Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অগ্নিপূজক ‘হাওজানের পরামর্শে’ নমরূদ অগ্নিকুন্ড নির্মাণ করে

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

“ওরা বলল; ওর জন্য এক ইমারত নির্মাণ করো, অতঃপর ওকে জ¦লন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করো। ওরা তার বিরুদ্ধে চক্রান্তের সংকল্প করেছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে অতিশয় হেয় করেছিলাম।” (সূরা : ৩৭ সাফ্ফাত, আয়াত : ৯৭-৯৮)
হজরত ইবরাহীম (আ:) কে আগুনে নিক্ষেপ করার জন্য একটি ইমারত (অগ্নিকুন্ড) নির্মাণ করেছিল নমরূদ। আয়াতে নমরূদের নাম উল্লেখ করা হয়নি, বলা হয়েছে ‘কালু’- ওরা বলল- আয়াতে বহুবচনের ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হয়েছে। নমরূদ চক্রান্তকারী দলের কুপরামর্শে একটি ইমারত নির্মাণ করে। চক্রান্তকারীদের মধ্যে কার প্রস্তাব নমরূদ গ্রহণ করে, তা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। এ আগুনে পুড়ানোর প্রস্তাব পেশ করেছিল এক মজুসি (অগ্নি উপাসক) যার নাম ছিল ‘হাওজান’। সে ছিল পরস্যের (ইরান) এক গ্রাম্য ব্যক্তি। তার পরামর্শ সবার নিকট গ্রহণযোগ্য মনে হওয়ায় আয়াতে বহুবচনের ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
অগ্নিকুন্ডের জন্য যে ইমারত নির্মাণ করা হয়, তার বিবরণ বিভিন্ন তাফসিরে বর্ণিত হয়েছে। কেনো কোনো ভাষ্যকারের বর্ণনা অনুযায়ী, ‘ওরা একটি লৌহ প্রাচীর নির্মাণ করে, যার দৈর্ঘ্য ঊর্র্ধ্বে তিরিশ গজ ও প্রস্থে কুড়ি গজ এবং তা জ্বালানি কাঠ দ্বারা পরিপূর্ণ করা হয়। তথায় অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করা হয় এবং হজরত ইবরাহিম (আ:) কে তাতে নিক্ষেপ করা হয়।
নমরূদের এ অগ্নিকুন্ড কিভাবে গুলজারে ইবরাহীমে পরিণত হয়েছিল, কোরআনে সে বর্ণনাও রয়েছে। তবে এখানে আমাদের আলোচনা সেই পারসিক ‘হাওজান’ কে নিয়ে যার প্রস্তাব অনুযায়ী নমরূদ অগ্নিকুন্ডের জন্য ইমারত স্থাপন করেছিল। মূর্তিপূজক নমরূদের করুণ পরিণতির ঘটনা বিখ্যাত, তবে হাদিসে হাওজানেরও করুণ পরিণতি হয়েছিল বলে উল্লেখ আছে। তারই সম্পর্কে মুসলিম শরিফের বরাতে হজরত আবু হোরায়রা (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন; ‘এক ব্যক্তি মূল্যবান পোশাক পরে অত্যন্ত আত্ম অহমিকা ও অহঙ্কারে মাতোয়ারা ছিল। আল্লাহ তাকে জমিনে ধসে দিয়েছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত সে ধসতে থাকবে।’
হজরত ইবরাহীম (আ:) এর সাথে খোদাদ্রোহী নমরূদের নানা বিষয়ে বাহাস-বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়, যার বর্ণনা কোরআনে রয়েছে। যুক্তি-তর্কে নমরূদ ইবরাহীম (আ:) এর নিকট সর্বদা লাজওয়াব হয়েছে। কিন্তু সে হঠকরিতা হতে কখনো বিরত হয়নি। অবশেষে আল্লাহর শাস্তি তার জন্য অবধারিত হয়ে পড়ে। এ সম্পর্কে ওহাব ইবনে মোনাব্বাহ বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা নমরূদের উদ্দেশ্যে একটি মশক বাহিনী প্রেরণ করেন, নমরূদ তখন এক বিশাল বাহিনীর মধ্যে অবস্থান করছিল। নমরূদ যখন মশক বাহিনীকে দেখল, তখন ভয়াতঙ্কে তার বিশাল সৈন্যবাহিনী বেষ্টিত অনুষ্ঠান হতে আলাদা হয়ে যায় ও প্রাসাদে ঢুকে পড়ে এবং সকল দরজা-জানালা বন্ধ করে দেয় এবং পর্দা ঝুলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর সে গদিতে ঠেস (হেলান) দিয়ে চিন্তাভাবনা করতে থাকে। ইতোমধ্যে একটি মশা প্রাসাদে ঢুকে পড়ে এবং তার নাকে প্রবেশ করে এবং তার মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে যায়। মশাটি ৪০ দিন পর্যন্ত নমরূদকে অস্থির ও জ্বালাতন করতে থাকে কিন্তু বের হয় না। এমনকি নমরূদ মাটিতে মাথা ঠুকতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তার অবস্থা এমন রূপ ধারণ করে যে, তার কাছে সবচেয়ে প্রিয় সে ব্যক্তি, যে তার মাথায় আঘাত করত। অবশেষে মশাটি ছানার ন্যায় জমিনে পতিত হয়। বলা হয় এটি ছিল একটি ল্যাংড়া মশা যা নমরূদকে ৪০ দিন পর্যন্ত মাথায় ছোবল মারতে থাকে এবং নিকৃষ্টভাবে ধ্বংস হয় মহা প্রতাপশালী, খোদাদ্রোহী নমরূদ। এঘটনাটির দিকে ইঙ্গিত করে জনৈক আরব কবি বলেছেন;
‘কাদ গারাকাত আমলাকা হিমিয়ারা ফারাতুন,
ওয়া বাউযাতুন কাতালাত আলে কেন আনা।’
অর্থাৎ- হিমিয়ারদের সকল অর্থ-সম্পদ ইঁদুরে ডুবিয়ে দিয়েছে
এবং একটি মশা বনি কেন আন (নমরূদ) কে হত্যা করেছে।
আল্লাহ তায়ালার বর্ণিত ৯৮ আয়াতের এই উক্তি; ‘আমি তাদেরকে অতিশয় হেয় করেছিলাম।’ অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। নমরূদকে প্ররোচণাকারী পারসিক অগ্নিপূজারি হাওজানকে আল্লাহ জমিনে ধসিয়ে দেন এবং নমরূদ ও তার বাহিনীকে ধ্বংস করে মশককূল।



 

Show all comments
  • হাবিব ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:০৪ এএম says : 0
    এই ধরনের লেখা থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি।
    Total Reply(0) Reply
  • গোলাম মোস্তাফা ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:০৫ এএম says : 0
    লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Nisita ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৮:৪৫ এএম says : 0
    Etihas tule dore akon ar lav nai karon ar teke keu sikka niteae na.
    Total Reply(1) Reply
    • ahmed misbaha ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৬:২৯ এএম says : 4
      may Allaha give you hedaya
  • MD. Monir Hossain ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৮:৪৫ এএম says : 0
    যুগে যুগে নমরুদ রুপীি অত্যাচারীর আগমন ঘটে এবং ঘটতে থাকবে। একসময় পাপের কলস্ পূর্ন হয়ে গেলে নেমে আসে /আসতে থাকবে মহান আল্লাহর ভয়ানক শাস্তি। মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। আমীন।।
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল্লাহ্ বািন আজাদ ১ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৫১ পিএম says : 0
    অনেক ভালো লেখককে আল্লাহ উত্তম জাযা দান করুন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন