্য রূপ নেয় ইভিএম মেশিন কেনার প্রকল্প গ্রহণকে কেন্দ্র করে। এছাড়া ঢাকায় অনুষ্ঠিত ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া সম্মেলন নিয়েও চরম অসন্তোষ তৈরি হয়। হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু তে ওই সম্মেলনে চারজন কমিশনারের জন্য পৃথক রুম বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এ নিয়ে একজন কমিশনার ওই হোটেলে উচ্চবাচ্য করে সম্মেলন ত্যাগ করতে উদ্যত হন। এছাড়া সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সিইসি ও ইসি সচিবের জেলা সফর, নির্বাচনের প্রস্তুতি, নির্বাচন প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গুলোতে চার কমিশনারের সিদ্ধান্ত না নেয়ায় কমিশনারদের মধ্যে মতবিরোধ বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২২ সেপ্টেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এই বিষয়েও চার কমিশনারের মতামত নেয়া হয়নি। উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানেও সিইসি ও সচিব ছিলেন। চার কমিশনারের কেউকে দেখা যায়নি। এই প্রশিক্ষণ বিষয়ে তাদের মতামত গ্রহণ এবং আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানা গেছে। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিইসি নির্বাচনি সফর শুরু করেছেন। ইসি সচিবেরও সফরের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখনও চার নির্বাচন কমিশনারের সফরের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। সূত্র আরও জানায়, আগে কমিশন সভার ছাড়াও অন্য দিনগুলোতে সব কমিশনার সিইসির কার্যালয়ে চা খেতে বসতেন। সম্প্রতি তারা প্রয়োজন ছাড়া সিইসির রুমে যাচ্ছেন না। চার কমিশনার মিলে এখন একেক দিন একেক কমিশনারের রুমে বসছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন সময়ে কমিশনের মধ্যকার কিছু সমস্যার কথা আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে শুনেছি। চার কমিশনারের ইউনোটের কথা বলছেন সেটা এখনও সেইভাবে আসেনি। তবে, এটা যদি সত্য হয় তা মোটেও ভালো খবর নয়। কমিশন একটি যৌথ নেতৃত্বের বিষয়। সামনে নির্বাচন এই সময় যদি নিজেদের মধ্যে অস্থিরতা বা ভুল বোঝাবুঝি থাকে সেটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কমিশনে একক সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনও সুযোগ নেই। ৫জন কমিশনার সিঙ্গেল ভোটের মালিক। তারা সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্য কমিশনারদের অন্ধকারে রেখে সচিবালয় ও সিইসি একক সিদ্ধান্ত নিলে সেটা মোটেও ঠিক হবে না। নির্বাচনের মাত্র তিন মাস বাকি আছে এখন যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে তাহলে তা নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে।



 

Show all comments
  • টুটুল ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:২৭ এএম says : 0
    এদের দিয়ে সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব নয়
    Total Reply(0) Reply
  • Suman Ahmed Khan ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:৫১ এএম says : 0
    সাংবিধানিক পদে বসে সততার সাথে কাজ করতে না পাড়লে প্রতিবাদ করে একযোগে পদত্যাগ করা উচিত।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Billal Hosen ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:৩৯ পিএম says : 0
    আবুল আব্বাস সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাঃ) –এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে এমন কর্ম বলে দিন, আমি তা করলে যেন আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন এবং লোকেরাও আমাকে ভালবাসে।’ তিনি বললেন, “দুনিয়ার প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন। আর লোকদের ধন-সম্পদের প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে লোকেরা তোমাকে ভালবাসবে।” (ইবনু মাজাহ ৪১০২) আবুল আব্বাস সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাঃ) –এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে এমন কর্ম বলে দিন, আমি তা করলে যেন আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন এবং লোকেরাও আমাকে ভালবাসে।’ তিনি বললেন, “দুনিয়ার প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন। আর লোকদের ধন-সম্পদের প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে লোকেরা তোমাকে ভালবাসবে।” (ইবনু মাজাহ ৪১০২)
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ