Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাঁচ সন্তানের মা রাস্তায়

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ি গ্রামের পাঁচ সন্তানের জননী ফুজলি বেগম (৮৬)। স্বামী ছামাদ শেখ মারা গেছেন ৩০ বছর হলো। অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে তিন ছেলে আর দুই মেয়েকে বড় করেছেন ফুজলি। দিয়েছেন ছেলে-মেয়েদের বিয়ে। এখন পাঁচ ছেলে-মেয়ে নিজ নিজ সংসারে ভালোই আছে। কিন্তু তাদের কারও সংসারেই ঠাঁই হয়নি বৃদ্ধা মায়ের । মাকে খেতে-পরতে দিতে চায় না কোনো সন্তান। তাই গভীর রাতের অন্ধকারে মাকে বাড়ি থেকে ভ্যানে করে নিয়ে বাঁশঝাড়ের নিচে রাস্তায় ফেলে গেছেন ছেলেরা।
গত বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে স্থানীয়রা বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে বড় ছেলে ডাকু শেখের বাড়িতে রেখে এসেছেন। বর্তমানে ছেলের ঘরের বারান্দায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন মা।
স্থানীয়রা জানান, ৩০ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের বড় করেছেন ফুজলি বেগম। এখন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এখন তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। ছেলে-মেয়েদের কাছে বোঝা হয়ে গেছেন তিনি। তিন ছেলের আলাদা সংসার থাকলেও কোনো ছেলেই তার দায়িত্ব নিতে চান না। তাই গভীর রাতে তাকে রাস্তার পাশে ফেলে আসেন তারা। গ্রামের লোকেরা ছেলেদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেও তার দায়িত্ব নিতে নারাজ ছেলেরা।
ওই গ্রামের আলফাজ উদ্দিন বলেন, বৃদ্ধা মাকে রাস্তার পাশে একটি প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে শুইয়ে রেখে যান তার ছেলেরা। আমরা গিয়ে দেখি, তার শরীরে অনেক পোকামাকড় ভরা। এ দৃশ্য দেখে চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি।
কুচিবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য গোলাম সরোয়ার বলেন, আমরা গ্রামের লোকজন বৃদ্ধার ছেলেদের অনেক অনুরোধ করেছি। কোনো ছেলেই মায়ের দায়িত্ব নিতে চায় না। আমরা সবাই তার ছেলেদের বলেছি, আমরা সবাই মিলে বৃদ্ধার খাবার দেব, তোমরা শুধু বৃদ্ধার থাকার ব্যবস্থা করো। কিন্তু ছেলেরা কেউই মায়ের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বৃদ্ধার ছেলেরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি ওই বৃদ্ধার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী বনি আমিন বলেন, আমি বর্তমানে একটি কাজে ঢাকায় অবস্থান করছি। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে লোহাগড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে ওই বৃদ্ধার খোঁজখবর নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মা রাস্তায়

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ