Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাইলটের দক্ষতায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা

শাহ আমানতে ইউএস বাংলার জরুরি অবতরণ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

পাইলট জাকারিয়ার দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল ইউএস বাংলার একটি বিমান। প্রাণে বেঁচে গেলেন ১৭১ জন যাত্রী ও ক্রু। গতকাল (বুধবার) ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে বিমানটির চাকায় ত্রু টি দেখা দেয়। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হন পাইলট। বিমানের সামনের চাকা (নোজ হুইল) বিকল। ফলে পেছনের চাকায় বিমানটি অবতরণ করে। অবতরণের শেষ পর্যায়ে এটি মুখ থুবড়ে পড়লেও বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি।
এরই মধ্য দিয়ে বাংলাদেশী পাইলটদের সফলতার আরো একটি যুগান্তকারী ইতিহাস রচিত হলো। ফুটে উঠলো তাদের মেধা ও যোগ্যতার অনন্য উদাহরণ। আর যেটি বার বার করে দেখিয়েছে এ দেশের পাইলটগণ। ঠান্ডা মাথা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ফ্লাইটি নিরাপদে অবতরণ করায় ক্যাপ্টেন জাকারিয়া এখন রীতিমতো মহানায়কে পরিণত হয়েছেন। সবার মুখে মুখে এ বীরের নাম।
ইউএস বাংলার ওই বিমানটি জরুরি অবতরণের ফলে বেলা ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক এ বিমানবন্দরে সব ধরনের ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকে। প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের আনন্দাশ্রু এবং কান্নায় বিমানবন্দরের টার্মিনালে অন্য রকম এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ইউএস বাংলার বিএস-১৪১ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে যান্ত্রিক ত্রু টিতে পড়ে। ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম জানান, যাত্রীদের অক্ষত অবস্থায় নামানো সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, সম্ভবত উড়োজাহাজটির সামনের অংশে কোনও একটি ত্রু টি ধরা পড়ার পড়েই তা জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত হয়।
শাহ আমানত বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন বিভাগের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারওয়ার ই জাহান জানিয়েছেন, বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা থেকে ডিএস ১৪১ ফ্লাইটটি কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়। সেটির দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার পৌঁছার কথা ছিল। তবে উড়োজাহাজের সামনের চাকা না খোলায় সেটি কিছুক্ষণ চট্টগ্রামের আকাশে চক্কর দেয়। পরে দুপুর দিয়ে ১টা ২০ মিনিটে জরুরি অবতরণ করে। ফ্লাইটটিতে মোট ১৬৪ জন যাত্রী ছিল। এদের মধ্যে ১৫৩ জন প্রাপ্তবয়স্ক, পাঁচজন ক্রু এবং চারজন শিশু।
জানা যায়, বিমানটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর বোয়িং ৭৩৭ মডেলের বিমানের চাকায় ত্রু টি দেখা দেয়। কক্সবাজার পৌঁছার পর সামনের চাকাটি খুলছিল না। এ অবস্থায় পাইলট আকাশে চক্কর দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কন্ট্রোল টাওয়ারে যোগাযোগ করে জরুরি অবতরণের কথা জানান। এর মধ্যে বিমানবন্দরে যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু হয়। ফ্লাইটটির যাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক জসীমউদ্দিন জানান, খবর পেয়ে তাদের চারটি ইউনিট সেখানে যায়। তবে বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করেছে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে কিছু যাত্রী ভয়, আতঙ্ক এবং হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে সামান্য আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিমানটি পেছনের চাকা দিয়ে অবতরণ করে। রানওয়ে হয়ে থামার মুহূর্তে সামনের অংশ রানওয়েতে ধাক্কা খায়। আর তখন সেখানে আগুন দেখা যায়। তবে মুহূর্তে সে আগুন নিভিয়ে ফেলে সেখানে অপেক্ষমান দমকল কর্মীরা। এরপর নিরাপদে যাত্রীদের বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয়। এ সময় যাত্রীরা চিৎকার করে কান্নাকাটি করছিলেন। দ্রুত তাদের টার্মিনালে নিয়ে যাওয়া হয়।
জরুরি অবতরণের পর রানওয়ে থেকে বিমানটি সরিয়ে নিতে ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা চট্টগ্রাম আসেন। বিকেল নাগাদ বিমানটিকে রানওয়ে থেকে সরিয়ে নেয়ার পর ৫টা থেকে বিমান ওঠা-নামা স্বাভাবিক হয়।
বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাত্রীদের মধ্যে অন্তত ১১০ জন সাইকোলজিক্যাল ট্রমায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। উড়োজাহাজের যাত্রীদের মধ্যে কমবেশি আহত হয়েছেন ৪০ জন। যার মধ্যে ১৩ জনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত বা কেটে যাওয়ার চিহ্ন রয়েছে। তবে তাদের সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পর একটি পাঁচ সদস্যের চিকিৎসা টিম নিয়ে বিমানবন্দরে ছুটে যান সিভিল সার্জন। সন্ধ্যায় সেখান থেকে বের হয়ে তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, যাত্রীদের মধ্যে মারাত্মক আহত কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে কমপক্ষে ১১০ জনকে পাওয়া গেছে যারা মারাত্মক সাইকোলজিক্যাল ট্রমায় আক্রান্ত। তাদের অনেককে বিমর্ষ দেখা গেছে। তারা মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। এ আতঙ্ক দূর না হলে মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। এদের সবার প্রেসার চেক করা হয়েছে। কয়েকজনকে ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন আরও জানান, উড়োজাহাজ অবতরণের পর হুড়োহুড়ি করে নামার সময় পড়ে গিয়ে এবং পাখার আঘাতে যাত্রীর কেউ হাতে, কেউ পায়ে আঘাত পেয়েছেন। কারও মাথা কিংবা শরীরের বিভিন্ন অংশে কেটে গেছে। এদের মধ্যে ২৭ জনকে সামান্য ড্রেসিং করে দিতে হয়েছে, ১২ জনকে ব্যান্ডেজ দিতে হয়েছে। যাত্রীদের অনেকে ইতোমধ্যে তাদের বাড়িঘরে ফিরে গেছেন। বাকিদেরও বাড়ি পৌঁছিয়ে দেয়া হবে।



 

Show all comments
  • Anwar Hossain ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১০:৫৮ এএম says : 1
    AL HAMDU LILLAH >>>>>>>>>>>>>> AL HAMDU LILLAH >>>>>>>>>>>>>>>>> AL HAMDU LILLAH
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আলমগীর হোসেন ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১০:৫৮ এএম says : 1
    আল্লাহ সবাইকে বাচিয়ে রেখিছেন, এ জন্য মহান সৃস্টিকর্তার কাছে র্কতজ্ঞ, পাইলটকেও ধন্যবাদ তিনি যে মাথা ঠান্ডা রেখে নিরাপদে সবাইকে নিয়ে অবতরন করতে পেরেছেন। তবে এ জন্য কারো দায়িত্ব অবহেলা থাকলে তাকে চিহ্নিত করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:৫৬ পিএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ.বিপদে বিগ্রে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় কাজ করে জাকারিয়া সাহেব কঠিন কাজটাকে সফল করলেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমান

১৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ