Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রী দেশে এক কথা আর বিদেশে আরেক কথা বলেন -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:২২ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে এক কথা বলেন, বিদেশে বলেন অন্যকথা বলেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, নিউইয়র্কে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেছেন-সব দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। কারণ এখনও পর্যন্ত আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের সকল পদক্ষেপ একতরফা নির্বাচনেরই আলামত। কিন্তু এবার আর একতরফা নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুখে মধু ও অন্তরে বিষ নিয়েই তিনি বিদেশীদের সাথে কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলা সরকার গুম, বেআইনী হত্যা, নির্দোষ মানুষদের গ্রেফতার ও মামলা দিয়ে হয়রানীর কোন কিছুই বাদ দিচ্ছে না। এরা মানুষের মানবাধিকারকে পায়ে দলতে যে দ্বিধা করে না, তার বহু তথ্য সাবেক প্রধান বিচারপতির লেখা বই থেকে পাওয়া যাচ্ছে। সাগর-রুনী হত্যার এখনও কুল-কিনারা করতে পারেনি, অথচ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে-এস কে সিনহা একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন-সাগর-রুনী হত্যার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানেন। আসলে অনাচারের ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ খুলে যাওয়াতে সরকার এখন দিশেহারা। সরকার ক্ষমতার উন্মাদনা মধ্যে থাকতে চায়, এজন্য যখন যেটা প্রয়োজন অর্থাৎ গুম, খুন থেকে শুরু করে মিথ্যা মামলায় বিরোধী নেতাদের ফাঁসাতে দ্বিধা করছে না। কারণ রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের হাতের মুঠোয়। আর এই রাষ্ট্রযন্ত্রকে দিয়েই বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বোমা হামলার মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বিরোধী দল ও মতকে নির্মূলের চূড়ান্ত সীমায় উপনীত হয়েছে।
তিনি বলেন, শত চেষ্টা করেও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ২১ আগষ্ট বোমা হামলা মামলায় জড়াতে পারেনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী’র আন্দোলনের ফসল’রা। তাদের সময় আদালত চার্জশিট একসেপ্ট করে ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। কেউ তারেক রহমানের কথা বলেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার মনপসন্দ কাহার আকন্দ কেরামতি দেখাতে শুরু করে মামলাটি পূণ:তদন্তের নামে বিচারিক আদালত থেকে ফিরিয়ে এনে এক নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। উদ্দেশ্য একটাই তারেক রহমানকে মামলায় জড়ানো।
অত্যাচার, নিষ্ঠুর পীড়ণের মাধ্যমে একমাত্র যার জবানবন্দীর উপর ভিত্তি করে তারেক রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়, সেটি ছিল মুফতি হান্নানের। কাহার আকন্দের তদন্ত চলাকালীন ২০১১ এর ৭ এপ্রিল মুফতি হান্নানকে দিয়ে বলানো হয়, সে-ই হামলাকারীদের সাথে তারেক রহমান সাহেবের সংযোগ ঘটিয়ে দিয়েছিল ! ইত্যাদি। মূলত এর উপর ভিত্তি করেই সাাজনো চার্জশিটের কারিগর কাহার তার ‘চার্জশিট প্রহসন’ রচনা করে তা আদালতে দাখিল করে।
রিজভী বলেন, মুফতি হান্নান তার জবানবন্দিতে বলেছেন, “রাজনৈতিক নেতা এবং নিজের জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিতে তার ওপর অমানুষিক বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। উলঙ্গ করে বৈদ্যূতিক শক; নাকে, কানে, জিহবাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বৈদ্যূতিক চার্জ, বেধড়ক লাঠিপেটা ছাড়াও তার দু’হাতের ৯টি আঙ্গুলের নখ তুলে ফেলা হয়। তার আগে প্রত্যেকটি আঙ্গুলের মাথায় আলপিন ঢোকানো এবং আঙ্গুলের অগ্রভাগ গ্যাস লাইট দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। পায়ের আঙ্গুলগুলো তারা পাথর দিয়ে থেঁতলে দেয়। সম্মুখভাগে হাজার ভোল্টের বাল্ব জ্বালিয়ে রেখে মুখসহ বিভিন্ন জায়গা ঝলসে দেয়া হয়। পা ওপরের দিকে দিয়ে মাথা নিচের দিকে রেখে ঝুলিয়ে রাখা হতো জিজ্ঞাসাবাদের সময়। এছাড়া ভেজা গামছা নাকে ও মুখে রেখে মরিচ মিশ্রিত গরম ও ঠান্ডা পানি ঢালা হতো। অনেক সময় আদিম বর্বর যুগের মতো নির্যাতন করা হতো। বর্বরতার চূড়ান্ত পর্যায়ে কাটিং প্লায়ার্স দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গার চামড়াও তুলে ফেলা হতো। দাঁত টেনে তুলে ট্রে’র উপর রাখা হতো। বৈদ্যূতিক ঘুরন্ত চেয়ারে তাকে ঘোরানো হতো। তিনি আরও বলেন-আমি (হান্নান) উপরোক্ত গ্রেনেড হামলা মামলার ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানিনা। কোন প্রকারে জড়িতও নই এবং কারা এর সাথে জড়িত তাও আমি জানিনা। আমি কখনোই এই মামলার আসামি ছিলাম না এবং আমাকে উক্ত মামলার আসামী হিসাবেও গ্রেফতার করা হয় নাই।” এভাবে মুফতি হান্নানকে ভয়-ভীতি, নৃশংস শারীরিক নির্যাতন, লোভ-লালসাসহ ২০৩ দিন রিমান্ডে নিয়ে উপরোল্লিখিত নির্যাতন করা হয়।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ২১ আগষ্ট বোমা হামলায় হীন উদ্দেশ্যসাধনের জন্য প্রতিহিংসার মনোভাব নিয়েই মাঠে নেমেছে সরকার। তারেক জিয়াকে ফাঁসাতেই হবে-এই প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্যই ক্ষমতা হাতে পেয়েই বেছে আনা হয় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতা কাহার আকন্দকে, তাকে দিয়ে তারেক রহমানের নাম বোমা হামলায় জড়ানো হয়েছে। সরকারপ্রধান তার পুঞ্জিভূত ক্রুরতা, চাতুরী, কুটিলতা ও রক্তঝরানো কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি’র ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সেটির প্রথম টার্গেট করেছেন জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে। এই মামলায় তারেক রহমানের নাম জড়ানো বর্তমান সরকারপ্রধানের প্রতিহিংসা পূরণের মাস্টারপ্ল্যান।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, এড. আহমেদ আজম খান, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ