পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বরাজনীতির আইডল মাহথির মোহাম্মদ। ক্ষমতা ছাড়ার ১৫ বছর পর তিনি ৯২ বছর বয়সে আবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বিশ্বের রাজনীতিতে আর যার সেই সম্ভাবনা ছিল তিনি হলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ইমেজ এবং ক্ষমতায় যাওয়ার মতো সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল ছিল। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী তাকেই মানেন। কিন্তু স্ত্রীর অর্থলিপ্সার বিরোধে জর্জরিত হওয়ায় ৮৮ বছর বয়সী এরশাদ কার্যত দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন। ’৯০ দশকে কারাগারে বন্দী থাকার সময় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরীকে কঠোর নির্দেশ দিয়ে স্ত্রী রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য করেন। অথচ প্রায় এক যুগ থেকে নিজের গড়া দলেই স্ত্রীর সঙ্গে কর্তৃত্বের লড়াই করে যাচ্ছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীণ সরকারে দলের কারা থাকবেন তা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার বিরোধ এখন ওপেন সিক্রেট। দলের কো চেয়ারম্যান জিএম কাদের স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের কথা স্বীকার করে ইনকিলাবকে বলেন, ও বিরোধ আগেও ছিল এখনো রয়েছে।
গৃহপালিত বিরোধী দল জাপার অভ্যন্তরে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে ‘নির্বাচনকালীন সরকারে’ দলের কারা থাকছেন তা নিয়ে। সুত্র মতে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভার জন্য জাপা থেকে ৩ জনের নাম চাওয়া হয়েছে। এই নাম দেয়া নিয়ে স্বামী এরশাদ ও স্ত্রী রওশনের মধ্যে চলছে লড়াই। গত ৯ সেপ্টেম্বর এইচ এম এরশাদ দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, কাজী ফিরোজ রশীদ। দুই ঘন্টা বৈঠকের পর এরশাদ নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে ‘রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু ও কাজী ফিরোজ রশিদের নাম দেন। স্ত্রীকে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এরশাদের দেখা করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন রওশন। অতপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভার জন্য মশিউর রহমান রাঙা, ফখরুল ইমাম ও একজন মহিলার নাম দেন। একই সঙ্গে বগুড়া-৬ আসনের এমপি নুরুল ইসলাম ওমরকে বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ করার প্রস্তাব দেন। ওই সাপ্তাহেই জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ নিয়োগে রওশনের প্রস্তাব অনুমোদন করেন। নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় দলের নাম দেয়া নিয়ে এরশাদ ও রওশন এরশাদের এই বিরোধ এখন ‘টক অব দ্য পার্টি’। নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, কানাঘুষা করলেও বিপদের ভয়ে স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ নিয়ে দলের নেতারা মিডিয়ায় কথা বলতে নারাজ। তবে কয়েজকন নেতা ইনকিলাব প্রতিনিধির কাছে দুঃখ করে বলেন, রওশন এরশাদ লোভের কারণে দলটাকে ধ্বংস করলেন। স্যার (এরশাদ) বাংলাদেশের মাহথির মোহাম্মদ হতে পারতেন। স্বামী-স্ত্রীর বিরোধে তা তিরহিত হয়েছে। কো চেয়ারম্যান জিএম কাদের দুঃখ করে বলেছেন, দলের চেয়ারম্যান যেখানে নির্বাচনকালীন সরকারের তালিকা দিয়েছেন; সেখানে অন্যজনের পৃথক তালিকা দেয়া দুঃখজনক। দলে আগে যে বিরোধ ছিল এখনো তাই আছে। উনি (এরশাদ) তো জনগণের রাজনীতি করতে পারেননি। জনগণ কি চায় দলের নেতারা কি চায় তা অনুধাবন না করে সুবিধাবাদীদের প্রশ্রয় দিয়েছেন; নিজেও সে পথে সুবিধা নিয়েছেন। দলীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচন থেকে যারা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিলেন, তিনি তাদের জন্য কিছুই করলেন না। উল্টো চোর-বাটপারদের নিয়েই রাজনীতি করছেন; তাদের খুশি করে চলছেন। এতে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। উনি (এরশাদ) নিজেও সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ অনুধাবন করতে পারছেন না বা করার চেষ্টা করছেন না।
সুত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এরশাদের বৈঠকের সময় রুহুল আমিন হাওলাদার প্রধানমন্ত্রীকে তার ওপর সুদৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ করলে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, আপনাদের দিকে কী দেখবো! আপনি দিনে আমাদের সঙ্গে আর রাতে ওদের (বিএনপি) সঙ্গে থাকেন। আপনাদের বিশ্বাস করা দুস্কর।
নির্বাচনে ডিজিটাল প্রচারণা উপলক্ষ্যে ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে দু’দিনের কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেখানে রওশন এরশাদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এমপিকে সেখানে না যাওয়ার নির্দেশনা দেন। রওশন এরশাদের পক্ষ্যে প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা এমপিদের ফোন করে রওশনের পক্ষ্যে অবস্থান নেয়ার প্রস্তাব দেন; না হলে বিপদ হবে বলেও হুশিয়ার করে দেন। বাধ্য হয়েই এমপিদের কয়েকজন কর্মশালায় অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকেন। জানতে চাইলে জাপার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, এরশাদই হচ্ছেন দলের সবকিছু। অথচ তার নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন তারই স্ত্রী। আমরা এ নিয়ে কিছু বললে বিপদ অনিবার্য। কারণ এরশাদ ম্যাডামের (রওশন) এধরণের কর্মকান্ডে বিক্ষুব্ধ হলেও স্ত্রীর বিরুদ্ধে কেউ বললে তিনি পাল্টা ক্ষুব্ধ হন। এই সুযোগ নেন রওশন। এক নেতা জানান, গত সাপ্তাহে বনানীর অফিসে এরশাদের সামনে বসে থাকাবস্থায় রুহুল আমিন হাওলাদারকে ফোন করেন রওশন এরশাদ। তিনি জানতে চান কেন তাকে কর্মশালা সম্পর্কে জানানো হয়নি? হাওলাদার এ নিয়ে কিছু বলতে চাইলে এরশাদই তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ওকে (রওশন) কৈফিয়ত দিতে হবে না। ওই সুত্র আরো জানায়, দলে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। মহাসচিবকে অধিকাংশ নেতাই সুবিধাবাদী সুচতুর হিসেবে অবিহিত করেন। এক নেতার ভাষায় হওলাদার কখন ম্যাডামের দিকে আর কখন স্যারের দিকে বোঝা দুস্কার।
জাপা নেতারা জানান, স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের মধ্যেই জাপায় দলীয় নমিনেশন বিক্রীর হিড়িক চলছে। রওশন এরশাদ নিজের পছন্দের ব্যাক্তিদের দিয়ে প্রার্র্থী তালিকা করছেন। অন্যদিকে এরশাদের ঘনিষ্ট কয়েকজন নেতা নমিনেশন বিক্রী করছেন চড়া দামে। এরশাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি আসনের নমিনেশন বিক্রী হয়েছে বিপুল অর্থের বিনিময়ে। নেতারা ব্রোকারের মতো বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা ধরে নিয়ে আনেন এবং তার নমিনেশন নিশ্চিত করে টাকা নেন। এদের কাউকে দলে যোগদান করা হয় আবার কাউকে দলের যোগদানের প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়। দলের অভ্যন্তরে এই তৎপরতার নাম দেয়া হয়েছে ‘মুরগি বেচাকেনা’। এটা দেখে জাপার সঙ্গে জোটভুক্ত ইসলামী দলের কিছু নেতা পৃথক ভাবে দলীয় প্রার্থীর ঘোষণা দিয়েছেন।
স্ত্রী রওশনের সঙ্গে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের বিরোধের শুরু ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে। ২০০৬ সালে রওশন হাওয়া ভবনের তারেক রহমানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনে শরীক হন এরশাদ। স্বামী-স্ত্রীর এই বিরোধে রওশন মাঠে আন্দোলনরত এইচ এম এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান পদ থেকে বহিস্কার করে নিজেই জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন এবং বর্তমানে সউদী আরবে কর্মরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহকে মহাসচিব করেন। ওয়ান ইলেভেনের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মাধ্যমে সে নির্বাচন ভন্ডুল হয়ে যায় এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিনটি আসনে ভোট করে পরাজিত হন রওশন। তাকে এরশাদের ছেড়ে দেয়া আসন রংপুর-৩ থেকে উপনির্বাচনে এমপি করে আনা হয়। এরশাদ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে রওশন ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। পরবর্তী কাহিনী সবার জানা। দীর্ঘদিন হাসপাতালে বন্দী এরশাদ গোপনে এমপি হিসেবে শপথ নেয়ার পর সংরক্ষিত মহিলা আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। তাঁরা দু’জন পৃথক পৃথক তালিকা করে সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন দেন। তবে সেখানে এরশাদ পরাজিত হন এবং রওশনের তালিকা কার্যকর হয়। কয়েক মাস পর কক্সবাজার এলাকার সংরক্ষিত আসনের জাপার মহিলা এমপি কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াস ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে দলীয় সভায় বক্তৃতায় বলেন, আড়াই কোটি টাকা দিয়ে এমপি হয়েছি; সমাবেশে লোক ভাড়া করে আনতে হবে কেন? দীর্ঘ পৌঁনে ৫ বছর কয়েকবার এরশাদ মন্ত্রিসভা থেকে দলের ৩ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগের ঘোষণা দেন। যত বার এই ঘোষণা দিয়েছেন; প্রতিবারই এ নিয়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে তার বিরোধ হয়। এমনকি এক সময় দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা উল্টো এরশাদকে প্রস্তাব দেন আপনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। জানতে চাইলে জাপার এক নেতা দুঃখ করে বলেন, প্রবাদে আছে ‘সংসার সুখের হয় নমনীর গুণে’ কিন্তু স্যারের রাজনীতি ধ্বংস হলো একই কারণে’। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।